‘জেমস ওয়েবের মাধ্যমে প্রাচীন মহাবিশ্বকে স্বচ্ছভাবে দেখতে পাব’- লামীয়া মওলা

দীর্ঘ ৩০ বছর জ্যোতির্বিদরা অপেক্ষায় ছিলেন মহাকাশে পাখা মেলবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী নভোদুরবীন হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হতে যাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা—নাসা, ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থা—ইসা, কানাডিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা—সিসার এই টেলিস্কোপটি। এই শক্তিশালী টেলিস্কোপটির মাধ্যমে মহাবিশ্বের অনেক অজানা জগৎ জ্যোতির্বিদদের চোখে ধরা পড়বে, উদঘাটিত হবে অনেক রহস্যের সমাধান। তবে এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়েছে নাসা। নাসা জানিয়েছে ২৫ ডিসেম্বরের আগে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব নয়। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে, নভোদুরবিনটির সব যন্ত্রাংশ ঠিক আছে। উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত। টেলিস্কোপটি সম্পর্কে বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে কথা বলেছেন জেমস ওয়েব প্রকল্পে কানাডিয়ান টিমের সদস্য ও জ্যোতিপদার্থবিদ লামীয়া আশরাফ মওলা। কানাডা প্রবাসী এই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন টরোন্টো ইউনিভার্সিটির ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসে। মহাকাশে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সম্ভাব্য উৎক্ষেপণ ও এর কার্যক্রম, প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছিলেন তিনি।

অনলাইনে তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার এবং সম্পাদনা দলের সদস্য উচ্ছ্বাস তৌসিফ

২০২১,সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত জ্যোতিপদার্থবিদ লামীয়া আশরাফ মওলার সাক্ষাৎকারটি আজ আবার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণের সময় পিছিয়ে ২২ ডিসেম্বর করা হয়েছে। তো এই তারিখে কি উৎক্ষেপণ করা যাবে নাকি আবার সময় পিছিয়ে যাবে?

লামীয়া মওলা: জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণের সময় নির্ভর করে পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদের কক্ষপথের ওপর। এমন সময় পৃথিবী থেকে রওনা দিতে হবে যে সময় সূর্য ও চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে কম বাধা দেবে। জেমস ওয়েব কতদিন কাজ করতে পারবে তা নির্ভর করবে এর জ্বালানি কতদিন বাঁচবে তার ওপর। উৎক্ষেপনের সময় যথেষ্ট কম জ্বালানি ব্যাবহার করি, তাহলে ওয়েবের জীবনকাল ৫ বছর না হয়ে ১০ বছরও হতে পারে। সেজন্য আমরা নির্দিষ্ট একটি সময়ে জেমস ওয়েবকে উৎক্ষেপণ করতে চাই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: গত ১৮ ডিসম্বের একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা কি গুরুতর সমস্যা?

লামীয়া মওলা: আসলে একটা ভাইব্রেশন হয়েছিল। পরে ভেতরে নিয়ে দেখা হয়েছে কোনো সমস্যা হয়েছিল কি না। টেস্ট করে দেখা গেছে, আসলে কিছু হয়নি। এই টেস্ট করার জন্য ৩ দিন সময় ব্যয় হয়েছে। পুরো বিষয়টা আসলে সাবধানতা। হাবল থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। হাবল টেলিস্কোপ যখন লঞ্চ করা হয়েছিল, তখন তাঁরা এন্ড টু এন্ড টেস্ট করেননি। এই টেস্ট মানে, যখন আলো আসবে, তখন প্রাথমিক আয়না থেকে প্রতিফলিত হয়ে মাধ্যমিক আয়না তে যাবে। তারপর সেই আলো মাধ্যমিক থেকে প্রতিফলিত হয়ে ক্যামেরা এবং অন্যান্য যন্ত্রে ঢুকবে এবং প্রসেস হয়ে ডেটা বা তথ্য হবে যা আমরা পাব। হাবলের সময় তাঁরা ছোট ছোট টেস্ট করলেও এই ধরনের সম্পূর্ণ এন্ড টু এন্ড টেস্ট করেননি। হাবল লঞ্চের পরে যে সমস্যা হয়েছিল এবং যা নভোচারীরা দুই বছর পরে গিয়ে সারিয়েছিলেন, তা হয়ত পৃথিবীতে পরীক্ষার সময়ই ধরা পড়ত। এ জন্য কোনো সমস্যা হলেই আমরা সব টেস্ট করে দেখছি।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, পিএইচডির সময় লামীয়া মওলা এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করা সুযোগ পেয়েছিলেন
প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: জেমস ওয়েব মহাকাশ বিজ্ঞান, কসমোলজিতে কী ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে আপনার মনে হয়? সেখান থেকে সারা বিশ্বের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্টরা কীভাবে সহায়তা পাবেন?

