সূর্যে কি বসবাস করা যায়

কমবেশি সব মানুষই রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। অনেকে মহাবিশ্বের রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে। মহাবিশ্বের কথা নামে এই বইয়ে সেই সেই রহস্যের কথা ছোটদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রাদুগা’ প্রকাশন থেকে, ১৯৮৩ সালে। ফেলিক্‌স ক্রিভিনের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। ছবি এঁকেছেন গালিনা সেমিওনভা। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…

অস্ত যাওয়ার আগমুহূর্তে রক্তিম সূর্য

সূর্য ছাড়া পৃথিবীতে কোনো জীবন সম্ভব নয়। আচ্ছা, তাহলে খোদ সূর্যে জীবন কেমন হতে পারে, ধারণা করতে পার কি? কেমন জীবন? 

আরে না, সেখানে কোন জীবনই নেই। সূর্য ছাড়া পৃথিবীতে জীবন সম্ভব না হলে হবে কি, সূর্যে কিন্তু জীবন নেই। 

বোঝ কান্ড! অন্যদের শেখায় জীবনযাপন করতে, অথচ নিজে জীবনযাপন করতে জানে না। এমন ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে বটে। সূর্য তো আর পৃথিবীকে কেবল জীবনযাপন করতেই শেখায় না, সে তাকে নিজের উত্তাপও দিয়ে থাকে। আর উত্তাপ দেওয়া মানেই অন্যদের জীবনযাপন করতে সাহায্য করা। 

গোটা ব্যাপারটার মূল কথা হলো, সূর্যের অনেক বেশি উত্তাপ আছে। এত বেশি যে সে উত্তাপ তাকে বিলিয়ে দিতেই হবে, এদিকে নিজের কাজে লাগানোর উপায় নেই। উনুনেও তো অনেক তাপ, কিন্তু তাই বলে কি উনুনে বাস করা যায়? উনুনে ঢুকলে পুড়েই মরতে হবে। সূর্যের ব্যাপারটাও ঠিক সেই রকম।

এমনকি যে সব পাথর পৃথিবীতে যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে, তারাও সূর্যে গলে গিয়ে গ্যাসে পরিণত হয়। এমনকি আয়নার ওপর যে সূর্য কিরণ ফেলে ঘরের মধ্যে লোফালুফি খেল, তার জন্ম সূর্যে হলেও সে পর্যন্ত ওখান থেকে পালিয়ে আসে পৃথিবীতে—এখানে ঘরবাড়ির দেয়ালে ছুটোছুটি করে বেড়াতে, পানিতে হুটোপুটি খেতে, গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়াতে তার ভালো লাগে। 

তাহলেই দেখ, সূর্যরশ্মিও যদি সূর্যে তিষ্ঠোতে (টিকে থাকতে) না পারে, তাহলে আর কে সেখানে বাস করতে পারবে? সূর্যে বাস করা সম্ভব নয়, অথচ সূর্যকে ছাড়া বাঁচাও সম্ভব নয়। 

সূর্য যদি নিজের উত্তাপ বিতরণ না করত, তাহলে সেই উত্তাপে কোনো কাজই হতো না। যেমন দেখ না, তোমার যা আছে তা যদি তুমি একাই ভোগ কর, তাহলে তা থেকে তোমার নিজেরও কোন আনন্দ হবে না, কারোই কোন লাভও হবে না। কিন্তু তুমি যদি নিজের উত্তাপ অন্যকে দাও, তাহলে তোমার চারপাশে জীবন বিকশিত হয়ে উঠতে থাকে, যাদের ঠান্ডা লাগছে, তোমার কাছ থেকে উত্তাপ পেয়ে তারা শরীর গরম করছে, যারা অন্ধকারে আছে, তোমার আলোয় তারা আলোকিত হয়ে উঠছে। সূর্যরশ্মি তখন তোমার কাছ থেকে ছুটে যায় দূর দূর দেশে তোমার সম্পর্কে বলার জন্য, তোমার আলো ও উত্তাপের টুকরো অন্যদেরও উপহার দেওয়ার জন্য।

(চলবে…) 

মূল: ফেলিক্‌স ক্রিভিন

অনুবাদ: অরুণ সোম 

* পাঠকের সুবিধার্থে বইয়ের মূলভাব ঠিক রেখে বানান রীতির কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।