পৃথিবী ও আকাশ
সোভিয়েত মহাশূন্যযান
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। খোঁজার চেষ্টা করেছে আকাশ ও পৃথিবীর নানা রহস্যের সমাধান। পৃথিবী ও আকাশ নামে এই বইয়ে সেই সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোটদের জন্য, সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘বিদেশি ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ থেকে। আলেকজান্ডার ভলকভের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন সমর সেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
বহিঃশূন্য বিজয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করছিল। কক্ষপথে প্রবিষ্ট প্রতিটি রকেট ছিল এ ক্ষেত্রে আরেকটি পদক্ষেপ।
১৯৬০ সালের ১৫ মে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা ওজনে সাড়ে চার টনের একটু বেশি (শেষ পর্যায়টা বাদ দিয়ে) একটি মহাশূন্যযান ছাড়েন। মানুষ থাকতে পারে, আড়াই টনের এমন একটি কেবিন ছিল ওটায়। ঠিক করা হয়েছিল, যান থেকে আলাদা হয়ে কেবিনটি আপন পথে চলবে। অবশ্য কোনো জীবন্ত মহাশূন্যচারী ছিল না সেই কেবিনে, কিন্তু মালের ভার মানুষের সমান, যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতিই ছিল। অতি সূক্ষ্ম রেকর্ডিং যন্ত্রে দেখা গেল, কেবিনের ভেতরের অবস্থা—তাপ, বায়ু সরবরাহ ইত্যাদি—স্বাভাবিক, মহাশূন্যচারী মানুষ নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।
পৃথিবীর ওপরে বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশযানটি চলে। সোভিয়েত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এটি আরেকটি কীর্তি—কেননা উপবৃত্তাকার কক্ষপথের চেয়ে বৃত্তাকার কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো অনেক কঠিন—রকেটের যাত্রা নিয়ন্ত্রণী যন্ত্রপাতি হওয়া দরকার আরও অনেক নির্ভুল। মনে আছে তো, প্রথম স্পুৎনিকগুলি ছিল যে কক্ষপথে, তার আকার অতি দ্রাঘিত (অনেকটা চ্যাপ্টা) উপবৃত্তের মতো।
প্রথমে পৃথিবীকে মহাকাশযানটি পরিক্রমণ করে ৯১ মিনিটে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৬ বার।
আগেকার স্পুৎনিকগুলো যতদিন অত্যন্ত উচ্চলোকে বায়ুর প্রতিবন্ধকতা সামলাতে পারে, ততদিন চলে। তৃতীয় স্পুৎনিক তো প্রায় দুই বছর চলে (৬৯১ দিন)। এত দীর্ঘকালব্যাপী যাত্রার জন্য মহাশূন্যযানটি বানানো হয়নি। মহাশূন্যচারী প্রথম মানুষ অবশ্য মাত্র কয়েকদিনের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য জল এবং বায়ু নিতে পারবে; আমাদের মহাকাশযানটিকে এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে পৃথিবী থেকে রেডিও-সঙ্কেতে কেবিনটি আলাদা করা যায়।
আগেকার স্পুৎনিকগুলো যতদিন অত্যন্ত উচ্চলোকে বায়ুর প্রতিবন্ধকতা সামলাতে পারে, ততদিন চলে। তৃতীয় স্পুৎনিক তো প্রায় দুই বছর চলে (৬৯১ দিন)। এত দীর্ঘকালব্যাপী যাত্রার জন্য মহাশূন্যযানটি বানানো হয়নি
তিন মাস পরে, ১৯ আগস্ট, বৃত্তাকার কক্ষপথে উৎক্ষিপ্ত হলো দ্বিতীয় মহাশূন্যযান। এবারে যাত্রী ছিল—বিয়েলকা ও স্প্রিয়েলকা নামের দুটি কুকুর, বড় ও ছোট ইঁদুর, পোকামাকড়, উদ্ভিদ, শস্যকণা ও কয়েকটি জীবাণু। প্রাণী ব্যবহার দেখার জন্য অন্যান্য সরঞ্জাম ছাড়া মহাশূন্যযানে ছিল টেলিভিশন ক্যামেরা।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ কিলোগ্রাম ওজনের মহাশূন্যযানটি পৃথিবীকে ১৮ বার চক্কর দেয়। এর পর পৃথিবী থেকে রেডিও-সঙ্কেতে আদেশ পাঠানো হলো প্রত্যাবর্তনের। প্রত্যাবর্তনের সব সরঞ্জাম অত্যন্ত সঠিকভাবে কাজ করে। গতিবেগ কমিয়ে, তাপনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জামে সুসজ্জিত যানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘন স্তর অতিক্রম করে পূর্বনির্দিষ্ট স্থানে নামল। অবতরণের আগে প্রাণিবাহী ক্যাপসুলটি আলাদা করা হয়, পারাস্যুটের সাহায্যে সেটি নিরাপদে নেমে আসে।
ইতিহাসে এই প্রথম জীবন্ত প্রাণী মহাশূন্য থেকে ফিরে এল পৃথিবীতে। কিছুদিন বাদেই আরও তিনটি মহাশূন্যযান উৎক্ষিপ্ত হলো, অনেক নতুন তথ্য পেলেন বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্যে মানুষের সম্পূর্ণ নিরাপদ যাত্রার ব্যবস্থা নিখুঁত করা হলো।