লামীয়া মওলা: আমরা অনেক দিক থেকে অনেক ধরনের আবিষ্কারের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হবে, প্রথম দিককার সব ছায়াপথ থেকে আলো পাওয়া। দূরের জিনিস থেকে আলো আসতে বেশি সময় নেয়, কারণ আলো একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে। আমরা যত দূরে দেখি, আমরা তত আগের আলো দেখতে পাই। টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা হল টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণের মতো। হাবল ক্ষীণ আলো দেখেছে প্রায় ১৩ শ কোটি বছরের আগেরকার একটি ছায়াপথ থেকে। ওয়েব সেটা নিশ্চিত করবে এবং এরকম আরও অনেক অনেক ছায়াপথ খুঁজে পাবে। আমরা এখন উদগ্রীব হয়ে আছি জানতে যে প্রথম গ্যালাক্সি কেমন ছিল। বিগ ব্যাংয়ের পরে কয়েক শ মিলিয়ন বছরে কী কী হয়েছিল? এক্সোপ্লানেটের বায়ুমণ্ডল দেখার জন্য অনেকে উদগ্রীব বিজ্ঞানীরা। অন্য গ্রহের বায়ুমণ্ডল কেমন, সেটা জানার চাই আমরা। হাবল আর জেমস ওয়েবের পার্থক্য হলো, জেমস ওয়েবের রেজোলিউশান এবং ক্ষমতা হাবলের ১০ গুণ বেশি। খুব ছোট এবং ক্ষীণ জিনিস আমরা স্বচ্ছভাবে দেখতে পাব। তবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন সব থেকে রোমাঞ্চকর কী হবে, তাহলে বলব, আমরা যদি এমন কিছু পাই, যা আগে আমরা জানতাম না যে ছিল—সেটা।

শিল্পীর তুলিতে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: আমাদের প্রথম দিকের গ্যালাক্সি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে। আলো সরাসরি না ধরতে পারলেও গঠন কীভাবে হয়েছে, এ ব্যাপারে একটা ধারণা আছে। আলো ধরতে পারলে এক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি কী হবে?

লামীয়া মওলা: গ্যালাক্সি গঠন হয়েছে কত আগে? আমরা অনেক তারা পাই, যেগুলোর বয়স প্রায় মহাবিশ্বের সমান। এখনো হয়ত এমন অনেক গ্যালাক্সি আছে, যেগুলো আমরা দেখিনি। আমরা ১৩.৭ বিলিয়ন আলোক বর্ষ পর্যন্ত দেখতে পাই। এর চেয়ে বেশি আমরা দেখতে পারি না। কারণ ওই আলো এসে আমাদের কাছে এখনো পৌঁছেনি। গ্যালাক্সিগুলো বড় হতে কত দিন সময় লেগেছে? আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি হচ্ছে অ্যান্ড্রোমিডা। আমরা জানি, ৬ বিলিয়ন বছর পরে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সাথে আমাদের গ্যালাক্সি মিলে একটি বড় গ্যালাক্সি তৈরি হবে। তার আগে সূর্য বিলীন হয়ে যাবে। আমরা মূলত বোঝার চেষ্টা করছি, প্রথম গ্যালাক্সি তৈরি হওয়ার সময় এর ভেতরে কী ধরনের পদার্থ ছিল? এরকম ছোট ছোট বিষয় জানলে আমরা ধারণা করতে পারব আসলে কত গ্যালাক্সি এবং কত তারা আছে আমাদের মহাবিশ্বে।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: পপুলার সায়েন্সে বিষয়গুলো তো ভাসাভাসা। আসলে গ্যাপটা কোথায়? কী কারণে মূলত সমস্যা হয়? কী কারণে বিজ্ঞানীরা আরো বেশি জানতে চাইছেন?

