মহাকাশ
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত কেন হয়
ছোটদের জন্য সহজ ভাষায় লেখা কঠিন। সহজ কথা যে যায় না বলা সহজে! অথচ একদম সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখা এই বই। টেলিস্কোপ কী বলে নামের এ বই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাদুগা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। পাভেল ক্লুশান্ৎসেভের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। এ বইয়ে প্রচুর ছবি আছে। সেগুলো এঁকেছেন ইয়ে. ভোইশ্ভিল্লো, ব. কালাউশিন, ব.স্তারোদুব্ৎসেভ এবং ইউ. কিসিলিওভ। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে…
তোমাদের কী মনে হয়? সূর্য ছাড়া আমরা বাঁচতে পারতাম কি? অবশ্যই না। সূর্য পৃথিবীকে আলো দেয়, উত্তাপ দেয়। সূর্যের উত্তাপ ছাড়া উদ্ভিদের বীজ অঙ্কুরিত হতে পারে না, গাছপালা পল্লবিত হয় না, মাঠ শ্যামল হয় না। পশুপাখি, পোকামাকড় সকলেই সূর্যের কিরণে আনন্দিত হয়ে ওঠে। আর আমি তুমি আমরা, মানুষেরা যে আনন্দিত হব তাতে তো কোনো সন্দেহই নেই।
সূর্য ছাড়া অন্ধকার, ঠান্ডা, বিশ্রি। সব প্রাণিকুল চেষ্টা করে রাতের বেলায় লুকিয়ে থাকতে, ঘুমিয়ে ঠান্ডা ও অন্ধকারটা কাটিয়ে দিতে। আবার যখন সূর্য ওঠে তখন সব প্রকৃতি জেগে ওঠে, সজীবতা লাভ করে।
সূর্য হলো পৃথিবীতে জীবনের উৎস। সূর্য সবার দরকার। এই জন্য স্মরণাতীত কাল থেকে লোকে সূর্যের উপাসনা করত, উত্তাপের জন্য তাকে কৃতজ্ঞতা জানাত, প্রতিদিন প্রভাতে তার উদয়কে স্বাগত জানাত।
প্রাচীন গ্রীকেরা সূর্যকে নিয়ে কী সুন্দর কাহিনী রচনা করেছে দেখ। মৃদুমন্দ বায়ু বইছে। পুব আকাশের রক্তিমাভা ক্রমেই আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। দেখতে দেখতে ঊষাদেবী এওস, তাঁর গোলাপী আঙুলের স্পর্শে অবারিত করে দিলেন প্রবেশদ্বার; তার ভেতর দিয়ে অচিরেই নিষ্ক্রান্ত হবেন ভাস্বর সূর্যদেব হেলিওস।
গোলাপী আলোর বন্যায় মৃদু উদ্ভাসিত আকাশে উজ্জল পোশাকে সজ্জিত ঊষাদেবী গোলাপী ডানায় ভর করে উড়লেন। দেবী সোনার পাত্র থেকে ধরণীর বুকে শিশির ঢালেন। হীরা-ঝলমল বিন্দু বিন্দু শিশির এসে পড়ে ঘাস আর ফুলের ওপর। সমস্ত ধরণী সুবাসে পরিপূর্ণ। জাগ্রত ধরণী সানন্দে স্বাগত জানায় উদীয়মান সূর্যদেব হেলিওসকে।
চার-পক্ষিরাজ ঘোড়ায় টানা, দেবতা হেফেস্টাসের তৈরি সোনার রথে চড়ে ভাস্বর সূর্যদেব সাগরতীর থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন আকাশের বুকে। পাহাড়-পর্বতের শীর্ষদেশ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল উদীয়মান সূর্যের আলোকরশ্মিতে। সূর্যদেবকে দেখে তারারা দিকচক্রবাল থেকে পালাতে থাকে। একের পর এক গিয়ে মুখ লুকোয় কালো রাত্রির বুকে।
হেলিওসের রথ ক্রমেই ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যদেবের মাথায় দীপ্ত মুকুট, অঙ্গে লম্বা ঝলমলে পোশাক। আকাশপথে চলতে চলতে তিনি ধরণীর ওপর ঢালেন সঞ্জীবনী আলোকরশ্মি, ধরণীকে দান করেন আলোক, উত্তাপ আর জীবন।
