ইউএফও এবং পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম

ইউএফও, উড়ন্ত চাকি, উড়ন্ত সসার—যে নামেই ডাকা হোক—কল্পিত ভিনগ্রহী প্রাণীদের আকাশযান হিসেবেই পরিচিতি জিনিসটা। প্রায়ই নাকি দেখা যায় বিশ্বজুেড়। তা নিয়ে কত হই চই, কত-শত গুজব! এসব গুজবের পালে হাওয়া দেন একদল কন্সপিরেসি থিওরিস্ট, যাঁরা আবার নিজেদের বিজ্ঞানী বলে দাবি করতে ভালোবাসেন। আর যাঁরা এগুলো দেখেছেন বলে দাবি করেন, তারা রাতারাতি সেলিব্রেটিতে পরিণত হন। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলে? আসলেই কি এই মুহূর্তে পৃথিবীতে ভিনগ্রহের কোনো উন্নত সুপারক্রাফট আসা সম্ভব? যদি সম্ভবই হয়, তাহলে পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের নজর এড়িয়ে শুধু গুজব সৃষ্টিকারীদের চোখেই কেন বার বার ধরা দেয়? আসুন ইউএফওর বৈজ্ঞানিক ব্যবচ্ছেদ করা যাক।

আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট বা ইউএফও সম্পর্কে প্রচারণা শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যের মরুভূমিতে রসওয়েল (Roswell) নামের জায়গায় কিছু ধাতব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। সেখান থেকেই শুরু। প্রচার করা হতে থাকে যে মহাকাশের অজানা কোনো গ্রহ থেকে আগন্তুকেরা আমাদের পৃথিবীতে এসেছে এ ধরনের উড়ন্ত যানবাহন নিয়ে, সেগুলোরই কোনোটা এখানে বিধ্বস্ত হয়েছে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় অতি–উৎসাহী অনেক মানুষ প্রচার করতে থাকে যে বিশাল চাকতির মতো বস্তু তারা আকাশে উড়তে দেখেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই চাকতিগুলো হঠাৎ দেখা দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেছে। ওগুলোর নাম হয়ে যায় উড়ন্ত চাকতি বা ‘ফ্লাইং সসার’। অনেকে এগুলোর ছবিও তুলেছেন, রাডারেও ধরা পড়েছে কয়েকটি চাকতিসদৃশ বস্তু। বিজ্ঞানীরা এসব পরীক্ষা করে দেখেছেন। সব ক্ষেত্রেই প্রমাণিত হয়েছে, এগুলো হয় উড়ন্ত বেলুন কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক ঘটনার ফলে সৃষ্ট আকাশচিত্র, যা দূর থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো মনে হয়। কিন্তু অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাসী বৈজ্ঞানিক যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের মনগড়া খবর তৈরি করতে থাকেন। কেউ কেউ ভুয়া ছবি ও ভিডিও প্রচার করতে থাকেন, যা অনেকেই বিশ্বাস করেন। ৭০ বছর ধরে ইউএফও নিয়ে চর্চা করছে কিছু মানুষ। তাদের বিশ্বাস, ইউএফও হলো মহাকাশের অন্য কোনো গ্রহ-নক্ষত্র থেকে আসা নভোযান, যেগুলো অতিদ্রুত যেমন আসতে পারে, তেমনি অতিদ্রুত চলেও যেতে পারে।

ইউএফওর ইতিহাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির পক্ষে-বিপক্ষে অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। ২০২১ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে, যেখানে এ ধরনের অজানা উড়ন্ত বস্তুর ধারণা থেকে উদ্ভূত বিপদের আশঙ্কা যাচাই ও প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা চালু রাখার কথা বলা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থার অংশ। কারণ, ইউএফওর ছদ্মবেশে আকাশপথে আক্রমণ যেন না ঘটতে পারে, তার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি এ রকম ব্যবস্থা অন্যান্য দেশও নিতে পারে; কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইউএফওর অস্তিত্ব মেনে নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রবন্ধে আমরা ইউএফওর রাজনীতি বা অন্যান্য দিক নিয়ে আলোচনা করব না। আমরা শুধু দেখব, আমাদের গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠিত পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে মহাকাশের অন্য কোনো গ্রহ-নক্ষত্র থেকে এসব মহাকাশযানের পৃথিবীতে আসা সম্ভব কি না।

