মঙ্গলের নমুনা কীভাবে পুনরুদ্ধার করবে জানে না নাসা

পারসিভারিয়েন্সের সংগৃহীত নমুনা কন্টেইনারছবি: নাসা

মঙ্গল গ্রহের বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কন্টেইনারে ভরে রাখা সেসব নমুনা অবশ্য রয়েছে মঙ্গলের মাটিতেই। হিসাব করে দেখা গেছে, এ নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে লাগবে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার! বিপুল এই ব্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। কিন্তু এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কীভাবে? জানতে প্রথমে একটু পেছনে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন।

২০২০ সাল। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মঙ্গলের উদ্দেশে রোভার পাঠিয়েছে। নাম, পারসিভিয়ারেন্স। মূলত লাল গ্রহে নেমে নমুনা সংগ্রহ করবে রোভারটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালে রোভারটি মঙ্গলের জেজেরো কার্টারে সফলভাবে অবতরণ করে। এই মিশনের খরচ ধরা হয়েছিল ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার। উদ্দেশ্য, এই খরচের মধ্যে মঙ্গলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরে  গবেষণার জন্য পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। 

মঙ্গলের জেজেরো কার্টার
ছবি: নাসা

এ পর্যন্ত সব পরিকল্পনামাফিকই চলেছে। পারসিভারিয়েন্স লাল গ্রহ মঙ্গলের নমুনা সংগ্রহ করে ২৪টি ছোট কন্টেইনার পূর্ণ করেছে। এখন সেটা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পালা। ঝামেলার শুরু এখানেই। কারণ নমুনা কীভাবে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে, তা জানা নেই নাসার। যদিও শুরুতে ঠিক করা হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে নিয়ে আসা হবে নমুনা। এরপর এই সময়সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এখন নাসা হিসাব করে দেখেছে, আসলে ২০৪০ সালের আগে মঙ্গল থেকে নমুনা আনা যাবে না। এদিকে, শুরুর সেই ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার বেড়ে খরচ হবে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে! বলা বাহুল্য, এ প্রকল্প এখন হয়ে পড়েছে প্রচুর সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

এ ব্যাপারে ১৫ এপ্রিল, সোমবার নাসার প্রধান বিল নেলসন বলেন, ‘১ হাজার ১০০ কোটি ডলার অনেক বেশি। তা ছাড়া আমাদের লক্ষ্য ২০৪০ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানো। সেখানে এ সময়ের মধ্যে শুধু নমুনা নিয়ে আসা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই অন্য পরিকল্পনা করতে হবে।’

মঙ্গলপৃষ্ঠে পারসিভারিয়েন্স রোভার
ছবি: নাসা

নাসা প্রধানের শেষ বাক্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য পরিকল্পনা তাহলে কী হবে? তার আগে একটু জেনে নিই, বর্তমান পরিকল্পনা আসলে কী ছিল। নাসার এই নমুনা সংগ্রহে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা। ২০২১ সালে তারা প্রস্তাব করে, মঙ্গল গ্রহের দিকে একই সঙ্গে দুটি রকেট উৎক্ষেপণ করা হবে। একটি বহন করবে ল্যান্ডার, অন্যটি অরবিটার। ল্যান্ডার বহনকারী রকেটটি নামবে মঙ্গলের পৃষ্ঠে। আর অরবিটার অপেক্ষা করবে কক্ষপথে। ল্যান্ডারটি হবে মঙ্গলে পাঠানো সবচেয়ে বড় ল্যান্ডার। এর মধ্যে পারসিভারিয়েন্সের সংগৃহীত ২৪টি নমুনা কন্টেইনার ভরা হবে। তারপর কক্ষপথে অপেক্ষা করা রকেটে চেপে সেগুলো নিয়ে আসা হবে পৃথিবীতে। এই দ্বিতীয় রকেটটি হবে মঙ্গলে পাঠানো নাসার সবচেয়ে বড় রকেট। কিন্তু এতসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে খরচ হবে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা নাসার কাছে অতিরিক্ত মনে হচ্ছে। তা ছাড়া এ অর্থ খরচ করেও ২০৪০ সালের আগে নমুনা ফেরানো যাবে না পৃথিবীতে। তাই নতুন পরিকল্পনা করছে নাসা। কী সেই পরিকল্পনা?

নাসা সহকারী হিসেবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে নিতে চায়। চলতি বছর ১৭ মে-এর মধ্যে নাসার কাছে আবেদন করতে হবে। এরপর ৯০ দিনের মধ্যে সেখান থেকে বাছাইকৃতদের নাম জানাবে নাসা। সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো স্পেসএক্স, বোয়িং, লকহিড মার্টিন ও নর্থরোপ গ্রুম্যান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে কীভাবে মঙ্গল থেকে নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে, তা হয়তো জানা যাবে এ বছরেই। এখন শুধু অপেক্ষা।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, স্পেস ডটকম ও নাসা