দিনের পথযাত্রা সমাপনান্তে সূর্যদেব নামেন মহাসাগরের পুত সলিলে। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে সোনার তরী। সেই তরীতে চেপে তিনি ফিরে চলে যান পুবে, সূর্যের দেশে, যেখানে আছে তাঁর অপরূপ প্রাসাদ। সূর্যদেব সেখানে রাতে বিশ্রাম করেন, পরদিন প্রভাতে আবার উদয় হন তাঁর পূর্ব দীপ্তি ও গৌরব নিয়ে।
এবারে আরও একটি কাহিনী শোনো। এটা রচনা করেছে কঠিন আবহাওয়াপূর্ণ উত্তরের স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোর অধিবাসীরা। অনেক অনেক কাল আগেকার কথা। সেই সময়কার কথা যখন না ছিল সূর্য না ছিল চাঁদ, তাদের কোন চিহ্নই ছিল না। পৃথিবীতে তখন রাজত্ব করত চিররাত্রির আঁধার। আর যেহেতু সূর্য ছিল না সেই হেতু গাছপালা শ্যামলিমা ধারণ করত না, ফুল ফুটত না, মাঠে পান্নারঙের ঘাস জন্মাত না।
তখন ওডিন নামে এক শক্তিমান দেবতা আর তাঁর ভাইয়েরা আগুনের দেশে গিয়ে সেখান থেকে আগুন নিয়ে এলেন। সেই আগুন থেকে ওডিন গড়লেন সূর্য আর চাঁদ। সূর্য আর চাঁদ দেখতে এত সুন্দর হলো যে অমন সুন্দর জিনিস এর আগে দেবতা বা মায়াবী কেউই কখনো বানাতে পারেননি।
এবারে যে কাজটি বাকি রয়ে গেল তা হলো এমন কাউকে খুঁজে বার করা যে সূর্য আর চাঁদকে আকাশ পথে নিয়ে ঘুরবে।
সেই সময় পৃথিবীতে একজন লোক বাস করত, তার ছিল এক ছেলে আর এক মেয়ে। দুজনেরই রূপের কোনো তুলনা হয় না। ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে তাদের বাবার গর্বের অন্ত ছিল না। তার ধারণায়, পৃথিবীতে ওদের চেয়ে সুন্দর আর কিছুই থাকতে পারে না।
বাপ যখন দেবতাদের অপূর্ব সৃষ্টির কথা জানতে পারল তখন সে তার মেয়ের নাম দিল সুল্, অর্থাৎ সূর্য, আর ছেলের নাম দিল মানি, অর্থাৎ চাঁদ।
লোকটার এ রকম ঔদ্ধত্য দেবতাদের বরদাস্ত হলো না। তাঁরা ওকে এর জন্যে কঠিন শাস্তি দিলেন।
দেবতা ওডিন সুল আর মানিকে আকাশে নিয়ে গেলেন, সূর্য আর চাঁদ এই দুই স্বর্গীয় জ্যোতিকে নিয়ে আকাশপথে নিয়মিত ঘুরতে বাধ্য করলেন ওদের।
আমাদের মনে হয় পৃথিবী বুঝি এক জায়গায় আছে আর সূর্য আমাদের চারপাশে ঘুরছে। আমাদের এরকম মনে হওয়ার কারণ এই যে ভূমণ্ডল বিরাট, নিরেট।
এর পর থেকে সুল রথের সামনের আসনে বসে একজোড়া সাদা ঘোড়া চালায়। রোজ সে আকাশপথে সূর্যকে নিয়ে ঘোরে, কেবল রাতের বেলায় সামান্য একটু বিশ্রামের অবকাশ পায়।
এদিকে ওর ভাই মানি আরেকটা রথে রাতের বেলায় চাঁদকে নিয়ে ঘোরে। এরপর থেকে মাঠে দিব্যি শ্যামল শস্য ফলে, বাগানে ফল রসে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে, পাহাড়-পর্বতে শ্যামল অরণ্যের মর্মরনি ওঠে। মানুষ আনন্দ পায়, দেবতাদের কৃতজ্ঞতা জানায়।
কিন্তু ভাই-বোন অনেক সময় মনের দুঃখে কাঁদে। যখন তারা কাঁদে সেই সময় আকাশে সূর্য আর চাঁদ ঝাপসা দেখায়।
আচ্ছা, কিন্তু আসলে কি সূর্য নড়াচড়া করে? কেন তার উদয় ও অস্ত হয়, কেন সে সর্বক্ষণ স্থির থাকে না আকাশের এক জায়গায়?
