শিগগিরিই গ্রহদানব বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার উদ্দেশে মিশন পরিচালনা করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সব ঠিক থাকলে আগামী ১০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার ক্লিপার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হবে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি থেকে এক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স বা গ্রহবিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিনা ডিব্র্যাসিও বলেন, ‘আমরা যে নতুন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, সেখানে আগে কখনো গভীরভাবে অনুসন্ধান চালানো হয়নি। ইউরোপা প্রায় আমাদের চাঁদের সমান। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, সেখানে বরফ আকারে অনেক পানি আছে। পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ পানি রয়েছে ইউরোপায়। সেখানে প্রাণ থাকতে পারে।’
ইউরোপায় সত্যিই প্রাণ আছে কি না, তা ভবিষ্যতে জানা যাবে। আগামী অক্টোবরে ক্লিপার মিশন উৎক্ষেপণ হলেও ইউরোপায় পৌঁছাতে লাগবে ৫ বছর। ২০৩০ সালের এপ্রিলে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবে মহাকাশযানটি। তবে ইউরোপায় কিন্তু মহাকাশযানটি অবতরণ করবে না, বরং চাঁদটির চারপাশে ঘুরবে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ফ্লাইবাই। ঘুরতে ঘুরতেই এটি যা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার, করবে। এ সময় তথ্য সংগ্রহের জন্য মহাকাশযানটি উন্নত প্রযুক্তির রাডার ও নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। ইউরোপাকে মোট ৪৯ বার প্রদক্ষিণ করবে মহাকাশযানটি।
এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখা প্রয়োজন। ইউরোপায় সরাসরি জীবনের সন্ধান করবে না এ মিশন। বরং জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হবে এ অভিযানে। সেরকম উপাদান খুঁজে পেলে ভবিষ্যতে হয়তো ইউরোপায় কোনো মহাকাশযান অবতরণ করবে।
উল্লেখ্য, সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির মোট ৯৫টি চাঁদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এরকম চাঁদ আরও অনেক রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে সেগুলো স্বীকৃতি পাবে। এই ৯৫টি চাঁদের মধ্যে ইউরোপা চতুর্থ বৃহত্তম। এর পৃষ্ঠের নিচে বরফ থাকার সম্ভাবনা আছে বলেই নাসা ইউরোপায় মিশন পরিচালনা করছে।
ভাবতে পারেন, ইউরোপায় বরফের বিষয়টা কীভাবে নিশ্চিত হলো নাসা। এটা কি শুধু অনুমান, নাকি কোনো প্রমাণ আছে? আসলে শুধু ইউরোপার উদ্দেশে এটাই নাসার প্রথম মিশন হলেও এর আগে ভয়েজার ১ ও ২ এসব গ্রহ, উপগ্রহের পাশ দিয়ে চলে গেছে সৌরজগতের বাইরে। তা ছাড়া ১৯৭২ ও ৭৩ সালে পাইওনিয়ার ১০ ও ১১ মিশন পরিচালনা করে নাসা। দুটি মিশনই বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে। তখন ইউরোপার কিছু ছবি তুলেছিল এই নভোযানগুলো। সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে বরফের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে অনেক আগেই। এখন তাই নির্দিষ্ট করে শুধু ইউরোপার উদ্দেশে যাচ্ছে ক্লিপার মিশন।
ভাবতে পারেন, ইউরোপায় বরফের বিষয়টা কীভাবে নিশ্চিত হলো নাসা। এটা কি শুধু অনুমান, নাকি কোনো প্রমাণ আছে?
নাসার সবচেয়ে বড় মিশনগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। মহাকাশযানটি প্রায় ১০০ ফুট বিস্তৃত। একটা বাস্কেটবল কোর্টের চেয়ে বড়। সূর্যের আলো ধরার জন্য এ মহাকাশযানে রয়েছে বিশালাকার সৌরপ্যানেল। কারণ, সূর্য থেকে বৃহস্পতি গ্রহটি বেশ দূরে। অত দূরে সূর্যের আলো পৌঁছায় কম। তাই সৌরপ্যানেল বড় করতে হয়েছে। এ সৌরশক্তির সাহায্যে নভোযানের যন্ত্রগুলো সচল থাকবে। এ ছাড়া মহাকাশযানটিতে পুরু প্রাচীরযুক্ত টাইটেনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের ভল্ট রয়েছে। বৃহস্পতির চারপাশের তীব্র বিকিরণ সহ্য করতে এগুলো সাহায্য করবে।
এখন শুধু নভোযানটি উৎক্ষেপণের অপেক্ষা। এর আগেও কয়েকবার উৎক্ষেপণের দিন তারিখ ঠিক করা হলেও তা নানা কারণে পিছিয়ে গেছে। দেখা যাক, আগামী ১০ অক্টোবর সফলভাবে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করতে পারে কি না নাসা।