লামীয়া মওলা: আমরা গ্যালাক্সি সম্পর্কে অনেক কিছু জানি, কিন্তু তারচেয়েও বেশি জানি না। ছোট ধরনের একটা গ্যালাক্সি পাওয়া গিয়েছিল কয়েক বছর আগে। সেটা ডার্ক ম্যাটারে ভরা ছিল। গ্যালাক্সি গঠনের মডেল আমরা শিখি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই মডেলে এরকম গ্যালাক্সি গঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কোথা থেকে এই গ্যালাক্সি এলো? এখনো আমাদের জানার অনেক বাকি আছে। অনেক গ্যালাক্সি আছে, যেগুলো এই সময়ের মধ্যে কীভাবে গঠন হয়েছে, তা আমরা কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না। আমরা আসলে যতদূর দেখতে পারি, সেটুকুই জানি। এর বেশি জানি না। আমাদের প্রাচীন মহাবিশ্বের ছায়াপথের জ্ঞান হল অনুমান করা। কিন্তু এই প্রথম আমরা জেমস ওয়েবের মাধ্যমে প্রাচীন মহাবিশ্বকে স্বচ্ছভাবে দেখতে পাব। জানতে পারব ছায়াপথ কেমন ছিল যখন তারা জন্ম নিচ্ছিল, গঠন হচ্ছিল। এই ব্যবহারিক জ্ঞাণের কোন তুলনা হয় না!

২০১৮ সালে গবষেণাকালে ক্যালিফোর্নিয়ার পালোমার অবজারভেটরির এই ছবি তুলেছিলেন লামীয়া মওলা
প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: অনেকেই বলছেন, শুধু প্রথম দিকের গ্যালাক্সিই নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রথম আলোটাও হয়ত ধরতে পারবে জেমস ওয়েব। এটা ডিটেক্ট করতে পারলে আমরা অতিরিক্ত কী সুবিধা পাব? অর্থাৎ ইনফ্রারেড ডিটেক্ট করার কোনো আলাদা সুবিধা আছে কি না?

লামীয়া মওলা: জেমস ওয়েব হাবলের থেকে লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্য অবলোহিত বা ইনফ্রারেড আলো দেখতে পাবে। প্রথম গ্যালাক্সির নতুন তারার এবং ব্লাকহোলের চারপাশের আল্ট্রাভায়োলেট আলো এখন রেডশিফট বা লোহিত বিচ্যুত হয়ে ইনফ্রারেডে দেখা যাবে। বিগ ব্যাংয়ের পর প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর থেকে শুরু করে কয়েক শ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত মহাবিশ্বে কোন কিছু ছিল না, হাইড্রোজেন ও সামান্য হিলিয়াম নিউক্লিয়াস ছাড়া। কোন গ্রহ ছিল না, নক্ষত্র ছিল না, কোন ছায়াপথও না, শুধু ছিল হাইড্রোজন আর হিলিয়াম নিউক্লিয়াস। একে বলা হয় ডার্ক এজ বা অন্ধকার যুগ। কারণ তখন ঘন প্লাজমা স্যুপ থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারছিল না। আরও পরে হাইড্রোজেন থেকে একসময় প্রথম তারা জন্ম নেয় এবং তার থেকে আলো আসা শুরু করে। আমরা জানি না, ডার্ক এজ ঠিক কখন শেষ হয়েছিল, কখন প্রথম তারা, গ্রহ, ছায়াপথ, জীবন শুরু হয়েছে। জেমস ওয়েব এসব ইঙ্গিত দিতে পারবে।

রকেটে ঢোকানো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে ঢোকানো হচ্ছে
প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: জেমস ওয়েব তাহলে প্ল্যাঙ্ক টাইমের আগে যেতে পারছে না। আমাদের কাছে এখন যে প্রযুক্তি আছে, তাতে ধারণা করতে পারছি আগামি ৫০ বছরে আমাদের কী ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তি থাকবে। তাহলে আমরা কি ভবিষ্যতে প্ল্যাঙ্ক টাইমের আগের সময়টা দেখতে বা অবজার্ভ করতে পারব? এই ধরনের প্রযুক্তি আমরা বানাতে পারব কি না?

লামীয়া মওলা: প্ল্যাঙ্ক টাইমের আগে দেখা যাবে না, কারণ আমরা শুধু আলো দেখতে পাই। প্ল্যাঙ্ক টাইম হল ১০-৪৪ সেকেন্ড। আমাদের মহাবিশ্বের প্রথম ছবি হল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) বা মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ, যা বিগ ব্যাংয়ের ৩৮০,০০০ বছর পরের ছবি। বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্ব প্রচণ্ড গরম এবং ঘন প্লাজমা ছিল। সেটা এতই ঘন ছিল যে সেখান থেকে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারত না। এরপর মহাবিশ্ব আস্তে আস্তে শীতল হয়েছে হাজার বছর ধরে। হাইড্রোজেন পরমাণু গঠিত হয়েছে এবং এক সময় হাইড্রোজেন প্লাজমার সাথে ধাক্কা খেয়ে ফোটন বেরিয়ে এসেছে, যা আমরা এখন সিএমবি হিসেবে দেখতে পাই। প্ল্যাঙ্ক স্কেল হল আমাদের সবচেয়ে ছোট তাত্ত্বিক একক। ওই সময়কার সবকিছু এতই ছোট ছিল যে তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়।

নিউ ম্যাক্সিকোতে ড্রাগনফ্লাই টেলিস্কোপ টেস্ট করার সময়
প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: এল-২ এর যে দূরত্ব, আমরা জেমস ওয়েবকে ওই পরিমাণ দূরে পাঠাচ্ছি শুধু ঠাণ্ডার জন্য, নাকি পৃথিবী থেকে যত দূরে যাবে তত দূরের আলো ধরতে পারবে ওই কারণে?

লামীয়া মওলা: মহাবিশ্বের যে স্কেল, সেই তুলনায় L2-এর দূরত্ব খুবই ছোট। প্রধানত ঠান্ডা একটা জায়গায় যেতে হবে, যেখানে গ্রাভিটেশনাল ফোর্স অন্য যেকোনো পয়েন্টের তুলনায় অনেক কম। কোনো কিছুর ছবি তোলার জন্য আমরা টেলিস্কোপটাকে যখন বিভিন্ন দিকে ফোকাস করব তখন আমাদের জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। L2-তে সূর্যের গ্রাভিটেশনাল ফোর্স কম এবং আমাদেরকে কম জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। ফুয়েল এফিসিয়েন্সি বাড়ানো (জ্বালানি খরচ কম) এবং তাপমাত্রা কমানোর জন্য L2-তে যাওয়া। এল-২-কে যদি আমরা ছাড়িয়ে যাই, তাহলে কিন্তু তাপমাত্রা আরও কম পাব। কিন্তু তখন আমাদের গ্রাভিটেশনাল ফোর্স আবার বেড়ে যাবে। স্থিতিশীল হবে না। এই দুটোর জন্য জেমস ওয়েব আপাতত এল-২ তে যাচ্ছে। এর আগে গায়া (GAIA) মিশনও L2-তে গেছে। আগামীতে আরও অনেক মিশন আছে এল-২ তে, যেমন লেজার ইন্টারফেরোমিটার স্পেস অ্যান্টেনা (LISA), ন্যান্সি গ্রেস রোমান টেলিস্কোপ।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: লিসা উৎক্ষেপণের তারিখ বেশ কয়েকবার পেছানো হয়েছে। লিসা নিয়ে নাসা বর্তমানে কী ভাবছে?

