প্রথমবার গ্রহের রিং তৈরি হতে দেখলেন বিজ্ঞানীরা

২০৬০ কাইরনছবি: স্পেস ইঞ্জিন

শনি গ্রহের সুন্দর রিং বা বলয়ের কথা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু যদি ভাবেন, মহাবিশ্বে শুধু শনি গ্রহেরই রিং আছে, তাহলে মস্ত বড় ভুল করবেন! আমাদের সৌরজগতের চারটি গ্রহের রিং বা বলয় আছে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস এবং নেপচুনেরও নিজস্ব বলয় ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেগুলো অনেক পাতলা বলে ছবিতে সেভাবে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা এর আগে বামন গ্রহ হাউমেয়া এবং কোয়াওরের মতো ছোট গ্রহের চারপাশেও বলয়ের সন্ধান পেয়েছেন। এবার এই দলে যোগ দিল আরও এক নতুন অতিথি! নাম ২০৬০ কাইরন।

ব্রাজিলের পিকো ডস ডায়াস অবজারভেটরির বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করে চলতি বছর অক্টোবর মাসে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা নিশ্চিত করেছেন, এই বরফ-শীতল বস্তুটির চারপাশে একটি নয়, বরং চারটি বলয় তৈরি হচ্ছে!

২০৬০ কাইরন আসলে কী

কাইরনকে ঠিক গ্রহ বা উপগ্রহ বলা চলে না। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন সেন্টর (Centaur)। এটি এক অদ্ভুত মহাকাশীয় বস্তু, যার মধ্যে ধূমকেতু এবং গ্রহাণুর মিশ্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি আমাদের সৌরজগতে শনি এবং ইউরেনাস গ্রহের মাঝখানের কক্ষপথে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। আকৃতিতেও বেশ ছোট, ব্যাস মাত্র ২০০ কিলোমিটার।

বিজ্ঞানীদের জন্য এই আবিষ্কারটি অন্য সব আবিষ্কারের চেয়ে আলাদা। এর আসল কারণ হলো, এই বলয়গুলো এখনো তৈরি হচ্ছে! মানব ইতিহাসে এই প্রথমবার বিজ্ঞানীরা কোনো বলয় ব্যবস্থাকে নিজেদের চোখের সামনে গঠিত হতে দেখছেন। এটা মহাকাশে ঘটা একটা লাইভ ঘটনা দেখার মতো!

আরও পড়ুন
কাইরন সৌরজগতে শনি এবং ইউরেনাস গ্রহের মাঝখানের কক্ষপথে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। আকৃতিতেও বেশ ছোট, ব্যাস মাত্র ২০০ কিলোমিটার।
কাইরনকে ঠিক গ্রহ বা উপগ্রহ বলা চলে না। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন সেন্টর।
ছবি: উইকিপিডিয়া

বিজ্ঞানীরা কীভাবে বুঝলেন, এটি তৈরি হচ্ছে

২০২৩ সালের নতুন ডেটাকে আগের ডেটার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আর তুলনা করে অবাক হয়ে দেখেছেন, এই রিং সিস্টেমটি অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। গবেষকদের ধারণা, এই রিংগুলো পানি, বরফ এবং পাথুরে উপাদান দিয়ে তৈরি। হতে পারে, অতীতে কাইরনের সঙ্গে অন্য কোনো বস্তুর সংঘর্ষের ফলেই এই রিং তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ব্রাগা রিবাস বলেছেন, ‘এটি একটি পরিবর্তনশীল সিস্টেম। এই আবিষ্কার আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে, ছোট ছোট বস্তুর চারপাশে কীভাবে রিং বা উপগ্রহ তৈরি হয়।’

এই যুগান্তকারী গবেষণাটি ১৪ অক্টোবর দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস-এ প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, গণিত বিভাগ, পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শরীয়তপুর

সূত্র: স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন