চলতি মাসেই সোলার সেইল বা সৌরপাল প্রযুক্তি সম্পন্ন নভোযান উৎক্ষেপণ করতে চলেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। স্পেসক্রাফটির নাম অ্যাডভান্সড কম্পোজিট সোলার সেল সিস্টেম (এসিএস ৩)। এটি নিউজিল্যান্ডের রকেট ল্যাবের লঞ্চ কমপ্লেক্স ১ থেকে শিগগিরই উৎক্ষেপণ করা হবে।
নাসার অন্যান্য নভোযান থেকে এটি আলাদা। সাধারণত স্পেসক্রাফটগুলো চলে জ্বালানির সাহায্যে। কিন্তু এটি চলবে সৌরশক্তি ব্যবহার করে। অনেকটা পালতোলা নৌকার মতো। বাতাসের বেগ কাজে লাগিয়ে পালতোলা নৌকা যেমন সামনের দিকে এগিয়ে যায়, এই নভোযানটিও তেমনি সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাবে। সৌররশ্মির ওপর নির্ভর করে নভোযানটি কক্ষপথও বদলাতে পারবে।
যেহেতু জ্বালানি নিয়ে চিন্তা নেই, তাই এ ধরনের স্পেসক্রাফটের স্থায়িত্বকাল হবে অনেক বেশি। অদূর ভবিষ্যতেও সৌরশক্তি শেষ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। অন্তত আরও ৫০০ কোটি বছর জ্বলবে সূর্য। ফলে এই সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বছরের পর বছর এ প্রযুক্তির নভোযান মহাকাশে ভাসিয়ে রাখা যাবে।
ভবিষ্যতে মঙ্গল কিংবা আরও দূরের গ্রহ বা উপগ্রহে অভিযান চালানো যাবে এই প্রযুক্তির সাহায্যে। সূর্য থেকে দূরত্ব বাড়লে সৌরশক্তি যদিও দুর্বল হয়ে যায়, কিন্তু শেষ হয় না। সেই শক্তিই কাজে লাগিয়ে দেখবে নাসা।
এর আগেও এ ধরনের মহাকাশযান সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। যেমন ২০১০ সালে জাপানের ইকারোস নভোযানে সৌরপাল লাগিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। নভোযানটি প্রমাণ করে দেখিয়েছে, সূর্য থেকে ফোটন আকারে বেরিয়ে আসা আলোর কণা মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যায়। ২০১৯ সালেও সৌরপাল প্রযুক্তি সম্পন্ন ‘লাইটসেল ২’ নভোযান সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয়। ৩ বছরের বেশি সময় এটি মহাকাশে চালু ছিল।
অন্যান্য নভোযানের চেয়ে সৌরপাল প্রযুক্তি সম্পন্ন নভোযানে কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, এ ধরনের নভোযানের জ্বালানি কখনো শেষ হয় না। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে প্রচলিত নভোযানের চেয়ে এই নতুন প্রযুক্তির নভোযানের ওজন অনেক কম থাকে। ফলে এই দুই সুবিধার কারণে ভবিষ্যতে আরও কম খরচে মহাকাশে মিশন সম্পাদন করা যাবে। সে মিশন হয়ত আরও বেশিদিন স্থায়ী হবে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সেগুলো আগে সমাধান করা জরুরি।
এ ধরনের নভোযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বুম বা পাল। এগুলো যত হালকা ও শক্তিশালী হবে, মহাকাশযান হবে তত বেশি কার্যকর। সাধারণ মহাকাশযানের তুলনায় সৌরপাল প্রযুক্তি সম্পন্ন নভোযান অনেক হালকা। তবে এর বুমের ওজন এতদিন বিজ্ঞানীদের কাছে বাধা ছিল। নতুন এই ‘এসিএস ৩’ নভোযানে সে সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এর বুমগুলো তৈরি করা হয়েছে কার্বন ফাইবার ও নমনীয় পলিমার দিয়ে।
আরও একটা সীমাবদ্ধতা হলো, সঠিক সময় এই বুমগুলো খোলা। এখন ভাঁজ করে এগুলো উৎক্ষেপণ করা হবে। থাকবে পৃথিবী থেকে ১ হাজার কিলোমিটার ওপরের কক্ষপথে। সেখানে পৌঁছানোর পর ধীরে ধীরে খুলতে থাকবে এ ভাঁজগুলো। সবগুলো বুম বা পাল খোলা হলে এটি প্রায় ৮০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে। এতে সময় লাগবে প্রায় ২৫ মিনিট। ২০১৯ সালে উৎক্ষেপিত ‘লাইটসেল ২’-এর চেয়ে এটি অনেক বড়। ‘লাইটসেল ২’ নভোযানের পালের ক্ষেত্রফল ছিল ৩২ বর্গমিটার।
ক্ষুদ্র পরিসরের এ পরীক্ষা সফল হলে ভবিষ্যতে আরও বড় প্রোগ্রাম পরিচালনা করবে নাসা। ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, এ মিশন সফল হলে ভবিষ্যতে ৫০০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট সৌরপাল যুক্ত করে যা একটা বাস্কেটবল কোর্টের সমান। সেই সাফল্যের ওপর নির্ভর করবে ২ হাজার বর্গমিটার ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট সৌরপাল যুক্ত করা হবে কি না। এটি হবে একটি ফুটবল মাঠের অর্ধেকের সমান।