জেমস ওয়েবের চোখে নেপচুনের বলয়

সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ নেপচুনের ছবি তুলেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। বুধবার সেই ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। অবলাল আলোয় তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে নেপচুনের বলয় ও ৭টি উপগ্রহ।

নেপচুন আবিষ্কৃত হয় ১৮৪৬ সালে। সৌরজগতের প্রত্যন্ত ও প্রায় অন্ধকার অঞ্চলে এ গ্রহের বিচরণ। সূর্য থেকে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে ঘুরছে গ্রহটি। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানের দূরত্বের তুলনায় এই দূরত্ব প্রায় ৩০ গুণ। এই বিপুল দূরত্বের কারণে মধ্য দুপুরেও নেপচুনের আকাশে সূর্যের আলো দেখায় পৃথিবীর গোধূলী বেলার মতো।

১৯৮৯ সালে নেপচুনের পাশ দিয়ে ভয়েজার-২ উড়ে যাওয়ার সময় এর চমৎকার বলয়টি স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ তিন দশক পর জেমস ওয়েবের ক্যামেরায় আবার পরিষ্কারভাবে ধরা পড়লো নেপচুনের বলয়।

জেমস ওয়েবের চোখে নেপচুন গ্রহ

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের একজন ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিজ্ঞানী ও নেপচুন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেইডি হামেল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিন দশক আগে আমরা এর ধুলোময় বলয় এবং এর গাঢ় কিনারা দেখেছিলাম। এবার প্রথমবারের মতো গ্রহটা ইনফ্রারেডে আলোতে দেখছি।’

গঠন ও আবহাওয়ার কারণে নেপচুনের বরফ-দানব (Ice Giant) গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গ্যাসীয় গ্রহের তুলনায় হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়ে ভারী উপাদানে অনেক বেশি সমৃদ্ধ নেপচুন। বায়ুমণ্ডলে সামান্য মিথেন গ্যাস আছে। তাই দৃশ্যমান আলোতে নীল দেখা যায় গ্রহটিকে।

জেমস ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরার সাহায্যে ০.৬ থেকে ৫ মাইক্রন পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলাল আলোতে পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মিথেন গ্যাস প্রচণ্ডভাবে লাল ও অবলাল আলো শোষণ করে। এজন্য বেশিরভাগ জায়গা নিয়ার-ইনফ্রারেড আলোতে বেশ অন্ধকার।

তবে, গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে মেঘের উপস্থিতির কারণে গ্যাস আলো শোষণ করার আগেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। ফলে জেমস ওয়েবের ছবিতে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে নেপচুনকে।

বিভিন্ন টেকিস্কোপের তোলা নেপচুনের ছবি

ছবিতে নেপচুনের ১৪টি চাঁদের মধ্য ৭টি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। গালাতিয়া, নায়াদ, থালাসা, ডেসপিনা, প্রোটিয়াস, লারিসা এবং ট্রাইটন। ট্রাইটন নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ। পুরো উপগ্রহটি নাইট্রোজেনের বরফে আচ্ছাদিত। ফলে সূর্যের আলোর ৭০ শতাংশ আলো প্রতিফলিত হয় এখান থেকে। এ কারণে আলোর স্পাইক দেখা যাচ্ছে এর চারপাশে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, নেপচুনের এই উপগ্রহটি তার মহাকর্ষের টানে কুইপার বেল্টের গ্রহাণু থেকে তৈরি হয়েছে। জেমস ওয়েবের সাহায্যে ট্রাইটন এবং নেপচুন নিয়ে আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের।

মহাকাশে দূরবর্তী বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য মূলত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি ডিজাইন করা হয়েছে। একইসঙ্গে এটা এক্সোপ্লানেটের বায়ুমণ্ডল থেকে আসা আলো বিশ্লেষণেও দারুণ পারদর্শী।

দূরের মহাকাশের পাশাপাশি সৌরজগতের রহস্য উদ্ঘাটনে একে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ফল হিসেবে গত আগস্টে জেমস ওয়েবের তোলা বৃহস্পতির ছবি প্রকাশ করে নাসা। চলতি মাসে কয়েকদিন আগেই মঙ্গলের ছবি ও বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করেছে জেমস ওয়েব। এবারে নেপচুনের বলয়।

প্রায় আট মাস আগে মহাকাশে পৌঁছায় ৬ টনের এই টেলিস্কোপটি। নাসার দ্বিতীয় প্রসাশক জেমস এডউইন ওয়েবের নাম অনুসারে টেলিস্কোপটির নামকরণ করা হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: নাসা