তোমাদের মনে আছে কি কোনো এক সন্ধ্যায় একটা বিশাল উজ্জ্বল বাতির পাশে নাগরদোলায় দোল খাওয়ার কথা? বাতিটা নাগরদোলার সামনে দেখা দিল, দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে গেল, তারপর চলে গেল নাগরদোলার পেছনে। কিছুক্ষণের জন্য বাতির কোন পাত্তাই নেই, অন্ধকার। তারপর ফের এসে দেখা দিল, পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে তোমাদের ওপর আলো ফেলে, আবার চোখের আড়াল হয়ে গেল।
অথচ দেখ, আসলে কিন্তু বাতি নড়াচড়া করেনি। এক জায়গায় থেকে আলো দিচ্ছিল। ঘুরছিল নাগরদোলা, সেটাই তোমাদের কখনও আলো থেকে আড়াল করছিল, কখনো বা আবার আলোর মধ্যে এনে ফেলছিল।
পৃথিবীতে লোকের অবস্থাও এ রকম। মহাকাশে ভূমণ্ডল যে নিছক সূর্যের চারধার দিয়ে উড়ে এমন নয়। ভূমণ্ডল ওড়ে এবং সেই সঙ্গে নাগরদোলার মতো ঘুরপাকও খায়। কখনো সূর্য থেকে আমাদের আড়াল করে, কখনো বা আমাদের নিয়ে আসে সূর্যের আলোর দিকে।
কিন্তু আমাদের মনে হয় পৃথিবী বুঝি এক জায়গায় আছে আর সূর্য আমাদের চারপাশে ঘুরছে। আমাদের এরকম মনে হওয়ার কারণ এই যে ভূমণ্ডল বিরাট, নিরেট। এরকম একটা প্রকাণ্ড ভারী জিনিস সাধারণ কোন লাটিমের মতো বন বন করে ঘুরতে পারে না। সে ঘুরতে থাকে ধীরে ধীরে মন্থর গতিতে, কোনো রকম ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ ও ঝাঁকুনি ছাড়াই।
নিজের অক্ষরেখার ওপর এক পাক ঘুরে আসতে ভূমণ্ডলের লাগে পুরো চব্বিশ ঘণ্টা। এই কারণে তার ঘোরা আমাদের নজরেই পড়ে না। বড় একটা জাহাজে করে যখন সমুদ্রপথে ঘোরে তখনো কিন্তু খেয়াল করতে পার না কখন সেটা ঘুরছে।
অবশ্য এটা ঠিক যে তীরভূমি দৃষ্টিগোচর হলে তাকে দেখে বাঁক বোঝা যায়। কিন্তু তীরভূমি যদি দেখা না যায়? যদি জাহাজটা মাঝসমুদ্রে চলতে থাকে? সেক্ষেত্রে কেবল সূর্যের সাহায্যেই লক্ষ করা যায় যে জাহাজ বাঁক নিল। ধরো ডেকের যে দিকটাতে ছায়া পড়েছে সেই দিক বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ তোমরা দেখতে পেলে তোমাদের গায়ের ওপর রোদ এসে পড়ছে। তার মানে জাহাজ তোমাদের ডেকটাকে সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে মোড় নিচ্ছে।
পৃথিবীর যেই অর্ধভাগ সূর্যের দিকে মুখ করে আছে, সূর্য কেবল তাকেই আলোকিত করে। বাকি অর্ধাংশে সেই সময় অন্ধকার। সেখানে তখন রাত।
