কোথায় নামবে আর্টেমিস ৩

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আর্টেমিস ৩ অবতরণের জন্য সম্ভাব্য ১৩টি অঞ্চল বাছাই করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে একাধিক সম্ভাব্য ল্যান্ডিং সাইট।

২০২৫ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আবার চাঁদে মানুষ পাঠাতে চাইছে। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মিশনে সর্বশেষ চাঁদে মানুষ পাঠানো হয়েছিল। ২০২৫ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে একজন নারী নভোচারীকে চাঁদে পাঠানোর মাধ্যমে নাসা আবার চন্দ্র অভিযান শুরু করবে। এ মিশনের মাধ্যমেই চাঁদে প্রথম একজন নারী পা রাখবেন। ১৯ আগস্ট ২০২২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের সম্ভাব্য অঞ্চলগুলোর নাম জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আর্টেমিস ৩ অবতরণের জন্য সম্ভাব্য ১৩টি অঞ্চল বাছাই করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে একাধিক সম্ভাব্য ল্যান্ডিং সাইট। নাসার বিজ্ঞানীরা এখন সব কটি অঞ্চল চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখবেন, কোন অঞ্চলে অবতরণ করলে চাঁদ থেকে পৃথিবীর সঙ্গে সবচেয়ে ভালোভাবে যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া এই অঞ্চল নির্বাচনে আলোর বিষয়টিও ভেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ নভোচারীরা কোথায় অবতরণ করলে সূর্যের আলোর দেখা পাবেন, সেটি মাথায় রেখেই নির্বাচন করা হয়েছে অঞ্চলগুলো। এ ব্যাপারে আগামী মাসে শীর্ষ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করে এর একটিকে অবতরণের জন্য বাছাই করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।

আর্টেমিস ৩ অবতরণের সম্ভাব্য ১৩টি অঞ্চল
সম্ভাব্য প্রতিটি অঞ্চল চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৬ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।

আর্টেমিস ৩ অবতরণের জন্য যে ১৩টি অঞ্চল বাছাই করা হয়েছে, সেগুলো হলো ফাউস্টিনি রিম আ (Faustini Rim A), পিক নিয়ার শ্যাকলটন (Peak Near Shackleton), কানেকটিং রিজ (Connecting Ridge), কানেকটিং রিজ এক্সটেনশন (Connecting Ridge Extension), ডি গার্লাচে রিম ১ (de Gerlache Rim 1), ডি গার্লাচে রিম ২ (de Gerlache Rim 2), ডি গার্লাচে-কোশার ম্যাসিফ (de Gerlache-Kocher Massif), হাওয়ার্থ (Haworth), ম্যালাপার্ট ম্যাসিফ (Malapert Massif), লিবনিটজ বেটা প্লেট (Leibnitz Beta Plateau), নোবিল রিম ১ (Nobile Rim 1), নোবিল রিম ২ (Nobile Rim 2), আমুন্ডসেন রিম (Amundsen Rim)।

সম্ভাব্য প্রতিটি অঞ্চল চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৬ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত। এ ছাড়া সম্মিলিতভাবে এ অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আছে। ফলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলগুলোতে আরও নভোযান ল্যান্ডিং করানো যাবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এ অঞ্চলগুলো নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করবেন বিজ্ঞানীরা।

ওয়াশিংটনে অবস্থিত নাসা সদর দপ্তরে আর্টেমিস ক্যাম্পেইন ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের উপসহযোগী প্রশাসক মার্ক কিরাসিচ বলেন, এ মিশনে নভোচারীরা চাঁদের অন্ধকার অংশে প্রবেশ করবেন। ভবিষ্যতে চাঁদে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এ মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে কয়েকটি চাঁদের প্রাচীনতম অংশে অবস্থিত। ফলে চাঁদ সৃষ্টির সময় কেমন অবস্থায় ছিল, সে ব্যাপারে ধারণা পাবেন বিজ্ঞানীরা।

চাঁদের এ অঞ্চলগুলো নির্বাচন করার জন্য নাসার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের একটি দল কাজ করেছে। নাসার লুনার রিকনেসানস অরবিটার, অর্থাৎ পরিদর্শক চন্দ্র নভোযানের পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা এ অঞ্চলগুলো নির্ধারণ করেছে। চাঁদের ওই অঞ্চলগুলোর মাটি কতটা ঢালু, নভোযান অবতরণের জন্য কোন জায়গা কতটা উপযোগী, কতটা সহজে চাঁদ থেকে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে বা সেখানকার আলোর ব্যবস্থা কেমন, এসব বিষয় মাথায় রেখে ১৩টি অঞ্চল নির্বাচন করা হয়েছে।

নির্বাচিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে কয়েকটি চাঁদের প্রাচীনতম অংশে অবস্থিত। ফলে চাঁদ সৃষ্টির সময় কেমন অবস্থায় ছিল, সে ব্যাপারে ধারণা পাবেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া নভোচারীরা যাতে সহজে চাঁদের আলোকিত অংশ থেকে গিয়ে অন্ধকার অংশে ঘুরেফিরে দেখতে পারেন, সে রকম জায়গা বাছাই করবে বলে জানিয়েছে নাসা।

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা 

সূত্র: নাসা