কোন গ্রহে যেতে কত সময় লাগবে

এখন পর্যন্ত মানুষের বানানো সবচেয়ে দ্রুতগতির বাহন এটি। প্রতিঘন্টায় এই মহাকাশযানে করে ৫০ হাজার মাইল বা প্রায় ৮০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব

পৃথিবী বাদ দিলে সৌরজগতে আছে আরও ৭টি গ্রহ। সবগুলোই নিজেদের কক্ষপথে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এসব কক্ষপথের আকার ও আকৃতি ভিন্ন। তাই কোন গ্রহে যেতে কত সময় লাগে, তা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন কোন পথ ধরে যাচ্ছেন, মহাকাশযানের গতি কেমন, গ্রহের আপেক্ষিক অবস্থান কোথায় ইত্যাদি। হিসেবের সুবিধার জন্য এই লেখায় ধরে নেব, আপনি পৃথিবী থেকে ওই গ্রহের সবচেয়ে কম দূরত্বের পথটি ধরে যাবেন। আরও ধরে নেব, যে মহাকাশযানে করে গ্রহান্তরে পাড়ি জমাতে চাচ্ছেন, সেটার হালের একেবারে নতুন মহাকাশযান—নিউ হরাইজন। এখন পর্যন্ত মানুষের বানানো সবচেয়ে দ্রুতগতির বাহন এটি। প্রতিঘন্টায় এই মহাকাশযানে করে ৫০ হাজার মাইল বা প্রায় ৮০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব।

এই মহাকাশযান নিয়েই চলুন দেখা যাক, কোন গ্রহে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে…

শুক্র ও বুধ

সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ। এরপরই শুক্রের অবস্থান। পৃথিবী আর বুধের মধ্যবর্তী সর্বনিম্ন দূরত্ব প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ কিলোমিটার। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নিউ হরাইজনের মতো দ্রুতগতির নভোযানে চড়ে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে লাগবে প্রায় ৯৬০ ঘন্টা। অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ৪০ দিন। অন্যদিকে শুক্র আর পৃথিবী যখন সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে, তখন এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব হয় প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার। দূরত্ব যেহেতু কম, তাই এখানে যেতেও কিছুটা কম সময় লাগবে। আমাদের বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে প্রায় ৩২ দিনের মাথায়ই পৌছানো সম্ভব এই গ্রহে।

কোন গ্রহে যেতে কত লাগবে লাগবে, জেনে নিন একনজরে

মঙ্গল

মঙ্গল নিয়ে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। কত শত গল্প, কল্পকাহিনী যে মঙ্গলকে নিয়ে রয়েছে, তার হিসেব নেই। শুধু গল্পই নয়, বাস্তবে মানুষ বাকি ৬টা গ্রহের তুলনায় মঙ্গল নিয়ে গবেষণাও করেছে প্রচুর। স্বপ্ন দেখছে একদিন মঙ্গলে বসতি গড়ার। তবে মঙ্গলের বুকে মানুষ এখনও পা রাখতে পারেনি। কিন্তু সে অর্জনের হয়তো খুব বেশি দেরিও নেই। ইতিমধ্যেই মানুষের তৈরি নানা রোবট ও নভোযান মঙ্গলে পৌঁছেছে। তথ্য সংগ্রহ করেছে ও করছে মানুষের হয়ে। সেই তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন পৃথিবীতে বসে। পৃথিবী থেকে পাথুরে এই লাল গ্রহটিতে যাওয়ার সবচেয়ে কম দূরত্বের পথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ কিলোমিটার। আমাদের মহাকাশযানের গতিবেগ যেহেতু ঘন্টায় প্রায় ৮০ হাজার কিলোমিটার, তাই এখানে যেতে সময় লাগবে মোটামুটি সাড়ে ৪২ দিন।

বৃহস্পতি ও শনি

মঙ্গল ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে গেলে সামনে পড়বে গ্যাসদানব গ্রহের রাজ্য। এই রাজ্যের দুই বাসিন্দা বৃহস্পতি ও শনি। বৃহস্পতি আর পৃথিবীর মধ্যকার সর্বনিম্ন পথের দূরত্ব প্রায় ৫৯ কোটি কিলোমিটার। নিউ হরাইজন মহাকাশযানে চড়ে ওখানে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩০৬ দিন। অন্যদিকে পৃথিবী থেকে শনি আরও বেশ কিছুটা দূরে। সর্বনিম্ন পথ এক্ষেত্রে প্রায় ১০২ কোটি কিলোমিটার। এই দূরত্ব পাড়ি দিতে প্রায় ৬২২ দিন বা ১.৭ বছর সময় লাগবে।

আপাতত তাই গ্রহান্তরে পাড়ি জমাতে চাইলে যাত্রা করতে হবে কল্পরথে চড়ে। আর সেক্ষেত্রে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পৌঁছানো যাবে মুহূর্তেই। দুমুহূর্তও লাগবে না!

ইউরেনাস ও নেপচুন

বৃহস্পতি ও শনি পেরিয়ে সৌরজগতের আরও দূরের দুটি গ্রহ হলো ইউরেনাস ও নেপচুন। পৃথিবী থেকে এদের দূরত্ব এত বেশি যে খালি চোখে এই দুটি গ্রহকে দেখা যায় না। পৃথিবী থেকে ইউরেনাসের মধ্যকার সর্বনিম্ন দূরত্ব প্রায় ২৭০ কোটি কিলোমিটার। ঘন্টায় ৫০ হাজার মাইল বেগে ছুটে চলা মহাকাশযানে চেপে এ গ্রহে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ১৪ হাজার ১৬ দিন বা ৩.৮৮ বছর। অন্যদিকে পৃথিবী ও নেপচুনের মধ্যকার সর্বনিম্ন দুরত্ব প্রায় ৪৩০ কোটি কিলোমিটার। মহাকাশযানে চেপে পৃথিবী থেকে নেপচুনে পাড়ি জমাতে চাইলে সময় লাগবে ২ হাজার ২৫০ দিন বা ৬.১৬ বছর।

এক্ষেত্রে একটা শর্ত হলো, নভোযানে যথেষ্ট জ্বালানী থাকতে হবে। কোনোরকম দুর্ঘটনা, জ্বালানী ও পথচলার সমস্যা ছাড়া, কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই পাড়ি দিতে হবে সবটা পথ। এই সব ভেবে মানুষ এখন পর্যন্ত মঙ্গলের চেয়ে দূরের কোনো গ্রহে পাড়ি জমানোর কথা ভাবছে না। ভবিষ্যতে যদি ভাবে, তখনো হয়তো আমাদের কাছে থাকবে আরও উন্নত, আরও দ্রুতগতির নভোযান। তবে সে সময় আসতে এখনো অনেক দেরি। আপাতত তাই গ্রহান্তরে পাড়ি জমাতে চাইলে যাত্রা করতে হবে কল্পরথে চড়ে। আর সেক্ষেত্রে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পৌঁছানো যাবে মুহূর্তেই। দুমুহূর্তও লাগবে না!

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস