মহাবিশ্বের জন্ম নিয়ে অনেক তত্ত্ব থাকলেও মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তত্ত্বও বটে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন বেলজিয়ান বিজ্ঞানী জর্জ লেমিত্রি, তিনি ১৯২০ সালে তত্ত্বটি সম্পর্কে ধারণা দেন। তত্ত্বটিকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যান জনপ্রিয় পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। এমনকি এই তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন আমাদের দেশের গর্ব বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামও। এই তত্ত্বের পক্ষে অন্যতম যুক্তি বা নিদর্শন হলো মহাবিশ্বের প্রসারণ ও কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও এই তত্ত্বই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে।
এই তত্ত্ব বলে, মহাবিশ্বের জন্ম আজ থেকে প্রায় ১৩.৭৯ বিলিয়ন বছর আগে একটি বিন্দু থেকে। ওই বিন্দুটি প্রসারিত ও ঠান্ডা হয়েই আজকের এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। মহাবিশ্বের সব কটি বল একীভূত ছিল। কিন্তু প্রসারণের কারণে মহাবিশ্ব ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করে। প্রাকৃতিক বলগুলোও আলাদা হয়ে ৪টি পৃথক বল প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাবিশ্বের জন্মের ১০-১২ সেকেন্ডে সক্রিয় হয় হিগস ফিল্ড, যার ফলে সব পদার্থকণা ভর অর্জন করে। ১০-০৬ সেকেন্ডে গ্লুয়নের সাহায্যে দুই ধরনের কোয়ার্ক জুড়ে তৈরি হয় প্রোটন ও নিউট্রন। মহাবিশ্বের বয়স যখন ১ থেকে ১০ সেকেন্ড, মহাবিশ্বের সব কণা ও প্রতিকণা একে অপরকে ধ্বংস করে বিপুল পরিমাণ শক্তি উদ্গিরণ করে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে প্রতিকণার চেয়ে সাধারণ কণার পরিমাণ একটু বেশি ছিল। তাই কিছু সাধারণ পদার্থকণা অবশিষ্ট থেকে যায়। সেই অবশিষ্ট কণাগুলো দিয়েই আমাদের বিশাল মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১৭ মিনিট পর মহাবিশ্বের তাপমাত্রা এমন পর্যায় আসে যে অবশেষে প্রোটন ও নিউট্রন মিলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠন করতে সক্ষম হয়। এর প্রায় ৩৭৭,০০০ বছর পর প্রথম চার্জনিরপেক্ষ পরমাণু তৈরি হয় এবং CMB–এর জন্ম হয়। প্রথম নক্ষত্রের জন্ম মহাবিস্ফোরণের ১৫ কোটি মিলিয়ন বছর পর। এর কিছুকাল পর তারাদের জন্মের প্রায় সমসাময়িক সময়েই জন্ম হয় আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির। আমাদের সূর্যের জন্ম আজ থেকে মাত্র ৪৫০ কোটি বছর আগে। পৃথিবীর বয়সও সূর্যের কাছাকাছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ৯ম শ্রেণি, চিটাগাং আইডিয়াল হাইস্কুল, চট্টগ্রাম
সূত্র: ফিজিকস ওয়ার্ল্ড