সবচেয়ে পুরোনো গ্রহ

প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে সূর্যের জন্ম হয়। এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হতে থাকে চারপাশের গ্রহগুলো। এদের বয়সও প্রায় সূর্যের বয়সের সমান। সাড়ে চারশ কোটি বছর একেবারে কম সময় নয়। তবে মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো গ্রহের তুলনায় সৌরজগতের গ্রহগুলোকে শিশুই বলা যায়।

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো গ্রহটির নাম পিএসআর ১৬২০-২৬ বি (PSR B1620-26 b)। বয়স প্রায় ১ হাজার ২৭০ কোটি বছর! বিজ্ঞানীদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত আছে, তা থেকে আমরা জানি মহাবিশ্ব প্রায় সাড়ে ১৩০০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিল। মহাবিশ্ব জন্মের প্রায় ৭০০ কোটি বছরের মধ্যেই তৈরি হয় এই গ্রহটি। বয়সে অন্য সব গ্রহের চেয়ে বড় হওয়ায় এর আরেক নাম ম্যাথুসেলাহ। ম্যাথুসেলাহ হচ্ছে বাইবেলে বর্ণিত সবচেয়ে প্রাচীনতম চরিত্র। তারই নামে এই নামকরণ।

অন্যসব গ্রহের মতো ম্যাথুসেলাহ কিন্তু কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না। এটি ঘুরছে দুটি ভিন্ন ধরনের মহাজাগতিক বস্তুকে কেন্দ্র করে। একটি সাদা বামন নক্ষত্র, অন্যটি একটি পালসার।

ম্যাথুসেলাহ শুধু প্রাচীন গ্রহই নয়, বিজ্ঞানীদের শনাক্ত করা প্রথমদিককার এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) একটি। তবে একে গ্রহ বলা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি আছে। কাগজ-কলমে গ্রহ হতে হলে বেশকিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। তার মধ্যে একটা হলো সাধারণ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরা। এই একটি শর্ত বাদে বাকি সব শর্ত পূরণ করে ম্যাথুসেলাহ। তাছাড়া এর ভরসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গ্রহের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে সবচেয়ে পুরানো গ্রহ একেই বলা হচ্ছে এখনও।

১৯৯৩ সালে ম্যাথুসেলাহ আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়। রেডিয়াল ভেলোসিটি বা বৃত্তীয় গতি পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রহটি শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এ পদ্ধতিতে ডপলার ইফেক্টের কারণে একটি নক্ষত্রের আলো কতটুকু পরিবর্তিত হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। নক্ষত্র এবং আমাদের মধ্যে থাকা কোনো বস্তুর গতির কারণে নক্ষত্র থেকে আসা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পরিবর্তন আসে। সেই পরিবর্তন মেপে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, এখানে কোনো গ্রহ আছে। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে শুধু গ্রহের অস্তিত্বই নয়, বোঝা যায় গ্রহের ভর, বয়স এবং দূরত্ব।

প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে গ্লোবুলার নক্ষত্রপুঞ্জে গ্রহটির অবস্থান। এর ভর বৃহস্পতি চেয়ে প্রায় ২.৭ গুণ বেশি। যার অর্থ এটা সম্ভবত একটি গ্যাসীয় দানব গ্রহ। কক্ষপথের ব্যাসার্ধ প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি কিলোমিটার। একবার পুরো কক্ষপথ চক্কর দিতে গ্রহটির সময় লাগে প্রায় ১০০ বছর।

বয়স, ভর এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ছাড়া এই প্রাচীন গ্রহটি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতীতে গ্রহটি হয়ত সূর্যের মতোই কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল। জন্ম হয়েছিল সেই নক্ষত্রের মহাকর্ষক্ষেত্রের মাঝেই। কারণ এটা যে কক্ষপথে পালসার এবং সাদা বামন তারাকে কেন্দ্র করছে ঘুরছে, সেখানে নতুন গ্রহ তৈরি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত মহাকর্ষ বল থাকার কথা নয়।

সাদা বামন নক্ষত্রটিই একসময় হয়ত সূর্যের মতো সাধারণ নক্ষত্র ছিল। কালের পরিক্রমায় নক্ষত্রটি আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছায়। সেই নক্ষত্র লোহিত দানব হওয়ার সময় গ্রহটির কক্ষপথ বেশ দূরে থাকায় বেঁচে যায় ধ্বংসের হাত থেকে।

কোনো একসময় পালসারের মহাকর্ষের টানে কাছে আসে সাদা বামন নক্ষত্রটি। গ্রহটিও কক্ষপথ বদলে প্রদক্ষিণ করতে থাকে এই দুই বস্তুকে। কালের আবর্তে এটিই পরিণত হয় মহাবিশ্বের প্রাচীনতম গ্রহে।

 লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, ওয়ান্ডারপোলিস