নাসার আর্টেমিস অ্যাকর্ডসে স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ

৫৪তম দেশ হিসেবে আর্টেমিস অ্যাকর্ডসে যোগ দিল বাংলাদেশ। ৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার এবং মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন প্রতিরক্ষাসচিব আশরাফ উদ্দিন। মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য দেন নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক জ্যানেট পেট্রো।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্টেমিস প্রকল্পের সদস্য হলো। এ প্রকল্পের আওতায় নাসা ৫০ বছর পর আবার চাঁদে মানুষ পাঠাতে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহেও মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

জ্যানেট পেট্রো তাঁর বিবৃতিতে বাংলাদেশকে সঙ্গে পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এ অ্যাকর্ডসে স্বাক্ষর করায় আমরা আনন্দিত। মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। আমরা নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীলভাবে চাঁদ ও আরও দূরে অভিযান চালাতে চাই। একসঙ্গে কাজ করতে আমরা খুবই আগ্রহী। পরস্পর থেকে আমরা শিখতে চাই, মানবজাতির মহাকাশ অনুসন্ধানের নতুন অধ্যায়ে চাই দেশটির দারুণ প্রতিভা ও দূরদৃষ্টির প্রয়োগ।’

২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসেছিলেন নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা। সে সময় তিনি দেশের তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডসে বাংলাদেশের এই অংশগ্রহণ আমাদের সঙ্গে নাসা ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্ক আরও উন্নত করবে। এই অ্যাকর্ডসে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে বাংলাদেশ মুক্ত, দায়িত্বশীল ও শান্তিপূর্ণ মহাকাশ অনুসন্ধানের পথে এগিয়ে গেল।’

এর আগে, ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসেছিলেন নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা। সে সময় তিনি দেশের তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক জায়গায় বক্তব্যও দেন। এসব বক্তব্যে তিনি আর্টেমিস অ্যাকর্ডসের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। জানা যায়, এ অ্যাকর্ডসে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি আলোচনা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ এ অ্যাকর্ডসে স্বাক্ষর করল।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এটি খুবই আশাজনক। মহাকাশ অনুসন্ধান ও গবেষণা একদিকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল, অন্যদিকে এটি খুবই জরুরি। এ ধরনের গবেষণায় অংশ না নিলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনো বড় পরিসরে এ ধরনের গবেষণা বা মহাকাশ অনুসন্ধান করা কঠিন। শুধু তা–ই নয়, আবহাওয়া বার্তা, নেভিগেশন, ভূতত্ত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই স্যাটেলাইট প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, নাসা এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। তাই এই অ্যাকর্ডস আমাদের জন্য বড় একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিল। শুধু একাডেমিক দিক থেকে নয়, ব্যবহারিক অনেক ক্ষেত্রেও নাসার সঙ্গে আমাদের এ পথচলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

শুধু নাসাই নয়, অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সঙ্গেও এ ধরনের যোগাযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘নাসা তো ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা বা জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার সঙ্গে মিলেও কাজ করে। আমাদেরও এ ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও গড়ে তোলা উচিত। এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জ্ঞানবিজ্ঞান-গবেষণায় অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।’

এ অ্যাকর্ডসের অংশ হিসেবেই আর্টেমিস প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীন ২০২৭ সালে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করবে আর্টেমিস ৩

২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর মহাকাশে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশ। এটিই আর্টেমিস অ্যাকর্ডস।

এ অ্যাকর্ডসের অংশ হিসেবেই আর্টেমিস প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীন আর্টেমিস ১ নভোযান ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের প্যাড ৩৯বি থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর পর নতুন করে চন্দ্রাভিযান শুরু করে মানুষ। সে বছরের ১১ ডিসেম্বর ফিরে আসে এ নভোযান। ২০২৪ সালে আর্টেমিস ২ উৎক্ষেপণের কথা ছিল, এখন তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ২০২৭ সালে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করবে এ নভোযান। আর্টেমিস ৩-এর মাধ্যমে আবার চাঁদে নামার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। ২০৪০ সালের মধ্যে মঙ্গল জয়েরও চিন্তা করছে।

সূত্র: নাসা