ধূমকেতুটির ইতিহাস বেশ পুরোনো। দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নামানুসারে এটির নাম রাখা হয়েছে। প্রতি ৭১ বছর পর এটি পৃথিবী থেকে দেখা যায়।
ওপরের ছবির বস্তুটি কোনো গ্রহ বা নক্ষত্র নয়। একটা ধূমকেতু। আপনার জীবদ্দশায় হয়তো মাত্র একবারই দেখতে পাবেন। কারণ প্রতি ৭১ বছর পর এটি পৃথিবী থেকে দেখা যায়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ধূমকেতুটি পৃথিবী থেকে দেখা যাবে। এর নাম রাখা হয়েছে ১২পি/পন্স-ব্রুকস। একটু অদ্ভুত নামই বটে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ২১ এপ্রিল এটি রাতের আকাশে ভালোভাবে দেখা যাবে। অবশ্য এখনো চাইলে কেউ দেখতে পারবেন। তবে সে জন্য লাগবে একটা বড় টেলিস্কোপ। ধূমকেতুটি ধূলিকণা, শিলা ও বরফ দিয়ে তৈরি। ব্যাস প্রায় ২৯ কিলোমিটার। মূলত এটি একটি শীতল আগ্নেয়গিরি। মাঝেমধ্যে হিমশীতল পরিস্থিতিতে এর গ্যাস বিস্ফোরিত হয়। ফলে বেড়ে যায় উজ্জ্বলতা।
ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রিচার্ড মাইলস বলেন, ‘গত জুলাইয়ে এ ধরনের একটা বিস্ফোরণ হয়েছিল ধূমকেতুটিতে। ফলে এর ভেতরের ধূলিকণাগুলো প্রায় সাত হাজার গুণ বেশি ছড়িয়ে পরে। তখন দেখতে হয়েছিল অনেকটা ঘোড়ার খুরের মতো। এ জন্য অনেকে এটিকে ‘শিংওয়ালা ধূমকেতু’ বা ডেভিল কমেট (শয়তানের ধূমকেতু) নামে ডাকে।
এর ইতিহাস বেশ পুরোনো। চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথম ১৩৮৫ সালে এ ধূমকেতু দেখতে পান। এরপর ১৪৫৭ সালে দেখেছিলেন এক ইতালীয় জ্যোতির্বিদ। তবে নামকরণ করা হয়েছে আরও পরে। দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নামানুসারে এটির নাম রাখা হয়। ১৮১২ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিন-লুই পন্স-এর নামানুসারে ধূমকেতুর প্রথম অংশ এবং ১৮৮৩ সালে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম ব্রুকসের নামানুসারে এর দ্বিতীয় অংশের নামকরণ করা হয়েছে।
৮ এপ্রিল হতে পারে সূর্যগ্রহণ। তখন ধূমকেতুটি দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কিছুটা সংশয় রয়েছে।
এটি পৃথিবী থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে ২১ এপ্রিল। এ সময় ধূমকেতুটি থাকবে সূর্যের সবচেয়ে কাছে। তবে ২ জুনের পরে এটি আর পৃথিবী থেকে দেখা যাবে না। ধুলিবালু কম, এমন উঁচু স্থান থেকে এটি তুলনামূলক ভালো দেখা যাবে। টেলিস্কোপ থাকলে তো কথাই নেই।
এদিকে ৮ এপ্রিল হতে পারে সূর্যগ্রহণ। তখন ধূমকেতুটি দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কিছুটা সংশয় রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সূর্যগ্রহণের সময় এটি দেখতে কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ তখন ধূমকেতুটি থাকবে সূর্য থেকে সামান্য দূরে। তবে অনেকে আবার বিপরীতটাও ভাবছেন। সূর্যগ্রহণের কারণে দেখা নাও যেতে পারে ধূমকেতুটি।
তবে সূর্যগ্রহণের সময় দেখা যাক বা না যাক, ২১ এপ্রিল অবশ্যই এটি খালি চোখে দেখতে পাবেন। যদি এই সুযোগ হারান, তাহলে জীবদ্দশায় আর কোনো দিন এর দেখা পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ধূমকেতুটি আবার দেখা যাবে ২০৯৫ সালে। ততদিন বাঁচবেন কি!