ভারতের চন্দ্রযান-৩ নভোযানের ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান বর্তমানে নিশ্চল অবস্থায় পড়ে আছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো জানিয়েছে, এগুলোর আর সাড়া দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। চিরতরে অকেজো হয়ে গেছে বিক্রম ও প্রজ্ঞান।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নিশ্চল হয়ে পড়ে এই ল্যান্ডার ও রোভার দুটি। কারণ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সব সময় সূর্যের আলো থাকে না। আলোর অভাবে সৌরকোষ চার্জ করতে পারেনি রোভার প্রজ্ঞান। তাই অকেজো হয়ে পড়েছিল বিক্রম ও প্রজ্ঞান। কিন্তু ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা আশা করছিলেন, সূর্যের আলো পেলে হয়তো আবার জেগে উঠবে এগুলো। এখন আর সে আশা নেই।
চাঁদের একদিন পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। পৃথিবীতে যেমন একদিন বা ২৪ ঘন্টা পরপর দিন ও রাত হয়, তেমনি চাঁদেও হয় দিন-রাত। তবে পৃথিবীর ১৪ দিন পর চাঁদে একবার দিন ও একবার রাত হয়। ভারতের নভোযান চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ২৩ আগস্ট। ওই সময় চাঁদে সূর্যের আলো ছিল। সেভাবে হিসাব করেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নভোযান অবতরণ করিয়েছে ভারত। এরপর টানা ১৪ দিন চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়িয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। এ সময়ের মধ্যে রোভারটি পাড়ি দিয়েছে প্রায় ১০০ মিটার পথ। হাজার হাজার ছবি তুলে পাঠিয়েছে ইসরোকে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এই তাপমাত্রায় যন্ত্রাংশ কাজ করে না।
কিন্তু ১৪ দিন পর চাঁদে রাত নেমে আসে। ফলে অকেজো হয়ে যায় রোভার প্রজ্ঞান। কারণ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাপমাত্রা মাইনাস ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এই তাপমাত্রায় যন্ত্রাংশ কাজ করে না। সে হিসাবে বিক্রম ও প্রজ্ঞানের অকেজো হয়ে যাওয়ারই কথা ছিল। হয়েছেও তাই। চাঁদে অন্ধকার নামায় রোভারটি আর শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি।
তবে যে উদ্দেশ্যে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান পাঠিয়েছে, তা এই ১৪ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করেছে রোভার প্রজ্ঞান। বাড়তি কিছু পাওয়ার আশায় বিজ্ঞানীরা অপেক্ষা করছিলেন, আবার রোভারটি জেগে ওঠে কি না। কিন্তু না, আর জেগে ওঠেনি।
প্রথম অকেজো হয়ে যাওয়ার পর ২২ সেপ্টেম্বর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো পড়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ইসরোর পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি রোভারটির সঙ্গে। তবু আশা জিইয়ে রেখেছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এরপর আবার ৬ অক্টোবর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের আলো পৌঁছে। আশা ছিল, এ সময় আবার প্রজ্ঞানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে রোভার প্রজ্ঞান ও ল্যান্ডার বিক্রম।
‘আর কোনো আশা নেই। রোভারটি আর কখনও জেগে উঠবে না। যদিও এমনই হওয়ার কথা ছিল। হয়েছেও তাই। এখন আর কোনো আশা নেই।’
এর আগে, ১৪ জুলাই ভারতের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে নভোযান চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। ২৩ আগস্ট সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩ নভোযানের ল্যান্ডার বিক্রম। এই ল্যান্ডারের ভেতরেই ছিল রোভার প্রজ্ঞান।