শনির বলয় কত বড়

শনি গ্রহ

বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুন। শনি ছাড়াও সৌরজগতের এই তিন গ্রহের চারপাশে রয়েছে বলয়। তবু গ্রহের বলয়ের কথা উঠলে শনির ছবিটাই সবার আগে মাথায় আসে। স্কুলের বিজ্ঞান বই কিংবা যেকোনো জায়গায় সৌরজগতের যে সরল ছবি দেওয়া থাকে, সেখানেও বলয় শুধু শনির চারপাশেই দেখানো হয়। কেন? কারণটা খুব জটিল নয়। শনির বলয় অন্য যেকোনো গ্রহের চেয়ে পুরু ও আয়তনে বড়। তাই দূর থেকে এই গ্রহের বলয় যতটা স্পষ্ট দেখা যায়, অন্য গ্রহগুলোর বেলায় তা দেখা যায় না। সাধারণ আলোকদুরবিন দিয়েই এ বলয় দেখা যায় পৃথিবীতে বসে। শুধু যে বলয় দেখা যায় তাই না, খেয়াল করলে দেখা যাবে, খোদ গ্রহের চেয়ে বলয়ের আয়তন অনেক বড়।

বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী শনি গ্রহের ব্যাস প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার। অন্যদিকে এর সবগুলো বলয়ের সম্মিলিত ব্যাস প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ বলয়ের আয়তন গ্রহের প্রায় দ্বিগুণ।

শনির বলয় মূলত সাতটি। ইংরেজি অক্ষর দিয়ে এসব বলয়কে চিহ্নিত করা হয়

শনির বলয় মূলত সাতটি। ইংরেজি অক্ষর দিয়ে এসব বলয়কে চিহ্নিত করা হয়। আমরা যদি শনির একদম কাছ থেকে সবচেয়ে দূরের বলয়টি নাম লিখতে চাই, তাহলে এভাবে লিখতে হবে- ডি, সি, বি, এ, এফ, জি ও ই। বলয়গুলো যেটা যখন আবিষ্কার হয়েছে, তখন সেটার নাম ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে সবার আগে বিজ্ঞানীরা ‘এ’ বলয়টিকে আলাদাভাবে দেখতে পেয়েছিলেন, এরপর বি, সি, ডি। সবশেষে আবিষ্কৃত হয়েছে জি বলয়। তাই, দূরত্বের ক্রমের সঙ্গে ইংরেজি অক্ষর ক্রম মেলে না। এসব বলয়ের মাঝে আবার বিশাল বিশাল ফাঁকা স্থান আছে। যেমন এ ও বি বলয়ের মাঝের ফাঁকা অঞ্চলটিকে বলা হয় ক্যাসিনি ডিভিশন। আবার এ ও এফ বলয়ের মাঝের অঞ্চলকে বলা হয় রোশ (Roche) অঞ্চল।

শনির এসব বলয়ের একেকটার আকার একেক রকম। যেমন এফ হচ্ছে সবচেয়ে ছোট বলয়। এর বিস্তার (পুরুত্ব বা ব্যস নয়) মাত্র ৫০০ কিলোমিটার। আবার সবচেয়ে বড় বলয়, ই-বলয়ের বিস্তার প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার। 

বলয়ের মাঝে বরফের উপস্তিতি থাকায় এখান থেকে খুব ভালোভাবে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। এজন্য দূর থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায় শনির বলয়ের অস্তিত্ব।

শনির এসব বলয়ের বিস্তার অনেক বেশি হলেও, পুরুত্ব কিন্তু বেশ কম। প্রতিটি বলয়ের পুরুত্ব মোটামুটি ১০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে।

টেলিস্কোপে কিংবা ছবিতে শনির বলয়কে অনেকটা কঠিন পদার্থের মতো নিরেট লাগে।  বাস্তবে এই বলয় মোটেই নিরেট নয়। অসংখ্য ছোট বড় পাথর ও বরফ কণা দিয়ে তৈরি এটি। এসব কণার আকার নুড়ি পাথরের সমান থেকে ছোটখাটো বাড়িঘরের সমান পর্যন্ত হতে পারে। বলয়ের মাঝে বরফের উপস্তিতি থাকায় এখান থেকে খুব ভালোভাবে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। এজন্য দূর থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায় শনির বলয়ের অস্তিত্ব।

বাস্তবে শনির বলয় নিরেট নয়, অসংখ্য ছোট বড় পাথর ও বরফ কণা দিয়ে তৈরি

একনজরে শনির বলয় ও মাঝের ফাঁকা স্থানগুলোর বিস্তার

ডি বলয়, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার; সি বলয়, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার; বি বলয়, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার; ক্যাসিনি ডিভিশন, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার; এ বলয়, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার; রোশ ডিভিশন, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার; এফ বলয়, বিস্তার প্রায় ৫০০ কিলোমিটার; জি বলয়, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার, ই বলয়, বিস্তার প্রায় ৭,৫০০ কিলোমিটার

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, উইকিপিডিয়া