লামীয়া মওলা: আমি সর্বশেষ যতটুকু জানি, লিসা নাসার প্রধান লক্ষ্য নয়। লিসার মূল উদ্যোক্তা কিন্তু নাসা নয়, ইসা বা ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থা। ইসার সঙ্গে নাসাও যৌথভাবে কাজ করছে লিসা প্রজেক্টে। কিন্তু কিছু দিন আগে নাসা প্রকাশ করেছে আগামী ১০ বছরে তারা কোন কোন বিষয়ের ওপরে ফোকাস করবে। সম্ভবত লিসা সেই লিস্টে নেই। তাই বলাই যাই, লিসা আপাতত নাসার প্রধান লক্ষ্যে নেই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: এল-২ তো আসলে অনেক দূরে। ঠান্ডা জায়গা ও স্থিতিশীল, এটা একটা সুবিধা। কিন্তু এল-২-তে কোনো কিছু নষ্ট হলে আমরা কোনো ব্যাকাপ তো দিতে পারছি না। সেক্ষেত্রে হাবলকে যেমন আমরা পৃথিবীর কাছাকাছি রেখেছি, ওই কাজটা জেমস ওয়েবে করলে কী সমস্যা হতো?

লামীয়া মওলা: পৃথিবীর কাছে যেহেতু তাপমাত্রা বেশি, এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফ্রারেড আলো অনেক বেশি। জেমস ওয়েব পৃথিবীর কাছ থেকে এত বেশি সেনসিটিভ হবে না। নাসা, সিএসএ ও ইসা তিনটি স্টেশনই চেষ্টা করেছে গত ২০ বছরের সমাধান পাওয়ার। তারা টেস্ট করে পেয়েছে, ওখানে কোনো রোবটিক মিশন বা হিউম্যান মিশন যেটাই হোক, তার যে খরচ হবে এবং রিস্ক যেটা হবে, তা অনেক বেশি। ওটার কারণেই জেমস ওয়েবর উৎক্ষেপণ এতবার পেছানো হচ্ছে। যেহেতু ভুল হলে এটাতে আর কিছু করার নেই।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: প্রাইমারি মিরর নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। এটা যেহেতু ভাঁজ করে দেওয়া হচ্ছে। যেতে যেতে ভাঁজ খুলবে। এই প্রযুক্তিটা টেলিস্কোপের ক্ষেত্রে এই প্রথম। এ নিয়ে যদি কিছু বলেন।

লামীয়া মাওলা: ভাঁজ খোলা টেলিস্কোপের জন্য এটাই প্রথম। জেমস ওয়েবের মিরর হাবল থেকে প্রায় ৬ গুন বড়। কিন্তু এর ভর মাত্র অর্ধেক। কারণ, হাবলের একটা বড় মিরর ছিল, প্রায় এক হাজার কেজির মতো। জেমস ওয়েবেরগুলো ছোট ছোট আয়না, সবগুলো খুবই পাতলা, বেরিলিয়াম মিরর, একসাথে জোড়া দেওয়া। ভার কমানোর জন্য এরকম করা হয়েছে। কারণ, আপনি যত বেশি ভার বাড়াবেন, ওটা লঞ্চ এবং মেইনটেইন করতে তত বেশি ফুয়েল ব্যবহার হবে।

প্রশ্ন:

বিজ্ঞানচিন্তা: জেমস ওয়েব নিয়ে নাসার ওয়েবসাইটে আপনি কিছু বাংলা কন্টেন্ট তৈরি করেছেন। যেটা কিছু দিনের মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। এই জার্নি সম্পর্কে একটু বলুন।