ভূমণ্ডলের বেলায়ও তাই। সূর্য যখন বাড়িঘরের মাথার পেছন থেকে বা পাহাড়ের পেছন থেকে ওঠে তখন একবার মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করে দেখো। মনে হবে সূর্য আকাশের গায়ে ধীরে ধীরে গুড়ি মেরে উঠছে। আসলে কিন্তু বিশাল একটা জাহাজের মতো আমাদের ভূমণ্ডলটা সূর্যকিরণের নীচে ধীরে ধীরে ঘুরছে।
পৃথিবীর যেই অর্ধভাগ সূর্যের দিকে মুখ করে আছে, সূর্য কেবল তাকেই আলোকিত করে। বাকি অর্ধাংশে সেই সময় অন্ধকার। সেখানে তখন রাত। তারপর ভূমণ্ডল যখন ঘুরে যায় তখন যেখানে দিন ছিল সেখানে নেমে আসে রাত, আর যেখানে ছিল রাত সেখানে নামে দিন।
ভূমণ্ডল কীভাবে ঘুরছে তোমরা যাতে আরও স্পষ্ট বুঝতে পার তার জন্য ছবিতে আমরা ভূমণ্ডলকে একটা অক্ষদণ্ড দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করেছি। আসলে কিন্তু অক্ষদণ্ড বলে কিছু নেই। এই রেখাটিকে আমরা কল্পনা করেছি মাত্র।
পৃথিবীর যে যে প্রান্তে এই কল্পিত অক্ষদণ্ডটি বেরিয়ে থাকার কথা তাকে বলা হয় মেরু। ওপরের বিন্দুটা উত্তর মেরু, নীচেরটা দক্ষিণ মেরু। আর দুই মেরুর মাঝখানে, ভূমণ্ডলের মধ্যদেশের নাম হলো নিরক্ষ বৃত্ত।
আমরা বাস করছি ভূমণ্ডলের ওপরকার অর্ধাংশে, নিরক্ষ বৃত্ত ও উত্তর মেরুর মাঝখানে। এই অর্ধাংশের নাম উত্তর গোলার্ধ। সূর্যকে ঘুরে যেতে পৃথিবীর অনেক সময় লাগে। পুরো একটা বছর লেগে যায় সুর্যের চারদিকে এক পাক ঘুরতে। এই সময়ের মধ্যে নিজের অক্ষদণ্ডের ওপরে পৃথিবী পাক খায়, ৩৬৫ বার। এই কারণে বছরে আছে ৩৬৫টি দিন আর ৩৬৫টি রাত।
সূর্যের মতো চাঁদও প্রতিদিন ওঠে, প্রতিদিন অন্ত যায়। যদি তোমরা বেশ মন দিয়ে তারাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তাহলে লক্ষ করবে যে তারাভরা পুরো আকাশটাও যেন খুব আস্তে আস্তে ঘুরছে। কোনো একটা উজ্জ্বল তারার দিকে ভালো করে নজর দিয়ে দেখ। তারাটা এখন এখানে। এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে সে নজরে পড়ার মতো স্থান পরিবর্তন করবে। আর আগামীকাল ঠিক এই একই সময় পুরো একটা পাক দিয়ে আসার পর তাকে ফের দেখা যাবে তার আগের জায়গায়।
এটা ঘটার কারণ এই যে পৃথিবী সব সময় ধীরে ধীরে ঘোরে। আমরা এই বিশাল নাগরদোলাটায় বসে তার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরপাক খায়। আমাদের তাই মনে হয় আমাদের চারপাশে গোটা পৃথিবীটা, গোটা মহাকাশ ঘুরপাক খাচ্ছে।
নিরক্ষ বৃত্তে সূর্য ও চাঁদ কী ভাবে অন্ত যায় তা লক্ষ করাও কৌতূহলোদ্দীপক। তারাদের মতো সূর্য আর চাঁদও নেমে যায় একেবারে খাড়াভাবে।
