শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ

শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণছবি: লেখক

গত ১৯ নভেম্বর একটি বিরল ঘটনা ঘটে। শতাব্দীর দীর্ঘতম প্রায়-পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায় এদিন। শুধু শতাব্দীর নয়, গত ৫৮০ বছরে এ ঘটনা প্রথম। এদিন চন্দ্রগ্রহণের স্থায়ীত্ব ছিল ৩ ঘণ্টা ২৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড। সর্বশেষ ১৪৪০ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি এত দীর্ঘ আংশিক চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়। সেদিন চন্দ্রগ্রহণের ব্যাপ্তি ছিল ৩ ঘন্টা ২৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। আগামী ছয় শ বছরে এত দীর্ঘ চন্দ্রগ্রহণ আর দেখা যাবে না। ২৬৬৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আবার এমন চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। সেদিন ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ২ সেকেন্ড স্থায়ী হবে সেই চন্দ্রগ্রহণ।

চাঁদ যখন পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদে গিয়ে পড়ে, সেটাই হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ। পৃথিবীর ছায়ায় চাঁদ যদি সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে, তাহলে সেটাকে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ বলে। কিন্তু সম্পূর্ণ ঢাকা যদি না পড়ে, সেটাকে বলে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। অনেক সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে প্রায় সম্পূর্ণ ঢেকে দেয়, কিন্তু পুরোপুরি নয়, সেটাকে বলে প্রায়-পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। ১৯ নভেম্বরের চন্দ্রগ্রহণটি ছিল প্রায়-পূর্ণগ্রাস। এদিন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ৯৯.১ শতাংশ ঢেকে দেয়।

শতাব্দীর দীর্ঘতম প্রায় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, ছবিটি যক্তুরাষ্ট্রের নর্থ টেক্সাসের শেরমান থেকে তোলা
ছবি: লেখক

গ্রহণকালে চাঁদটি ছিল লাল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যখন সূর্যের আলো প্রবেশ করে, তখন সব দিকে স্ক্যাটারিং বা বিচ্ছুরণ ঘটে। তবে অন্যান্য রংয়ের তুলনায় নীল রংটি বেশি বিচ্ছুরিত হয়, কারণ এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট এবং স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। তাই বেশিরভাগ সময়ই আমরা আকাশ নীল দেখি।

কিন্তু সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যের আলো আমাদের চোখে আসার আগে বায়ুমণ্ডলের আরও অনেক বেশি পথ অতিক্রম করে, তাই ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (নীল রং) আলোর চেয়ে বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের (লাল বা হলুদ) আলো আমরা বেশি দেখি। এ কারণেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশের লাল ও হলুদ বেশি দেখা যায়।

ঠিক এ পদ্ধতিতেই, চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সূর্যের যে আলো চাঁদে পৌঁছায়, তা কেবলই লালের দিকের বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যত বেশি ধূলিকণা অথবা মেঘ থাকবে চাঁদের লাল আলো ততবেশি প্রতিফলিত হবে। এক কারণেই ১৯ নভেম্বরের চাদের রঙ লাল ছিল।

লেখক: পদার্থবিদ, ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র

সূত্র : নাসা