লামীয়া মওলা: স্পেস সবার জন্য। আমাদের কলোনিয়াল হিস্ট্রির কারণে সম্পদ কিছু দেশের বেশি, কিছু দেশের কম। অনেক দিন ধরেই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা নাসাকে আরও উন্মুক্ত হতে বলছে। অনেকে তাদের কাছে অনেকবার চিঠি পাঠিয়েছে, আনেক আলোচনা হয়েছে। আমরা জেমস ওয়েব থেকে যা জানতে পারব, সেগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং সেটা তার নিজস্ব ভাষায় পৌছে দিতে হবে। কয়েক বছর ধরে নাসা এভাবে শুরু করেছে। আমার যতটুকু ধারণা, ৩০টি ভাষায় এখন পর্যন্ত এটা করা হয়েছে। তার মধ্যে ভিডিও করা হয়েছে যেগুলো, তার মধ্যে বাংলা একটা। ভিডিওটা জেমস ওয়েব উৎক্ষেপণের পরে প্রকাশ করবে। আপাতত আমাদের ইচ্ছা আছে আরও অনেক কন্টেন্ট বাংলায় বানানো। যেমন পুরো ওয়েবসাইট বাংলায় ট্রান্সলেট করার ইচ্ছা আছে। আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। কেউ যদি এসব নিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের সাহায্য করব।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলা কন্টেন্টের ব্যাপারে বিজ্ঞানচিন্তা কি নাসার সাথে যৌথভাবে কাজ করতে পারে?

লামীয়া মওলা: হ্যাঁ, আমি নাসার যাদের সাথে কাজ করেছি তাঁরা এবং কানাডার ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট আগ্রহী এসব কাজে।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি তো গ্যালাক্সির গঠন ও বিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন। আপনার গবেষণার বিষয় কিংবা ধারাগুলো নিয়ে যদি কিছু বলেন।

লামীয়া মওলা: আমি পিএইচডি করেছি যুক্তরাষ্টের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পর্যবেক্ষণমূলক গ্যালাক্সির বিবর্তন নিয়ে। একটা গ্যালাক্সি কীভাবে ছোট থেকে বড় হয়? বড় হলে কী কী ধরনের পরিবর্তন হয়? আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে কি রকম ছিল আগে এবং ভবিষ্যতে কী রকম হবে? একটা গ্যালাক্সি অনুসরণ করে উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ তার পরিবর্তন লক্ষ কোটি বছর সময় লাগে। তবে আপনি যদি বিভিন্ন বয়সের গ্যালাক্সি দেখেন, তাহলে বোঝা সম্ভব। আমরা হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে মহাবিশ্বের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন গ্যালাক্সির ছবি তুলে গ্যালাক্সির বিবর্তন বের করার চেষ্টা করি। এটা আমরা করতে পারি, কারণ আলো নিদিষ্ট গতিতে চলে এবং একটা গ্যালাক্সি থেকে আলো আসার সময় নির্ভর করে পৃথিবী থেকে তার দূরত্বের ওপর। আমরা যদি ছয় কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সির আলো দেখি, তার মানে আমরা যে আলো দেখছি সেটা আমাদের কাছে আসতে ছয় কোটি বছর সময় লেগেছে। অর্থাৎ আমাদের এখন দেখা গ্যালাক্সির ছবিটা আসলে ছয় কোটি বছর আগেকার। এভাবে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি নিই এবং বোঝার চেষ্টা করি। তখন আমরা বুঝতে পারি গ্যালাক্সি কীভাবে বড় হয়েছে। আমরা যা দেখছি তা আমরা জানি, আমি জানতে চাই আমরা কি দেখতে পারছি না।

