মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল হারিয়ে গেল কীভাবে?

গড় দূরত্বের হিসেবে আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ। কক্ষপথের কারণে শুক্রগ্রহ আবার বছরের কিছুটা সময় পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। মঙ্গলের দূরত্ব সবসময়ই এই দুই গ্রহের তুলনায় বেশি। তারপরও বিজ্ঞানীদের সব আগ্রহ যেন মঙ্গলকে ঘিরেই। এর কারণও আছে অবশ্য। বুধ বা শুক্রের চেয়ে মঙ্গলের আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক। গঠনের দিক থেকেও পৃথিবীর সঙ্গে মিল আছে মঙ্গলের।

তবে, মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই হালকা। কার্বন ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ এই বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাত্র ১ শতাংশ।

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল সবসময় এমন ছিল না। অতীতে আরও উষ্ণ ও আর্দ্র ছিলো পরিবেশ। বায়ুমণ্ডল ছিল আরও ঘন। সূর্যের আলোকে ফাঁদে ফেলে গ্রিনহাউজ ইফেক্ট তৈরি হতো সেখানে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গল-পৃষ্ঠ থেকে সংগ্রহ করা নানা তথ্য-উপাত্ত সে কথাই বলে। তাহলে কেন গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের এই অবস্থা হলো?

মঙ্গলগ্রহকে ভালোভাবে জানার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শতাধিক মিশন পরিচালিত হয়েছে। সবগুলো যে সফল হয়েছে তাও নয়। তবে, সফল মিশনগুলো থেকে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন অমূল্য সব তথ্য।

৪০০ কোটি বছর আগেও মঙ্গলে ছিল পৃথিবীর মতো শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র। গ্রহের কেন্দ্রের গলিত উত্তপ্ত কোর থেকে এই চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার পিছনে চৌম্বকক্ষেত্রের সক্রিয় ভূমিকা থাকে।

মঙ্গলগ্রহ আকারে বেশ ছোট। ব্যাসার্ধ পৃথিবীর অর্ধেক। সূর্য থেকে এর দূরত্বও পৃথিবী থেকে বেশি। গড় তাপমাত্রা -৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসব কারণে একটা সময় শীতল হয়ে আসে মঙ্গলগ্রহের কেন্দ্রীয় অংশ। ফলে হারিয়ে যায় গ্রহটির চৌম্বকক্ষেত্র।

সূর্য থেকে আসা শক্তিশালী আয়নিত কণার বিপরীতে ঢাল হিসেবে কাজ করে চৌম্বকক্ষেত্র। কিন্তু সেটা হারানোর পরে অরক্ষিত হয়ে পড়ে মঙ্গলগ্রহ।

বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী, চৌম্বকক্ষেত্র হারানোর কয়েক কোটি বছরের মধ্যই হারিয়ে যায় মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল। সেসময় সূর্য ছিল বয়সে একদম নবীন। নিজ অক্ষে সূর্যের ঘূর্ণন আজকের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তাই, সৌরঝড় থেকে গ্রহের আছড়ে পড়া শক্তিশালী সৌরবায়ুর পরিমাণও ছিল বেশি।

অরক্ষিত মঙ্গলে ক্রমাগত এই শক্তিশালী সৌরবায়ুর আঘাতে ধীরে ধীরে মহাশূন্য হারিয়ে যেতে থাকে বায়ুমণ্ডল। উষ্ণ-আর্দ্র গ্রহটি পরিণত হয় লাল মরুগ্রহে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস