নবম গ্রহের সন্ধানে

শিল্পীর কল্পনায় সৌরজগতের নবম গ্রহছবি: নাসা

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ছোট্ট একটি অংশ জুড়ে আছে আমাদের সৌরজগৎ। সৌরজগতের একমাত্র নক্ষত্র সূর্য। পাশাপাশি আরও আছে অনেক গ্রহ, উপগ্রহ, বামনগ্রহ, গ্রহাণুসহ অনেক বস্তু।

এ সৌরপরিবারে আছে মোট ৮টি গ্রহ। সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকা এ গ্রহগুলো হচ্ছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। মোটামুটি ১৮৪৬ সালের মধ্যে এ গ্রহগুলো আবিষ্কৃত হয়। একসময় এ তালিকায় ছিল প্লুটোও। ১৯৩০ সালের দিকে প্লুটোকে নবম গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৬ সালে আন্তজার্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা কেড়ে নেয়। বামন গ্রহ হিসেবে নতুনভাবে স্বীকৃতি পায় প্লুটো। এরপর থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, সৌরজগতে আরও একটি গ্রহ লুকিয়ে আছে। তবে অনেক জল্পনা-কল্পনা হলেও এখনো গ্রহটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞানীরা নতুনভাবে আবার আশার বাণী শুনাচ্ছেন আমাদের। জাপানের কিন্দাই (জিন্দাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্যাট্রিক সোফিয়া এবং জাপানের ন্যাশনাল আস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির জ্যোতির্বিজ্ঞানী তাকাশি ইতো। এই দুই বিজ্ঞানী সম্প্রতি তাঁদের নবম গ্রহবিষয়ক গবেষণা প্রকাশ করেছে দ্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে। তাঁদের মতে, পৃথিবীর মতো একটি নতুন গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে সৌরজগতে। আর এ গ্রহের সম্ভাব্য অবস্থান কুইপার বেল্টে। নেপচুনের কক্ষপথের বাইরের বিস্তৃত অঞ্চলই কুইপার বেল্ট নামে পরিচিত। ডাচ্-আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কুইপারের সম্মানে এ অঞ্চলের নামকরণ। ১৯৫১ সালে তিনিই এই বেল্টের অস্তিত্বের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন।

শিল্পীর কল্পনায় কুইপার বেল্ট
ছবি: নাসা

কুইপার বেল্টে আছে বরফে পরিপূর্ণ লাখ লাখ বস্তু। এগুলোকে সম্মিলিতভাবে কুইপার বেল্ট অবজেক্ট (KBOs) বা ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট (TNOs) বলে। কুইপার বেল্ট বেশ সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল। এখন পর্যন্ত অনেক বামন গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ও শিলাখণ্ড এ অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত তিনটি বামনগ্রহ প্লুটো, হাউমেয়া ও মাকেমাকে এ অঞ্চলে অবস্থিত। কুইপার বেল্টে আবিষ্কৃত প্রথম বস্তু ছিল প্লুটো। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, নেপচুনের টাইটন ও শনির উপগ্রহ ফোবের উৎপত্তি এ অঞ্চলেই অবস্থিত। এ জন্য এই অঞ্চলে নতুন গ্রহের হদিশ মেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।

সে সব সিমুলেশন থেকে একটি ব্যাখ্যায় পৌঁছানো যায়। কুইপার বেল্টে আছে একটি গ্রহ! তা না হলে কক্ষপথের এমন আচরণ করা উচিত নয়।

ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কুইপার বেল্টের কিছু কক্ষপথ অদ্ভুত আচরণ করে। এরকম অদ্ভুত আচরণের কারণ কী? হয়ত সাধারণ কোনো ট্রান্স-নেপচুনিয়ান অবজেক্ট থেকে বড় কোনো বস্তুর মহাকর্ষীয় বল দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে ওই কক্ষপথগুলো। গবেষকেরা তাঁদের পর্যবেক্ষল করা কক্ষপথের আচরণ ব্যাখ্যা করতে বেশ কয়েকবার কম্পিউটার সিমুলেশন করেছেন।

সে সব সিমুলেশন থেকে একটি ব্যাখ্যায় পৌঁছানো যায়। কুইপার বেল্টে আছে একটি গ্রহ! তা না হলে কক্ষপথের এমন আচরণ করা উচিত নয়। আর সত্যিই যদি সেখানে একটি গ্রহ থাকে, তাহলে তার ভর পৃথিবীর ভরের ১ দশমিক ৫ থেকে ৩ গুণ বেশি। তবে তাপমাত্রা প্রচণ্ড ঠান্ডা হওয়ায় সেখানে প্রাণ থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবে এখন পর্যন্ত নবম গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। কাগজে কলমে গ্রহটির অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে এখনো এর কোনো ভিত্তি নেই। তাই আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা পেয়ে যাবো সৌরজগতের নবম গ্রহ।

লেখক: শিক্ষার্থী,গবর্নমেন্ট সাইন্স হাই স্কুল

সূত্র: আর্থ ডট কম, উইকিপিডিয়া, নাসা