নতুন ৪৪টি নক্ষত্র আবিষ্কার করে রোমাঞ্চিত বিজ্ঞানীরা

আবেল ৩৭০ গ্যালাক্সি ক্লাস্টারছবি: নাসা

সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নতুন ৪৪টি নক্ষত্র খুঁজে পেয়েছেন। ৬ জানুয়ারি, সোমবার নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন আবিষ্কৃত নক্ষত্রগুলো পৃথিবী থেকে ৬৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এর আগে এত দূরে একসঙ্গে এতগুলো নক্ষত্র আর পাওয়া যায়নি। নক্ষত্রগুলো খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের নেতৃত্ব দেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ডেভিড লাগাতুতা ও ম্যাথিল্ড জাউজাক। 

নক্ষত্রগুলো রয়েছে ড্রাগন আর্ক গ্যালাক্সিতে। এতদিন এসব নক্ষত্র দেখা যায়নি, কারণ ওগুলো ড্রাগন আর্ক অ্যাবেল ৩৭০ নামে একটি গ্যালাক্সির পেছনে লুকিয়ে ছিল। ‘মহাকর্ষীয় লেন্সিং’ নামে পরিচিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে এগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে একই পদ্ধতি ব্যবহার করে ড্রাগন আর্ক গ্যালাক্সির খোঁজ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

মহাকর্ষীয় লেন্সিং কী

আলো সাধারণত সরল পথে চলে। অন্তত আলোকে আমরা সেভাবেই দেখে অভ্যস্ত। আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে, ভারী বস্তু স্থান-কাল বাঁকিয়ে দেয়। এই বিষয়টাকে অতিসরলীকরণ করে বোঝার জন্য একটা উদাহরণ বেশ প্রচলিত। ধরুন, একটা বড় চাদরের চারকোণা চারজন ধরে আছেন। এ অবস্থায় চাদরটি টান টান থাকবে। এখন কেউ যদি চাদরের মাঝখানে একটি ১০ কেজি ওজনের পাথর রাখে, তাহলে চাদরটি নিচের দিকে বেঁকে যাবে। তেমনি মহাকাশে কোনো ভারী বস্তুর প্রভাবে স্থান-কাল বেঁকে যায়। এ অবস্থায় আলো সরল পথে চলতে পারে না, কারণ পথটিই সরল নয়, বক্র। আলোকে তখন এই বাঁকা পথে যেতে হয়। তবে এ পথটি বাঁকা হলেও এটিই সর্বনিম্ন দূরত্ব এ ক্ষেত্রে।

মহাকর্ষীয় লেন্সিং ডায়াগ্রাম
ছবি: নাসা

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভারী বস্তুর কারণে স্থানকালে সৃষ্ট বক্রতার কারণে মহাকাশে চোখ রেখে জ্যোতির্বিদেরা মাঝেমধ্যে অদ্ভুত কিছু বিষয় দেখতে পান। একবার দেখা গেল, মহাকাশের এক প্রান্তে একটা গ্যালাক্সি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটার সৌন্দর্য উপলব্ধি করার আগেই আরেকটা ধাঁধা জট পাকিয়ে উঠল। কারণ, টেলিস্কোপটা সামান্য একটু সরাতেই দেখা গেল, আগের গ্যালাক্সিটাই হুবহু আরেক প্রান্তেও দেখা যাচ্ছে। একই আকৃতি, একই রঙের। দুটো গ্যালাক্সির আলোয় এত মিল যে জ্যোতির্বিদেরা নিশ্চিত বুঝতে পারলেন, ও দুটি আসলে একই গ্যালাক্সি। একই গ্যালাক্সিকে দুই জায়গায় দেখে একটা বিষয় নিশ্চিত বোঝা যায়, আমাদের আর ওই গ্যালাক্সির মাঝখানে যদি ভারী ও অদৃশ্য বস্তু থাকে, তাহলেই কেবল এমনটা হওয়া সম্ভব। কারণ, এই অদৃশ্য ভারী বস্তু তখন একটা বিশালাকৃতির লেন্সের মতো কাজ করবে। তাই তার প্রভাবে গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আসা আলো বেঁকে যাবে। তখন একই গ্যালাক্সিকে মহাকাশের দুই জায়গায় দেখা যাবে। তবে বড় কথা, এই প্রাকৃতিক লেন্স বা দুরবিন ব্যবহার করে বহু দূরের বস্তু দেখা যায়, যা স্বাভাবিকভাবে হয়তো দেখাই যেত না।

এ গবেষণা যে কাজে লাগবে

বিজ্ঞানী ম্যাথিল্ড জাউজাক জানিয়েছেন, ‘ড্রাগন আর্কে আমরা যে বিশেষ ধরনের নক্ষত্র শনাক্ত করেছি, সেগুলোকে লাল অতিদানব তারা বলা হয়। এগুলো পর্যবেক্ষণ করা খুব কঠিন, কারণ এ ধরনের নক্ষত্রের চারপাশে প্রচুর ধূলিকণা থাকে, আড়াল করে রাখে এসব নক্ষত্রকে। মহাবিশ্বকে আরও ভালোভাবে জানতে এই নক্ষত্রগুলো আমাদের সহায়তা করবে।’

সূত্র: বিবিসি, লাইভ সায়েন্স ও ফোর্বস