এখন কল্পনা করে দেখো নাগরদোলার মাথায়, তার ছাদের ওপরে যেখানে সচরাচর একটা নিশান থাকে তোমরা সেখানে চড়ে বসলে। নাগরদোলা ঘুরপাক খাচ্ছে আর তোমরা মাথা উচু করে আকাশ দেখছ। তোমাদের চারদিকে ঘরবাড়ি গাছপালা ছুটছে। কিন্তু সরাসরি তোমাদের মাথার ওপরে যে আকাশ, তা এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। দেখে মনে হয় যেন এখানে ‘পেরেক’ পোঁতা হয়েছে, বাদবাকি আর সব কিছু পিচবোর্ডের ওপর আঁকা, আর পিচবোর্ড এই পেরেকটার গায়ে আঁটা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
পৃথিবীর মেরু নাগরদোলার মাথার মতো। আমরা যদি মেরুপ্রদেশে থাকি তাহলে মেরুতারা বা ধ্রুবতারা সরাসরি আমাদের মাথার ওপর দেখতে পাব। তোমাদের মনে আছে আমরা এর কথা বলেছিলাম? তাহলে দেখতে পাচ্ছ এই সেই ‘পেরেক’।
ভূমণ্ডল ধীরে ধীরে ঘোরে। আমাদের মাথার ওপরকার পুরো আকাশটা যেন ঘুরপাক খেতে খেতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু ধ্রুবতারা একই জায়গায় স্থির হয়ে আছে।
তারাভরা আকাশকে সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখাবে যদি আমরা মেরুপ্রদেশ থেকে সরে আসি নিরক্ষ বৃত্তে। এখান থেকে ধ্রুবতারা দেখলে মনে হবে যেন উত্তর মেরুর দিককার দিগন্তের ওপর স্থির হয়ে পড়ে আছে। নিরক্ষ বৃত্তে দাঁড়িয়ে যদি আমরা পূবের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারি থিয়েটারের বিশাল পর্দার মতো তারাভরা আকাশ তার মহিমাদীপ্ত রূপ নিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে; এদিকে পশ্চিমে তারাগুলো ঠিক একই রকম খাড়াভাবে নেমে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে।
নিরক্ষ বৃত্তে সূর্য ও চাঁদ কী ভাবে অন্ত যায় তা লক্ষ করাও কৌতূহলোদ্দীপক। তারাদের মতো সূর্য আর চাঁদও নেমে যায় একেবারে খাড়াভাবে। দেখে মনে হয় কেউ যেন তাদের একটা সূতোয় ঝুলিয়ে রেখেছিল, এখন ডুবোচ্ছে দিগন্তের ওপাশে।
আমরা যেখানে বাস করি সে জায়গাটা মেরু প্রদেশও নয়, নিরক্ষ বৃত্তও নয়। আমরা বাস করি মাঝখানে। তাই ধ্রুবতারাও আমাদের মাথার ওপর দেখা যায় না, দেখা যায় তার থেকে খানিকটা নীচে। এই কারণে আমাদের এই অংশে চন্দ্র-সূর্য যখন ওঠে তখন মনে হয় যেন পাহাড়ের ঢাল বয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে, আবার অন্ত যাওয়ার সময় ঢাল বয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নামে।
এই যে সব ঘটনা ঘটছে, তার কারণ পৃথিবী একটা গোলক, আর সেই গোলকটা ঘুরপাক খাচ্ছে।