যারা ইউএফওর পক্ষে প্রচারণা চালায়, তারা দাবি করে যে মহাকাশের অন্য গ্রহ থেকে আসা এসব নভোযানের ব্যাস ১৫ মিটার থেকে শুরু করে ১০০ মিটার বা তার চেয়ে বেশি। সেখানে অন্য গ্রহের মানুষও থাকে, যারা আমাদের গ্রহের মানুষের চেয়ে উন্নত। এসব ধারণা যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে, এসব নভোযান পৃথিবীর পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই এখানে আসে।

মহাবিশ্বের সবকিছুই মহাকর্ষ বলের দ্বারা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট। গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি—সবকিছুরই নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ বল আছে, তাকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। নিউটনের মহাকর্ষ বলের সূত্র সব জায়গাতেই খাটে। পদার্থের ভর, বেগ, ত্বরণ, শক্তি ইত্যাদির যে নিয়ম পদার্থবিজ্ঞানে আছে, কোনো কিছুরই তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। ইউএফওকেও এসব নিয়ম মানতে হবে।

মহাবিশ্বের গতি–প্রকৃতির সবচেয়ে আধুনিক এবং গ্রহণযোগ্য যে পরীক্ষিত তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানে আছে, তা হলো আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বা স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুযায়ী মহাবিশ্বের যেকোনো কাঠামোতে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো সমানভাবে প্রযোজ্য। তাহলে মহাবিশ্বের যে প্রান্ত থেকেই আসুক না কেন, নভোযানগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলতেই হবে।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের দ্বিতীয় নীতি হলো, শূন্যমাধ্যমে আলোর গতিই হচ্ছে পদার্থের সর্বোচ্চ গতি; অর্থাৎ সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বা ৩ লাখ কিলোমিটারের বেশি গতিতে কোনো কিছুই চলতে পারে না।

মানুষ মহাকাশে বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো শুরু করেছে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। গত ৬০ বছরে সৌরজগতের সব কটি গ্রহ-উপগ্রহের প্রায় সব জায়গা জরিপ করা হয়ে গেছে। আমাদের সৌরজগতের বাইরেও হাজার হাজার গ্রহ আবিষ্কার করে ফেলেছে। মহাকাশের আরও দূরতম স্থানে দূরবীক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করার জন্য অতিসম্প্রতি মহাকাশে পাঠানো হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। মহাবিশ্বে পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, তার অনুসন্ধান চলছে গত কয়েক দশক। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো কোথাও ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান পাননি। তবু যদি কেউ বলেন যে মহাবিশ্বের অজানা কোনো গ্রহ থেকে ইউএফওর মাধ্যমে ভিনগ্রহের প্রাণীরা আমাদের গ্রহে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে, তাহলে আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মে আমরা হিসাব করে দেখতে পারি, সেটি সম্ভব কি না।

পৃথিবী থেকে মহাশূন্যে মহাকাশযান পাঠাতে হলে পদার্থবিজ্ঞানের যেসব নিয়মকানুন মেনে প্রস্তুতি নিতে হয় এবং মহাকাশযান পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়, তা আমরা এখন জানি। পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ যে গতিতে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো সম্ভব হয়েছে, সেটি হলো পার্কার সোলার প্রোব। সূর্যের উদ্দেশে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে পাঠানো হয়েছে এই স্যাটেলাইট। ঘণ্টায় প্রায় সাত লাখ কিলোমিটার বেগে ছুটছে ওই স্যাটেলাইট। ২০২৪ সালে এটি সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছাবে। এটি হলো বাস্তবতা, শুধু আমাদের পৃথিবী থেকে সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছাতেই ছোট্ট একটি স্যাটেলাইটের সময় লাগছে ছয় বছরের বেশি। সেখানে কথিত ইউএফও আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে আসছে, আবার চলেও যাচ্ছে, এটি অবিশ্বাস্য।

