হাবল তুলেছে সবচেয়ে বড় ছবি, গবেষক দলে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী

থ্রিডি-ড্যাশে গত ১০০ কোটি বছরের বিভিন্ন ছায়াপথ দেখা যাবে

হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাকাশের সর্বকালের সবচেয়ে বড় ছবিটি তোলা হয়েছে। নেয়ার-ইনফ্রারেড তরঙ্গে (এনআইআর) তোলা হয়েছে এটি। এতে ব্যবহৃত হয়েছে থ্রিডি-ড্যাশ প্রযুক্তি। ছবিটি তুলতে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই দলে আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডানলপ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো লামীয়া মাওলা।

তারাদের উৎপত্তিস্থল এবং প্রথমদিকের গ্যালাক্সিগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছিল সে বিষয়ে গবেষক ও জ্যোতির্বিদদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে এ ছবি। আকাশে চাঁদকে দেখতে যত বড় লাগে, তারচেয়ে ছয় গুণ এলাকার ছবি তুলেছে থ্রিডি-ড্যাশ। ধারণা করা হচ্ছে, হাবলের এই রেকর্ডটি আরও কিছু দিন অক্ষুণ্ণ থাকবে। কারণ হাবলের উত্তরসূরি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে মূলত ছোট জায়গায় সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল ছবি তোলার জন্য গত বছরের শেষ দিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। আগামী দশকে নতুন প্রজন্মের টেলিস্কোপগুলোর উৎক্ষেপণের আগ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় ছবির রেকর্ড ধরে রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

থ্রিডি-ড্যাশে ছবি তোলার পদ্ধতি

মহাবিশ্বের দুর্লভ বস্তুগুলোর সন্ধান করতে হলে আকাশের একটি বড় এলাকা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। আগে যে ছবিগুলো পাওয়া যেত, সেগুলো হয় আকারে ছোট অথবা দূর্বল রেজুল্যুশনের। এই প্রথম উচ্চ রেজুল্যুশনে একটি বড় ছবি তুলেছে হাবল। বিশাল সব গ্যালাক্সি, সক্রিয় ব্ল্যাকহোলের মতো দুর্লভ বস্তুগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে এই ছবি। এছাড়া ছবিটি থেকে চিহ্নিত মহাজাগতিক বস্তুগুলো আরও গভীর পর্যবেক্ষণ করা হবে জেমস ওয়েবের সাহায্যে।

আকাশের বিস্তৃত অংশের ছবি এক সঙ্গে তোলার জন্য হাবল টেলিস্কোপে সংযোজন করা হয় নতুন প্রযুক্তি—ড্রিফট অ্যান্ড শিফট বা ড্যাশ। এ প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে একসঙ্গে বেশকিছু ছবি তোলা হয়। পরে সেগুলো একত্রিত করে একটি বড় ছবিতে রূপান্তর করা হয়। প্রক্রিয়াটি অনেকটা স্মার্টফোনে প্যানারোমা মোডে ছবি তোলার মতো। সাধারণ প্রক্রিয়ার চেয়ে ড্যাশ ব্যবহার করে খুব দ্রুত ছবি তোলা যায়।

মহাকাশে হাবল টেলিস্কোপ

হাবল টেলিস্কোপ প্রতি ৯০ মিনিটে একবার পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। প্রত্যেকবার পৃথিবী প্রদক্ষিণের সময় একটি ছবি তুলত আগে এটি। কিন্তু ড্যাশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতি প্রদক্ষিণে আটটি ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। তাই বিশাল এই ছবিটি তুলতে হাবল ব্যয় করেছে মাত্র ২৫০ ঘণ্টা। আগের পদ্ধতিতে তুলতে গেলে সময় লাগত ২০০০ ঘণ্টা!

বিজ্ঞানী লামীয়া মওলা

নতুন এই আবিষ্কারে উচ্ছ্বসিত জ্যোতির্বিদ-মহল। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ২০১৫ সালে এই প্রজেক্টে কাজ শুরু করেছিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী লামীয়া মওলা। এই ছবি তুলতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দানবীয় ছায়াপথগুলো নিয়ে কৌতুহলী, এগুলো সাধারণত বেশকিছু গ্যালাক্সি একত্রিত হয়ে তৈরি হয়। এগুলোর গঠন কীভাবে হয় এবং এদের আকৃতির পরিবর্তনই বা কেন হয়? আগের প্রযুক্তিতে এই দূর্লভ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করা বেশ কঠিন ছিল। এই সমস্যাগুলোই এই বড় ছবি তুলতে আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে।'

মিল্কিওয়ের বাইরের গ্যালাক্সিগুলো নিয়ে গবেষণা করার জন্য থ্রিডি-ড্যাশ সবচেয়ে তথ্যবহুল ছবি তুলতে সক্ষম। দূরের অথচ প্রাচীন গ্যালাক্সিগুলো এখন থ্রিডি-ড্যাশের তোলা এই ছবির সাহায্যে জ্যোতির্বিদেরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। চাইলে যে কেউ পারবেন থ্রিডি-ড্যাশের অনলাইন ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন। এ ভার্সনটি তৈরি করেছেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলস বোর ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল ব্র্যামার।

সূত্র: অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল

ইউটরেন্টো ডট সিএ

সিটিভি নিউজ