চাঁদের অন্ধকার পিঠে মিলল আশ্চর্য উল্কাপিণ্ডের টুকরো
চীনের বিজ্ঞানীরা চাঁদের উল্টো পিঠ থেকে প্রথমবার মাটি ও পাথরের নমুনা নিয়ে এসেছিলেন। আর সেই নমুনা পরীক্ষা করতেই পাওয়া গেল নতুন এক উল্কাপিণ্ডের টুকরো। এমন কোনো জিনিস খুঁজে পাওয়ার কথা বিজ্ঞানীরা কল্পনাও করেননি। কারণ, এটা একধরনের বিরল উল্কাপিণ্ডের টুকরো!
এ আবিষ্কার নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভীষণ উত্তেজিত। কারণ, এই পাথরগুলো এমন সব গ্রহাণুর মতো, যেগুলোতে আমাদের সৌরজগত তৈরির আগের ধুলোবালি রয়েছে। এই গবেষণা হয়তো আমাদের বলে দেবে, কীভাবে এই ধরনের গ্রহাণুরাই কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী এবং চাঁদের বুকে পানি বা অন্যান্য জরুরি যৌগ এসেছিল।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী ইউকি কিয়ান বলেছেন, ‘চ্যাং'ই-৬ মিশনের মূল কাজের তালিকায় এটা ছিলই না। এটা এক অবিশ্বাস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার!’
আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের যে পিঠটা দেখি, সেখানে আগ্নেয়গিরির লাভা শুকিয়ে অনেক সমতল ভূমি তৈরি হয়েছে। কিন্তু চাঁদের উল্টো পিঠটা একদম আলাদা, খানাখন্দে ভরা। চীনের চ্যাং'ই-৬ মিশনটি চাঁদের ওই উল্টো পিঠেই নেমেছিল। তাও আবার যে সে জায়গায় নয়, চাঁদের সবচেয়ে বড় আর গভীর গর্তে। সেই গর্তের নাম ‘সাউথ পোল-এইটকেন বেসিন’। গর্তটি একাই চাঁদের চার ভাগের এক ভাগ জায়গা জুড়ে আছে!
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহ বিজ্ঞানী ইউকি কিয়ান বলেছেন, ‘চ্যাং'ই-৬ মিশনের মূল কাজের তালিকায় এটা ছিলই না। এটা এক অবিশ্বাস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার!’
বিজ্ঞানীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল এটা জানা যে, চাঁদের এপিঠ আর ওপিঠ দেখতে কেন এত আলাদা। তাঁরা ভেবেছিলেন, ওই গর্তে হয়তো চাঁদের ভেতরের স্তরের পাথর পাওয়া যাবে। কিন্তু তাঁরা যা পেলেন, তা ছিল আরও বড় চমক।
পাথরের টুকরোগুলো পেয়ে বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, এগুলো হয়তো চাঁদের ভেতরের কোনো অংশ। কিন্তু যখনই ভেতরে লোহা, ম্যাঙ্গানিজ আর জিঙ্কের পরিমাণ মাপলেন, হিসাবে গরমিল দেখা দিল! চাঁদের অন্য সব পাথরের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। তার মানে, এই পাথর চাঁদের স্থানীয় নয়, বাইরে থেকে এসেছে।
এরপর বিজ্ঞানীরা চালালেন আসল পরীক্ষা। তারা পাথরের অক্সিজেন আইসোটোপ মাপলেন। চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অব জিওকেমিস্ট্রির জিওকেমিস্ট মাং লিন এই পদ্ধতিকে বলছেন মহাকাশীয় গোয়েন্দাগিরি। তাঁর মতে, এই আইসোটোপের অনুপাত হলো একেকটি গ্রহ বা গ্রহাণুর নিজস্ব ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এই ছাপ দেখেই বলে দেওয়া যায়, জিনিসটা কোথা থেকে এসেছে।
এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট হুবহু মিলে গেছে রিয়ুগু এবং বেনু নামে দুটি গ্রহাণুর সঙ্গে! আপনারা হয়তো জানেন, জাপান আর যুক্তরাষ্ট্র এই দুটি গ্রহাণু থেকে আগেই নমুনা নিয়ে এসেছিল। আর সেই নমুনায় পাওয়া গিয়েছিল সৌরজগতের আগের সময়ের ধুলা এবং পানি! অর্থাৎ, এই নতুন আবিষ্কার প্রায় নিশ্চিত করে দিল যে, রিয়ুগু বা বেনুর মতো গ্রহাণুরাই একসময় চাঁদে এবং পৃথিবীতে পানি পৌঁছে দিয়েছিল।
চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অব জিওকেমিস্ট্রির জিওকেমিস্ট মাং লিনের মতে, এই আইসোটোপের অনুপাত হলো একেকটি গ্রহ বা গ্রহাণুর নিজস্ব ফিঙ্গারপ্রিন্ট।
এই আবিষ্কার নিয়ে বিজ্ঞানীরা এত বেশি খুশি, কারণ এ ধরনের উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে পাওয়াই যায় না! গবেষক জিনতুয়ান ওয়াং বলেন, ‘এই পদার্থগুলো ভীষণ ঠুনকো আর ভঙ্গুর হয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময়ই এগুলো প্রচণ্ড গরমে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’
যেহেতু চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই সেখানে এই ভঙ্গুর উল্কাপিণ্ডগুলো কোটি কোটি বছর ধরে অক্ষত অবস্থায় পড়েছিল। চ্যাং'ই-৬ ঠিক সেটাই তুলে এনেছে। বিজ্ঞানীরা এখন এই টুকরোগুলোর বয়স বের করার চেষ্টা করছেন। যদি বয়স জানা যায়, তাহলে হয়তো এটাও বোঝা যাবে যে, এই গ্রহাণুটির আঘাতেই চাঁদের ওই বিশাল গর্তটি তৈরি হয়েছিল কিনা!