সৌরজগতের সব কটি গ্রহ-উপগ্রহের পূর্ণাঙ্গ জরিপ আমাদের হাতে আছে। সেখানে কোনো প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমাদের সৌরজগতের বাইরে সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র আলফা সেনটাউরির দূরত্ব প্রায় ৪ দশমিক ২৫ আলোকবর্ষ; অর্থাৎ সেখান থেকেও কোনো কিছু আলোর বেগেও যদি আসে, সময় লাগবে সোয়া চার বছর। কিন্তু আলোর বেগে যদি আসে, সেটা আলোই হবে, পদার্থ নয়।

বৈজ্ঞানিক যুক্তির খাতিরে ধরে নিই, কথিত ইউএফও একটি মহাকাশযান, যার নাম ‘কল্পনা’, যা আমাদের কাছের নক্ষত্রের জগতের কোনো গ্রহ থেকে পৃথিবীতে আসছে। ধরে নিলাম, সেই গ্রহের দূরত্ব পৃথিবী থেকে পাঁচ আলোকবর্ষ। ধরা যাক, তিনজন নভোচারীসহ নভোযান ‘কল্পনা’ সেই গ্রহ থেকে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দিল। আমরা জানি, গ্রহান্তরে রওনা দেওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। রকেটের সাহায্যে ওই নভোযানকে সেই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে পাঁচ আলোকবর্ষ দূরত্ব পেরিয়ে সৌরজগৎ এবং তার অন্য গ্রহ-উপগ্রহগুলোর মাধ্যাকর্ষণ অতিক্রম করে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে ঢুকতে হবে।

ধরে নিলাম, এসব হিসাব করেও মহাকাশযান কল্পনার সর্বোচ্চ গতি ঠিক করা হলো আলোর বেগের অর্ধেক; অর্থাৎ সেকেন্ডে দেড় লাখ কিলোমিটার। সেই গতিতে এলেও পৃথিবীতে আসতে কল্পনার সময় লাগবে ১০ বছর। চলে যাওয়ার জন্য আরও ১০ বছর। তিনজন নভোচারীর ২০ বছরের খাওয়াদাওয়া এবং অন্যান্য রসদ থাকতে হবে নভোযানে। ২০ বছর ধরে নভোযান চলার যন্ত্রপাতি এবং জ্বালানি লাগবে। সৌরশক্তি ব্যবহার করলেও সেই শক্তি তৈরি করার যন্ত্রপাতি লাগবে।

পৃথিবী থেকে যেসব মহাকাশযান পৃথিবীর বাইরে পাঠানো হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ধরে নেওয়া যায়—যন্ত্রপাতি, রসদ, জ্বালানিসহ কল্পনার মোট ভর ১০৭ কিলোগ্রাম (১০ হাজার টন)।

এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পর যদি ৯.৮ মিটার/বর্গ সেকেন্ড হারে ত্বরণ হয়, তাহলে সর্বোচ্চ গতি সেকেন্ডে দেড় লাখ কিলোমিটারে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৭৭ দিন। [হিসাব: ত্বরণ = বেগ/সময়, সুতরাং সময় = বেগ/ত্বরণ = (১.৫× ১০৮)/(৯.৮) = ১৫৩০৬১২২.৪৫ সেকেন্ড = ১৭৭.১৫ দিন।]

এখানে সেকেন্ডে যে গতি ধরা হয়েছে, তা স্যাটেলাইটের পক্ষে অসম্ভব। সর্বোচ্চ গতির পার্কার সোলার প্রোব স্যাটেলাইটের গতি আলোর গতির এক হাজার ভাগের এক ভাগের কম। সেখানে আমরা কল্পনার গতি ধরে নিচ্ছি আলোর গতির অর্ধেক। তারপরও দেখা যাক, কল্পনার পৃথিবীতে আসার সম্ভাবনা কতটুকু।

১০ হাজার টন ভরের কল্পনার গতি লাভ করার জন্য তাকে যে পরিমাণ গতিশক্তি অনবরত সরবরাহ করতে হবে, তার পরিমাণ আমরা গতিশক্তির সমীকরণ থেকে হিসাব করতে পারি। সেই গতিশক্তির পরিমাণ হবে ১০০ কোটি কোটি কোটি জুলের বেশি (১.১২৫ ×১০২৩ জুল)। [হিসাব: E = ½ mv2 = ½ (107 kg) (1.5×108 m/s2) (1.5×108 m/s2) = 1.125×1023 Joules]

