মহাকাশের ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরি করছে নাসার নতুন টেলিস্কোপ

সম্পূর্ণ মহাকাশের ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরি করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এ জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে স্পিয়ারএক্স টেলিস্কোপ। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত ১ মে থেকে টেলিস্কোপটি মহাকাশের ছবি তোলা শুরু করেছে। টেলিস্কোপটি আগামী দুই বছর প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৬০০টি করে ছবি তুলবে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ২৬ লাখ ২৮ হাজার ছবি তুলতে পারবে টেলিস্কোপটি। এভাবে বিশাল মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্যালাক্সি ও মহাকাশীয় বস্তুর ছবি তুলে বানানো হবে ত্রিমাত্রিক ম্যাপ।

বর্তমানে টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার উঁচুতে রয়েছে। স্পিয়ারএক্স টেলিস্কোপটি আমাদের গ্রহের চারপাশে উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরতে থাকবে। প্রতিদিন প্রায় ১৪.৫ বার পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে। ঘোরার সময় আকাশের একটা নির্দিষ্ট অংশের অংশের ছবি নেবে। এতে মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই স্পিয়ারএক্স পুরো মহাকাশের অন্তত একবার ছবি তুলতে পারবে। 

স্পিয়ারএক্স টেলিস্কোপ
নাসা

তবে প্রতিটি ছবিই আসলে ৬টি আলাদা ডিটেক্টর দিয়ে তোলা আলোর ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ছবি মিলিয়ে বানানো এক্সপোজার। এই ডিটেক্টরগুলো আলোর বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ছয়টি ছবির সেটকে একসঙ্গে বলা হয় এক এক্সপোজার। স্পিয়ারএক্স প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি এমন এক্সপোজার তৈরি করবে। প্রতিটি এক্সপোজারের পর স্পিয়ারএক্সের অবস্থান একটু পরিবর্তন হবে। তবে এর জন্য রকেটের মতো কোনো থ্রাস্টার ব্যবহার করতে হবে না। স্পিনিং রিঅ্যাকশন হুইল নামে একটা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে টেলিস্কোপটি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে।

এর আগেও কোবে (COBE) প্রকল্পে পুরো মহাকাশের মানচিত্র তৈরি করেছে। কিন্তু সেগুলোতে এতগুলো রঙের বর্ণালি বা কালার স্পেকট্রাম ছিল না। নতুন এই টেলিস্কোপে তা আছে। স্পেকট্রোস্কোপি নামে একটা বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই টেলিস্কোপটি ১০২টি ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলোকে ভাগ করবে। আমাদের চোখ অবশ্য সেগুলো দেখতে পায় না। ফলে স্পিয়ারএক্স আরও ভালোভাবে একটা ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরি করতে পারবে। এতে সব দিকের গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্বও জানা যাবে। শুধু তাই নয়, মহাবিশ্বে যত গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছে, তাদের সম্মিলিত আলোও মাপতে পারবে এটি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে টেলিস্কোপটি মহাজাগতিক বস্তুর উপাদান সম্পর্কেও ধারণা পাবে। কোথাও পানির অণু আছে কি না, এমনকি প্রাণের সম্ভাব্য উপাদান আছে কি না, তাও খোঁজা যাবে।

কোবে টেলিস্কোপ
নাসা

একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে এই মিশনের আরও বড় গুরুত্ব চোখে পড়বে। এই টেলিস্কোপের সাহায্যে বিগ ব্যাংয়ের ঠিক পরের মুহূর্তগুলো সম্পর্কেও জানা যাবে। মানে বিগ ব্যাংয়ের পর সেই প্রথম সেকেন্ডের কয়েক লাখ কোটি ভাগের একভাগ অংশে ঠিক কি হয়েছিল, তা জানা যাবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সেই সময় মহাজাগতিক স্ফীতি (কসমিক ইনফ্লেশন) মহাবিশ্বকে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ প্রসারিত করেছিল।

স্পিয়ারএক্স দলের সদস্যরা এই মিশন সম্পর্কে বেশ আশাবাদী। এই দলের প্রধান গবেষক জেমি বক বলেন, ‘যন্ত্রটা আমাদের প্রত্যাশার মতোই কাজ করছে। অর্থাৎ, আমরা যে দূর্দান্ত সব কাজের পরিকল্পনা করেছিলাম, সেগুলো করতে পারব। হয়তো কিছু অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারও হবে এই মিশনে’।

নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির প্রকল্প ব্যবস্থাপক জিম ফ্যানসন বলেছেন, ‘আমরা মহাবিশ্বের শুরুর দিকের ক্ষুদ্রতম সময়টা বোঝার চেষ্টা করছি। আর সে জন্যই তাকাচ্ছি আজকের এই বিশাল মহাবিশ্বের দিকে। আমার মনে হয়, এর মধ্যে একটা কাব্যিক সৌন্দর্য আছে।’

সূত্র: পপুলার সায়েন্স