আমরা মূলত গ্যালাক্সির তারার আলো দেখি। কিন্তু সেই আলো আটকে দেয় গ্যালাক্সির ধুলো। এই ধুলো অনেক জরুরি, কারণ এই ধুলোর থেকে নতুন তারা এবং গ্রহের জন্ম হয়। যেখানেই ধুলো সেখানেই নতুন তারা সৃষ্টি হচ্ছে। আমি এই গ্যালাক্সির ধুলোর বিতরণ বোঝার চেষ্টা করি। ধুলোর বিতরণ থেকে বোঝা যায় যে ভবিষ্যতে গ্যালাক্সিটি দেখতে কেমন হবে। এই বিতরণ বোঝার জন্য আমরা হাবল টেলিস্কোপের ছবি, আটাকামা মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারের (ALMA) ছবি এবং কম্পিউটার (কসমোলজিকেল হাইড্রোনমিকেল) সিমুলেশন ব্যবহার করি। কিছুদিনের মধ্যে আশা করি, আমরা জেমস ওয়েবের পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করতে পারব।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার জন্ম ও বেড়ে ওটা ঢাকাতে। বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার জার্নি ও ছোট বেলার গল্পটা একটু জানতে চাই।

লামীয়া মওলা: আমি কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়েছি। চামেলিবাগে ও মালিবাগে বড় হয়েছি। ও লেভেল, এ লেভেল করার পরে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসলি ইউনিভার্সিটিতে পড়গার জন্য আর্থিক অনুদান পাই। প্রথম আমাদের স্কুলে পদার্থবিজ্ঞান এসেছিল সম্ভবত ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। সেই ছোট থেকে আমি পদার্থবিজ্ঞানী হতে চাইতাম, কারণ এভরিথিং মেড সেন্স। পদার্থবিজ্ঞানে সব কিছু খাপে খাপে বসে যেতে থাকে। কিন্তু আমি আসলে ওয়েলসলিতে ফিজিকস পড়তে যাইনি, গিয়েছিলাম নিউরো সায়েন্স পড়তে। আমি জানতে চাইছিলাম ব্রেন কীভাবে কাজ করে। আমার মেঝ খালা কাজ করত বাংলাদেশ প্রতিবন্ধি ফাউন্ডেশনে। সেখান থেকে আমার অটিজমের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর একটা অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাস গিয়েছিলাম। আমাদের টেলিস্কোপ ছিল। ক্লাসের প্রথম দিন থেকে বিগ ব্যাং, গ্যালাক্সি নিয়ে কথা হতো। প্রতি সপ্তাহে টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশে চোখ রাখতাম। এরপর থেকে আর আমার নিউরো সায়েন্স পড়ার ইচ্ছা রইল না, ফিরে এলামা ছোটবেলার ফিজিকসে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করলাম ফিজিকসে। ল্যাবে কাজ করলাম বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট নিয়ে। তারপর অনার্সে থিসিস করলাম এমআইটির লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজারভেটিতে (LIGO)। তৃতীয় প্রজন্মের লাইগোর সিলিকনের আয়না কীভাবে শীতল করতে হবে, সেটাই ছিল আমার গবেষণার বিষয়। দুটো কাজই খুব মজার ছিল, কিন্তু সারা দিন বেসমেন্টের ল্যাবে কাজ করতে হত। টেলিস্কোপ মিস করা শুরু করি। তখন বুঝলাম, আমি অবজারভার হতে চাই। আবেদন করলাম অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডির জন্য। এরপর ছয় বছর ছিলাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশে থাকতে এবং অ্যাস্ট্রোফিজিকসে পড়ার আগে কি আপনার অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট হওয়ার ইচ্ছা ছিল?

লামীয়া মওলা: আমি অ্যাস্ট্রোফিজিকস সম্পর্কে খুব একটা জানতাম না। বই ছিল সৌরজগতের। আমার আব্বু এ বিষয়ে কিছু বাংলা বই কিনে দিয়েছিলেন। সেগুলো পড়তাম। স্কুলে নিউক্লিয়ার ফিজিকস সম্পর্কে আমার পাঠ্য বইয়ে অনেক বড় বড় লেখা ছিল, তাই নিউক্লিয়ার ফিজিকস নিয়ে আগ্রহ জাগে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে অ্যাস্ট্রোফিজিস্ট হব, তা ভাবিনি।