এই পরিমাণ শক্তি ২০ বছর ধরে ক্রমাগত সরবরাহ করার জন্য দরকার হবে থার্মোনিউক্লিয়ার ফিউশন পদ্ধতি। এক মেগাটন (এক মিলিয়ন টন) থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা থেকে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ ৪.২ ×১০১৫ জুল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কল্পনার শক্তি জোগানোর জন্য দরকার হবে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪টি মেগাটন থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা। একেকটি মেগাটন থার্মোনিউক্লিয়ার বোমার শক্তি হিরোশিমায় যে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তার ১০০ গুণ।

১৭৭ দিনের মধ্যে আকাঙ্ক্ষিত গতিতে পৌঁছানোর জন্য কল্পনায় শক্তি সরবরাহ করতে হবে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১ দশমিক ৮ মেগাটন। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের চেয়ে বেশি জটিল এই শক্তি সরবরাহের প্রক্রিয়া। শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে এই শক্তি সরবরাহ করতে হবে কল্পনায়। বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বল এড়াতে এই শক্তির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অকল্পনীয় দক্ষতায়। কল্পনার গতি নিয়ন্ত্রণে এই শক্তির নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এত বেশি পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত শক্তি সরবরাহ করা অসম্ভব।

উল্লিখিত পরিমাণ শক্তি থেকে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হবে, তার সবটুকুই বিকীর্ণ হয়ে যেতে হবে। এর সামান্য অংশও যদি কল্পনায় রয়ে যায়, তাহলে মহাকাশযানের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্টিফেন বোলজম্যানের তাপ বিকিরণের সূত্র প্রয়োগ করলে দেখা যায়, কল্পনার ১০০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট উপরিতলের তাপমাত্রা হয় প্রায় ৬ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রার এক শতাংশও যদি মহাকাশযানে শোষিত হয়, মহাকাশযানের তাপমাত্রা হবে ছয় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই তাপে কল্পনা বাষ্প হয়ে যাবে।

যদি কল্পনার বেগ কমানো হয়, তাহলে শক্তির হার কম লাগবে। ধরা যাক, আলোর বেগের অর্ধেকের পরিবর্তে আলোর বেগের ১ শতাংশ বেগে কল্পনা পৃথিবীতে আসছে। সে হিসাবে পৃথিবীতে আসতে এর সময় লাগবে ৫০ বছর, যেতে সময় লাগবে আরও ৫০ বছর। তখন ১০০ বছরের রসদ লাগবে। কল্পনা আরও ভারী হয়ে যাবে। কিন্তু ১০০ বছরের যাত্রাপথ কিছুতেই আলোর গতিতে আসা-যাওয়া হতে পারে না।

আমরা দেখেছি, প্রচণ্ড গতিতে কোনো কিছু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থেকে পৃথিবীতে আসার সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রচণ্ড তাপের সৃষ্টি হয়। আলোর গতির কাছাকাছি কোনো গতিতে যে তাপ তৈরি হবে, সেই তাপে মহাকাশযান অক্ষত থাকার কথা নয়।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের কোনো নিয়মেই ইউএফও পৃথিবীর বাইরের কোনো অজানা গ্রহ থেকে আসতে পারে না। যদি বলা হয়ে থাকে, ওরা এই মহাবিশ্বের পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মে চলে না, অন্য কোনো নিয়মে চলে, তাহলে বলতে হবে, ওটা নিছক কল্পনা, বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক প্রমাণিত হয়নি।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, বায়োমেডিকেল ফিজিকস বিভাগ, আরএমআইটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

সূত্র: ‘প্রিলিমিনারি অ্যাসেসমেন্ট: আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়েল ফেনোমেনা’, অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স, জুন ২০২১

মাইকেল গেইনার, দ্য ফিজিকস অব ইউএফওজ, স্কেপটিক ২০১২

উইলিয়াম মার্কোইজ, দ্য ফিজিকস অ্যান্ড মেটাফিজিকস অব আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস, সায়েন্স ১৯৬৭।