হাবলের ৩৫ বছর পূর্তি, দেখে নিন মহাবিশ্বের নতুন ৫টি ছবি

১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল। সেদিন মহাকাশে যাত্রা করেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ইসার এই টেলিস্কোপ—হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। সে হিসেবে চলতি বছর ২৪ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার এ টেলিস্কোপের ৩৫ বছর পূর্ণ হলো। এ সময়ের মধ্যে টেলিস্কোপটি ১৩.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পথ ঘুরে ১৬ লাখের বেশি ছবি তুলেছে। সেসব ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা ২১ হাজারের বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। এই লেখায় হাবলের সাম্প্রতিক তোলা ৫টি ছবি দেখে নিন।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপের ৩৫ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল মহাকাশে যাত্রা করেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি ইসার এই টেলিস্কোপ। এরপর কেটে গেছে তিন দশকেরও বেশি সময়। আর এতদিনে হাবল মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাই বদলে দিয়েছে। 

এতদিনে হাবল ১৬ লাখের বেশি ছবি তুলেছে, ১৩.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পথ ঘুরেছে। আর পৃথিবীতে এই টেলিস্কোপকে ঘিরে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ২১ হাজার বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র। পাশাপাশি হাবলই প্রথম মহাকাশ থেকে একটা গ্রহাণুকে ভাঙতে দেখেছে। মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি যে একদিন ধাক্কা খাবে, তাও আমাদের প্রথম নিশ্চিত করেছে হাবল। এমন আরও কত কী যে এই টেলিস্কোপ আবিষ্কার করেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।

তাই আজকের এই বিশেষ দিনে হাবলের চোখ ধাঁধানো পাঁচটি নতুন ছবি দেখেন নিন।

১. ঈগল নেবুলার মহাজাগতিক স্তম্ভ

ঈগল নেবুলার কেতাবি নাম মেসিয়ার ১৬। এই নেবুলার প্রথম ছবি হাবল পাঠিয়েছিল ২০০৫ সালে। সেবার হাবলের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সে ছবি সাধারণ মানুষের জন্য প্রকাশ করেছিল নাসা। আর এবছর ৩৫ বছর পূর্তিতে হাবলের নতুন ইমেজ প্রসেসিং টেকনিক ব্যবহার করে এই ছবি প্রকাশ করেছে। ইসা বলছে, ছবিতে ৯.৫ আলোকবর্ষ লম্বা ঠান্ডা গ্যাস ও ধূলিকণার তৈরি স্তম্ভ দেখা যাচ্ছে। কালো ধুলোর মেঘে ঘেরা নেবুলার উজ্জ্বল ধারটা দেখতে অনেকটা ডানাওয়ালা ঈগলের মতো লাগে। সে জন্যই এই নেবুলার নাম রাখা হয়েছে ঈগল। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৭ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। হাবল বহুবার এই নেবুলার ছবি পাঠিয়েছে। নতুন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপও এর কয়েকটা দুর্দান্ত ছবি পাঠিয়েছিল।

২. তিমির পেটে স্কুইড গ্যালাক্সি

মেসিয়ার ৭৭ নামে এই সর্পিলাকার গ্যালাক্সিটিকে অনেকেই স্কুইড গ্যালাক্সি নামে চেনেন। কারণ, এর চারপাশে বিস্তৃত গ্যাস ও ধুলোর ফিতার মতো অংশগুলো অনেকটা স্কুইড বা অক্টোপাসের মতো দেখায়। এই গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে ৪৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে কেটাস নক্ষত্রপুঞ্জে আছে। আগেও হাবল এই গ্যালাক্সির ছবি দিয়েছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু এবারের ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে আধুনিক ফিল্টার ও নতুন প্রসেসিং সিস্টেম। ফলে এখন অনেক বেশি বিস্তারিতভাবে দেখা যাচ্ছে এর গঠন ও সৌন্দর্য। এই ছবিটি তোলা হয়েছে চলতি বছর ১৮ এপ্রিল।

৩. তারাভরা গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৪৬

একসঙ্গে ইনফ্রারেড, অপটিক্যাল আর আলট্রাভায়োলেট আলো ব্যবহার করে হাবলের তোলা প্রথম ছবি এটি। ছবিটি এনজিসি ৩৪৬ নামে এক ঝাঁক নতুন নক্ষত্রের। এখানে প্রায় আড়াই হাজার সদ্য জন্মানো তারা আছে। অনেক তারা আমাদের সূর্যের চেয়েও বড় এবং সেগুলো থেকে ছড়ানো নীল আলো দারুণ উজ্জ্বল। ক্লাস্টারটি আছে স্মল ম্যাগেলানিক ক্লাউডে। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লাখ আলোকবর্ষ দূরে টুকানা নক্ষত্রমন্ডলে অবস্থিত। এই গ্যালাক্সিতে ভারী উপাদানের পরিমাণ মিল্কিওয়ের তুলনায় কম। মহাবিশ্বের একদম শুরুর দিকে এমন অবস্থাই ছিল।

৪. মহাজাগতিক গিটার

মহাকাশে অনেক গ্যালাক্সি এলোমেলোভাবে ভেসে বেড়ালেও অনেক সময় মহাকর্ষের টানে একে অপরকে আকর্ষণ করে একসঙ্গে থাকে। এআরপি ১০৫ তেমনই এক জোড়া গ্যালাক্সির মিলন। সর্পিল গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৫৬১এ এবং উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৫৬১বি মিলে তৈরি হয়েছে এই বিশাল তারার লেজ। এই অঞ্চলে নতুন নক্ষত্র তৈরি হচ্ছে। দুই গ্যালাক্সির ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া অংশ থেকে এই অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এই অঞ্চল প্রায় ৩ লাখ ৬২ হাজার আলোকবর্ষ লম্বা। এজন্য এর নাম রাখা হয়েছে মহাজাগতিক গিটার। 

৫. সোমব্রেরো গ্যালাক্সি

এই গ্যালাক্সিটি পৃথিবী থেকে ৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ভার্গো নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। এর মাঝখানের উঁচু ফোলা অংশ আর চওড়া ডিস্ক দেখতে অনেকটা ম্যাক্সিকান টুপি সোমব্রেরোর গোল মুকুট ও চওড়া প্রান্তের মতো। হাবল অনেকবার এই গ্যালাক্সির ছবি তুলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছবিটি ২০০৩ সালে তোলা। কিন্তু এখনকার ছবিতে ডিস্কের গঠন, পেছনের অনেক নক্ষত্র ও গ্যালাক্সিও আরও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। গ্যালাক্সিটি এখন আর বেশি নক্ষত্র তৈরি করতে পারছে না। তবে এর কেন্দ্রে আছে একটা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। সেটা আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোলের চেয়ে ২ হাজার গুণ বড়!

সূত্র: পপুলার সায়েন্স