একনজরে লামীয়া আশরাফ মওলা জন্ম: ১৯৯১ সালে। ঢাকার চামেলিবাগ, শান্তি নগরে। বাবা: গোলাম মওলা মা: নাসিমা আশরাফ

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রোফিজিকস পড়ার তো সেরকম সুযোগ নেই। আসলে ফিজিকস পড়ারই সেরকম সুযোগ নেই। মাস্টার্সে গিয়ে ফিজিকস মোটামুটি পড়া যায়। তো আমাদের অনেক পাঠকই অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে পড়তে বা কাজ করতে চান। সেক্ষেত্রে তাঁদের শুরু কীভাবে করা উচিৎ?

লামীয়া মওলা: অ্যাস্ট্রোনমির জন্য ফিজিকসে ব্যাকগ্রাউন্ড এবং রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া সহজ নয়। প্যান্ডেমিকের জন্য আমাদের অনেক কিছু চেঞ্জ হয়েছে এবং অনলাইনে এখন অনেক প্রোগ্রাম ও কোর্স পাওয়া যায়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এসব অনলাইন প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারবে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের আহবান করবো শিক্ষার্থীরা যাতে এসব প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে।

ওয়েলসলিতে গ্রাজুয়েশনের সময় দাদিকে নিজেদের ল্যাবের একটি টেলিস্কোপ দেখাচ্ছেন লামীয়া মাওলা

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার তো বাংলাদেশে একটা আউটরিচ প্রোগ্রাম ছিল। বাংলাদেশ সায়েন্স আউটরিচ। ওটার কাজ কী ছিল?

লামীয়া মওলা: হাতে ধরে কাজ করতে চেয়েছিলাম। এই কাজ করতে করতে মাথায় যে প্রশ্ন আসবে, সেটা প্রশ্ন করবে। সব বাচ্চাদের অনেক কৌতুহল আছে, মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘোরে। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসা করা আমরা বন্ধ করে দিই। এটা ঠিক নয়। স্কুলে প্রশ্ন করলেই বকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করেছিল। এটা দুই বছর চলেছিল। আমি এখানে চলে আসার পরে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনি অবসর সময়ে কী করতে পছন্দ করেন?

লামীয়া মওলা: আমি পেইন্টিং করি। হাঁটতেও খুব ভালো লাগে।

পেইনটিং করতে ভালোবাসেন লামিয়া মওলা

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার প্রিয় কয়েকটা বইয়ের নাম বলুন।

লামীয়া মওলা: মুহম্মদ জাফর ইকবালের টুকুনজিল, শওকত ওসমানের কৃতদাসের হাসি, তাহমিমা আনামের আ গোল্ডেন এজ

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার কয়েকজন প্রিয় লেখকের নাম বলেন।

লামীয়া মওলা: হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সত্যজিৎ রায়, অমিতাভ ঘোষ, ঝুম্পা লাহিড়ী।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে আপনার কী মনে হয়?

লামীয়া মওলা: বিজ্ঞান নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তার কোনো কমতি নেই দেশে। বাচ্চারা চিন্তা করতে পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের কারিকুলাম এমনভাবে করা হয়েছে যে মুখস্তবিদ্যায় সব কিছু দাঁড়িয়ে যায়। আমাদের ব্যবহারিক জ্ঞান এবং গবেষণার প্রতি আরও জোর দিতে হবে।

প্রশ্ন :

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার বেশিরভাগ পাঠক তরুণ ও কিশোর। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

লামীয়া মওলা: আমি সবাইকে বলব প্রশ্ন করতে। এবং সব সময় সহজ সরল পথে না গিয়ে যাতে তারা খুঁজতে শেখে। তারা যা করছে, সেটাই কি তাদের আগ্রহের বিষয়, নাকি অন্য কিছু করতে চায়। এই প্রশ্ন করতে হবে নিজের কাছে।

অনুলিখন: কাজী আকাশ