পৃথিবীর ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ হলে কী হতো?

এই তো কিছুদিন আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ছোট্ট এই গ্রহটার জন্য সংখ্যাটা খুব বেশি নয় এমনিতে। তবে মানুষের খামখেয়ালিপনা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, যুদ্ধ, বন উজাড় ইত্যাদি নানা কারণে পৃথিবী বেশ বিপর্যস্ত এই সময়ে।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়াতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের বাস। মানুষের সংখ্যা বাড়ায় এ অঞ্চলে ভয়াবহ হারে কমেছে আবাদি জমির পরিমাণ। বাসস্থানের জন্য প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে উঁচু থেকে উঁচু ভবন।

পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৬ হাজার ৩৭৮ কিলোমিটার। এই ব্যাসার্ধ যদি দ্বিগুণ বা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার হতো, তাহলে পৃথিবীর আয়তন বেড়ে যেত ৪ গুণ। অর্থাৎ জায়গা জমির পরিমাণ থাকত এখনকার চেয়ে ৪ গুণ বেশি! শুনে দারুণ লাগছে না? ভালো লাগারই কথা। কিন্তু পৃথিবীর ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ হলে আরও কিছু ঘটনা ঘটত এর সঙ্গে।

প্রথমত, গঠন উপাদান ঠিক থাকলে, আয়তন চারগুণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রহের ভর বেড়ে যেত ৮গুণ। মহাকর্ষ বলের মান এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হতো পৃথিবী পৃষ্ঠে। ফলে সবরকম প্রাণী ও উদ্ভিদে আসত পরিবর্তন। আজকে আমরা যে প্রাণের আকার ও গঠন দেখি পৃথিবীতে, তেমন হতো না দ্বিগুণ ব্যাসার্ধের পৃথিবীতে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

মহাকর্ষের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে উদ্ভিদগুলোর বেশিরভাগই হতো শক্ত ও ঘন কাঠের কাণ্ডওয়ালা। লতানো উদ্ভিদও হয়ত থাকত। তবে সেসবের আঁশ হতো প্রচণ্ড শক্তিশালী। গঠন উপাদানেও আসত ভিন্নতা। এর প্রভাব পড়ত ফল-শস্যে।

মহাকর্ষ বাড়লে বাড়ে বস্তুর ওজন। প্রাণিদেহেরও তাই ওজন বাড়ত। বাড়তি এই ওজন ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন হতো শক্তিশালী পা ও মেরুদণ্ড। মানুষের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু তাতে করে আমাদের কতটুকু ক্ষতি হতো? যুক্তরাষ্ট্রের মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নীল কমিনস এর মতে, ‘আমাদের পরিবর্তন কেমন হতো, তা নির্ভর করে আমাদের পূর্ব পুরুষদের জীবন-যাপন পদ্ধতির ওপর। খাদ্য সংগ্রহে যদি খুব বেশি পরিমাণ দৌড়ঝাঁপ করতেন তাঁরা, তাহলে বুদ্ধিমত্তা কমে যেত মানুষের। হতো খর্বাকায়। দৌড়ঝাঁপ কম করলে মানুষ আরও লম্বা ও বুদ্ধিমান হতো।’

বুঝতেই পারছেন, ৮গুণ ভরের, ৪ গুণ বড় পৃথিবী আমাদের জন্য অভিশাপ হতো কি আশির্বাদ, সে কথা চট করে বলার সুযোগ নেই। সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অসুবিধা মেনে নিতেই হতো। সেটাই তো আমরা এখনও করছি!

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স