যার নামে জেমস ওয়েবের নামকরণ
২০২১ সালের নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাটি আজ আবার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
টেক্সাসে মৌখিক ইতিহাসচর্চার এক প্রকল্পে জেমস ওয়েব তখনকার প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গে নিজের চিন্তার কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন, ‘আমি যত দিন আছি, তত দিন শুধু একটা অর্জনের জন্য কাজ করব না। প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উপকারও যেন হয়, তা নিশ্চিত করব।’
নাসায় জেমস ওয়েবের দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ষাটের দশকের মহাকাশ গবেষণা এখনো অতুলনীয়। ওই সময় নাসা রোবটিক মহাকাশযানে বিনিয়োগ করে। এ ধরনের মহাকাশযানের মাধ্যমে চাঁদের পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধান করেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর মানুষ এ সময় প্রথম পৃথিবীর বাইরে মহাকাশের ছবি দেখতে পায়। এই উদ্যোগ মঙ্গল ও শুক্র গ্রহে গবেষণায় ভূমিকা রাখে। তাঁর উদ্যোগেই পরে ‘লার্জ স্পেস টেলিস্কোপ’ তৈরির কাজ শুরু হয়। পরে যার নাম বদলে রাখা হয় ‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ’।
১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম চাঁদে অবতরণের কয়েক মাস আগে জেমস ওয়েব নাসা থেকে অবসর নেন। তাঁর সময়ে নাসা ৭৫টির বেশি মিশন হাতে নেয়। এগুলোতে অনুসন্ধান করা হয় সূর্য, ছায়াপথ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপরে মহাকাশের অজানা পরিবেশ নিয়ে। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল স্যাটেলাইট ও সোলার অবজারভেটরির মতো প্রজেক্টগুলোর ভিত্তি তৈরি হয় এর ফলে।
তিনি নাসায় বিজ্ঞান গবেষণার ওপর জোর দিয়েছিলেন। চালু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগার তৈরি ও ফেলোশিপের ব্যবস্থা।
প্রেসিডেন্ট কেনেডি যখন তাঁকে নাসার প্রশাসক হিসেবে কাজ করতে বলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, তিনি বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলী নন। তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ট্রুম্যান প্রশাসনে ‘আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট’ হিসেবে কাজ করার। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্মের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ম্যাকডোনেল এয়ারক্রাফট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ব্যবসা, রাজনীতি ইত্যাদিতে তাঁর দক্ষতা ছিল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘নাসার এ পদের জন্য আমি সেরা লোক নই। এ পদে কোনো বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলীকে নেওয়া যেত।’ যোগদানের আগে নাসার বিজ্ঞানীরাও তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁরা মহাকাশবিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ ও মহাকাশ প্রোগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যুক্ত করার ইচ্ছা আছে, এমন কাউকে চেয়েছিলেন। যোগদানের কয়েক মাসের মধ্যে এসব কাজে উদ্যোগ নিয়ে জেমস ওয়েব নিজেকে প্রমাণ করেন।
তাঁর অধীনে অ্যাপোলো প্রোগ্রামের সময় নাসায় কাজ করতেন পঁয়ত্রিশ হাজার লোক। চার লাখ চুক্তিবদ্ধ কর্মী ছিলেন বিভিন্ন কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব মানুষই সে দশকের শেষে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ও সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। মানুষকে চাঁদের মাটিতে নামার সব ব্যবস্থা করে দেন তাঁরা। এ রকম নেতৃত্বের কারণেই জ্যোতির্বিদ্যা ও মহাকাশ গবেষণার বর্তমান ভিত্তি তৈরি সম্ভব হয়েছে।
লেখক: স্বেচ্ছাসেবক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি
সূত্র: নাসা ডট গভ
*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার নভেম্বর ২০২১ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়