পৃথিবীর প্রভাবে গরম হয়ে উঠছে চাঁদের একপাশ!

চাঁদের যে দিকটা আমরা পৃথিবী থেকে দেখি, সেটা যে অন্য দিকের চেয়ে আলাদা—এ কথা বিজ্ঞানীদের অনেক আগেই জানা ছিল। তবে সম্প্রতি জানা গেছে, শুধু চাঁদের ওপরের দিকটা নয়, বরং ভেতরটাও অদ্ভুত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। চাঁদের যে পাশটা আমাদের দিকে মুখ করে আছে, সেই দিকটা অন্য পাশের চেয়ে বেশি গরম। কিন্তু কেন এই পার্থক্য, সে প্রশ্নের জবাব খুঁজছিলেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী রায়ান পার্ক।

এই রহস্য ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন নাসার গ্রেইল মিশনের ডেটা। এই মিশনে দুটি নভোযান ২০১১ ও ২০১২ সালে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে। এ সময় চাঁদের মহাকর্ষ বল কীভাবে নভোযান দুটির গতিকে প্রভাবিত করে, সে ডেটাও সংগ্রহ করে নভোযান দুটি। আর সেই তথ্য থেকেই এখন জানা গেছে, চাঁদের ভেতরের গঠন সমান নয়। যেহেতু কোনো বস্তু বা গ্রহের মহাকর্ষ তার ভেতরের গঠন ও বৈশিষ্ট্যকে প্রতিফলিত করে, তাই বিজ্ঞানীরা চাঁদের আকৃতি এবং পৃথিবীর জোয়ার-ভাটার টানে এটি কতটা বিকৃত হয়, তা হিসাব করতে পেরেছেন।

আগের গবেষণাগুলোতে ধারণা করা হয়েছিল, পৃথিবীর আকর্ষণে চাঁদের সামনের দিকটা উল্টো দিকের চেয়ে একটু বেশি বাঁকে। নতুন গবেষণা সেই ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করেছে এবং চাঁদের ভেতরের গঠন সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছে। 

আরও পড়ুন

গবেষকেরা গ্রেইলের ডাটা ব্যবহার করে হিসাব করে দেখেছেন, পৃথিবীর মাহাকর্ষের প্রভাবে চাঁদের আকার কতটা সহজে পরিবর্তিত হতে পারে। রায়ান পার্ক ও তাঁর দল হিসেব করে দেখেছেন, যদি চাঁদের ভেতরটা পুরোপুরি সমান ও ভারসাম্যপূর্ণ হতো, তাহলে যে ধরনের পরিবর্তন দেখা যেত, তার তুলনায় এখনকার পরিবর্তন ৭২ শতাংশ বেশি। বিজ্ঞানীরা এই অস্বাভাবিকতার বিভিন্ন কারণ খতিয়ে দেখেছেন। যেমন চাঁদের রাসায়নিক গঠন। কিন্তু যে মডেলটি সবচেয়ে ভালোভাবে এই পরিমাপের সঙ্গে মিলেছে, সেটিতে চাঁদের সামনের অংশের ভেতরের দিকটা দূরের অংশের ভেতরের দিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ। অর্থাৎ ভেতরের তাপমাত্রা এক পাশে বেশি।

চাঁদের অতীত আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ও এর পৃষ্ঠের নিচে ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় উপাদান কোথায় কতটা ছড়ানো, সেই তথ্যের সঙ্গেও এই মডেল মিলে যায়।

চাঁদের অতীত আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ ও এর পৃষ্ঠের নিচে ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় উপাদান কোথায় কতটা ছড়ানো, সেই তথ্যের সঙ্গেও এই মডেল মিলে যায়। তবে চাঁদের ভেতরের গঠন ঠিক কীভাবে এমন অসম হলো, তার উত্তর এখনো সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। হতে পারে অনেক দিন আগে চাঁদের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তু। সেই ধাক্কাতেই হয়তো ভেতরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা এখন তাকিয়ে আছেন ‘মুনকোয়েক’ বা চাঁদের ভূকম্পনের দিকে। ২০২৬ সালে নাসা ‘ফারসাইড সিসমিক স্যুট’ নামে একটি যন্ত্র পাঠাতে যাচ্ছে চাঁদে। এই যন্ত্রের সাহায্যে চাঁদের গভীরের শব্দ শোনা যাবে। সেই শব্দ থেকেই বেরিয়ে আসবে চাঁদের ভেতরের অজানা রহস্য। চাঁদের সামনের দিকটা কেন বেশি উষ্ণ, হয়তো তাও সুস্পষ্টভাবে জানা যাবে এই মিশনে।

সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট

আরও পড়ুন