মহাকাশে যাচ্ছে স্পেসএক্সের স্টারশিপ

অবশেষে উৎক্ষেপিত হতে যাচ্ছে স্টারশিপ—স্পেসএক্সের ফ্ল্যাগশিপ নভোযান। আগামী ১৭ মার্চ, সোমবার নভোযানটি উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে। এ নভোযান নিয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন অনেক মহাকাশপ্রেমী। এই নভোযানটিই মানুষকে নিয়ে যাবে মঙ্গলে বা আরও গহীন মহাকাশে—এমনটাই দাবী ইলন মাস্কের এ প্রতিষ্ঠানটির।

পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো এ যাত্রায় পৃথিবীর কক্ষপথ ঘুরে আসবে নভোযানটি। গত এক সপ্তাহ ধরে এ নিয়ে কাজ করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।

এর আগে, মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে (FAA) থেকে লাইসেন্স না পাওয়ায় উৎক্ষেপণের তারিখ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। দীর্ঘ প্রায় ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলে। অবশেষে ৫ এপ্রিল, শুক্রবার এফএএ স্পেসএক্সকে লাইসেন্স প্রদানের ঘোষণা দেয়। এর কয়েক মিনিট পরেই স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে এক টুইটবার্তায় স্টারশিপ উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত স্টারবেস থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ নভোযান স্টারশিপ ও এর সুপার হেভি রকেটের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হবে ১৭ এপ্রিল, সোমবার।’

সব ঠিক থাকলে সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে উৎক্ষেপণটি সরাসরি সম্প্রচার করবে স্পেসএক্স।

স্টারশিপ মহাকাশযানটির প্রধান অংশ দুটি। নিচের দিকে ফার্স্ট স্টেজ বা প্রথম ধাপে রয়েছে বিশাল আকৃতির বুস্টার। এ অংশটির নাম সুপার হেভি। এটি স্টারশিপ উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হবে। নভোযানটি পৃথিবীর আকর্ষণ ছাড়িয়ে মহাকাশে পৌঁছে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এ অংশটি, ফিরে আসবে পৃথিবীতে।

৫০ মিটার লম্বা ওপরের অংশটি হলো মূল স্টারশিপ নভোযান। এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। পৃথিবীর সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর গন্তব্যে ছুটতে পারবে নিজেই, বাড়তি কোনো বুস্টার বা আলাদা সেকেন্ড স্টেজ রকেটের প্রয়োজন পড়বে না।

নভোযানটির দুটি অংশই পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। আর এতে শক্তি যোগাতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্পেসএক্সের পরবর্তী প্রজন্মের ‘র‍্যাপ্টর ইঞ্জিন’। সুপার হেভির জন্য ৩৩টি আর স্টারশিপের মূল নভোযানে ৬টি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ টেক্সাসে অবস্থিত স্পেসএক্সের স্টারবেস ফ্যাসিলিটি থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে নভোযানটি। এতে থাকবে সুপার হেভি অংশের একটি প্রোটোটাপ—‘বুস্টার ৭’। আর ওপরের অংশের আরেকটি প্রোটোটাইপ সংস্করণ—শিপ ২৪।

সবকিছু ঠিক থাকলে নভোযানটি উৎক্ষেপণের ৮ মিনিট পর ‘বুস্টার ৭’ অংশটি মেক্সিকান উপসাগরে এসে পড়বে। টেক্সাস উপকূল থেকে এ জায়গার দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার। অন্যদিকে ‘শিপ ২৪’ উঠতেই থাকবে, ছুটবে পৃথিবীর কক্ষপথ লক্ষ্য করে। কক্ষপথে পৌঁছানোর পর আবার ফিরবে পৃথিবীতে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই-এর কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরে নামবে নভোযানটি।

উৎক্ষেপণ সফল হলে ‘বুস্টার ৭’ এবং ‘শিপ ২৪’ হবে এখন পর্যন্ত পৃথিবী থেকে ওড়া সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। নভোযানটি ওড়ার সময় প্রায় ৭৫ লাখ কেজি থ্রাস্ট (পশ্চাৎমুখী ধাক্কা) তৈরি করবে। কয়েকদিন আগে নাসার আর্টেমিস মিশনে যে মেগা রকেটটি ব্যবহৃত হয়েছিল (এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট), তার তুলনায় এ ধাক্কার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ।

স্টারশিপ নিয়ে স্পেসএক্স-এর সূদরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। আগে যেমন বলেছি, প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, দানবীয় এ মহাকাশযানের মাধ্যমে চাঁদে কিংবা মঙ্গলে বসতি স্থাপন করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকগুণ। এটি হবে বেশ অর্থনীতিবান্ধব ও বাস্তব।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: স্পেস ডট কম, স্পেসএক্স