মহাকাশ
গ্যালাক্সি গবেষণায় জেমস ওয়েব দুরবিন
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের বড় গবেষণার বিষয় হতে যাচ্ছে গ্যালাক্সি। অর্থাৎ গ্যালাক্সির জন্ম–মৃত্যু, বেড়ে ওঠা ইত্যাদি কীভাবে, কী কী উপায়ে ঘটে—জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ সেসবের তত্ত্ব–তালাশ কীভাবে করবে? বহুদূরের গ্যালাক্সিদের সম্পর্কেই–বা কীভাবে জানাবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ?
নতুন নভোদুরবিন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে তোলা ছবিগুলো ইতিমধ্যে চমকে দিয়েছে সবাইকে। এমন নয় যে নতুন কিছু আবিষ্কার করা গেছে এই ছবিগুলো থেকে। এর জন্য আরও সময় চাই। এই ছবিগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার পরই মিলবে নতুন তথ্য। তবে নতুন আবিষ্কারের অনেক আভাস পাওয়া গেছে এতে। সেদিক থেকে দেখলে ছবিগুলোকে আমরা টিজার বলতে পারি, যাতে বিজ্ঞানীদের চমকের সঙ্গে মিশে রয়েছে স্বস্তির নিশ্বাস। যে প্রত্যাশা নিয়ে কয়েক দশক ধরে এই দুরবিন বানানো হয়েছিল, সেটা পূরণ হবে বলেই এই স্বস্তি।
অনেকের হয়তো মনে থাকবে, ১৯৮৯ সালে হাবল নভোদুরবিনে ‘প্রথম আলো’র ছবি তোলার (কোনো দুরবিনে তোলা প্রথম ছবিকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘ফার্স্ট লাইট’) ঘোষণার পর সবাই কেমন হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, সেই দুরবিনের আয়নাগুলো ঠিক করে বানানো হয়নি, ফলে ছবিগুলো আবছা এসেছিল। পরে অবশ্য একদল নভোচারী গিয়ে হাতেনাতে নতুন একটি লেন্স বসিয়েছিলেন। দুরবিনের চোখে চশমা পরানোর মতো ব্যাপার। তারপর পাওয়া গিয়েছিল পরিষ্কার ছবি।
সেই ঘটনার কথা ভেবে অনেকেরই আশঙ্কা ছিল হয়তো মনে। সেই দুর্ভাবনা লাঘব হয়েছে প্রথম ছবিগুলো দেখে। তাই বিজ্ঞানীরা এবার আস্তিন গুটিয়ে নেমে পড়েছেন নতুন দুরবিনের সাহায্যে গবেষণার কথা ভাবতে। একটা কথা অবশ্য পরিষ্কার। নতুন যন্ত্রের তাৎপর্য দুই রকম। প্রথমত, আগে যা জানা গেছে, সেই বিষয়ে আরও বিশদ করে জানা যাবে। নতুন তথ্যের সাহায্যে আগের তত্ত্বগুলো যাচাই করা যাবে। কিছু তত্ত্ব হয়তো বাতিল হবে। সেটাও ভালো। কারণ, ‘নেতি নেতি’ করেই এগিয়ে যায় বিজ্ঞান। দ্বিতীয়ত, একেবারে অপ্রত্যাশিত নতুন কিছু তথ্য আবিষ্কারেরও সম্ভাবনা প্রচুর। কারণ, মহাবিশ্বের অনেক কিছু এখনো আমাদের অজানা। তাই যে দুরবিনের নজর বহু দূর গিয়ে পড়বে, আগের থেকে অনেক পরিষ্কার দেখা যাবে যার সাহায্যে, সেই যন্ত্রে যে একেবারে আনকোরা কিছু খবর পাওয়া যাবে না, সেটা বিশ্বাস হয় না। সব নতুন দুরবিনের ক্ষেত্রেই এটা ঘটেছে। হাবলের ক্ষেত্রেও অনেকবার হয়েছে। যেমন বছরখানেক আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে তাকাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন কয়েকটি কৃষ্ণগহ্বর। তাঁরা ভেবেছিলেন, বেশি হলে একটির চিহ্ন পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মেঘ না চাইতেই জলের মতো পেয়ে গিয়েছিলেন অনেকগুলো কৃষ্ণগহ্বরের চিহ্ন। এ ধরনের তথ্য আগের সব ধারণা পাল্টে দিতে পারে। নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে বিজ্ঞানীদের। তাই জেমস ওয়েব দুরবিন থেকে এ ধরনের কী তথ্য পাওয়া যাবে, তার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু সেটা তো আর আগে থেকে বলা যায় না, কখন পাওয়া যাবে। তাই বিজ্ঞানীরা আগের ধারণা অনুযায়ীই প্রথমে চলতে শুরু করেন যেকোনো নতুন যন্ত্রের ক্ষেত্রে। এখানেও তা–ই। বিশেষ করে গ্যালাক্সির বিবর্তন নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন মাথায় রেখেই জেমস ওয়েব দুরবিনের ডিজাইন করা হয়েছিল। সেগুলো নিয়ে আপাতত গবেষণা শুরু হবে। একঝলক দেখে নেওয়া যাক সেই প্রশ্নগুলো কী। অবশ্য অন্য বিষয়গুলো, যেমন নক্ষত্রের জন্ম, এক্সোপ্ল্যানেট ইত্যাদি নিয়েও গবেষণা হবে। তবে সেগুলো নিয়ে এই স্বল্পপরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। শুধু গ্যালাক্সি গবেষণার দিকেই নজর দেওয়া যাক।
আমরা যে গ্যালাক্সির বাসিন্দা (যার নাম ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা), সেটির গঠনের দিকে একবার তাকানো যাক। যদি আমরা গ্যালাক্সিটিকে বাইরে থেকে দেখতে পেতাম তাহলে দেখতাম, এর মধ্যে একটি চাকতি রয়েছে, যেটি গ্যাস, ধূলিকণা ও নক্ষত্রে ভরা। চাকতির মধ্যে কিছু কুণ্ডলী পাকানো চিহ্নও রয়েছে। এসব কুণ্ডলী বরাবর দেখা যায় নীল, অর্থাৎ অল্প বয়সী নক্ষত্রের সমাবেশ। আমাদের সৌরজগৎ এই চাকতির বাইরের দিকে এক কক্ষপথে ঘুরছে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে। কেন্দ্রের দিকে একটি গোলাকার অংশ রয়েছে, যেখানে বয়স্ক, লাল নক্ষত্রের বাস। এই সবকিছু ঘিরে আছে অদৃশ্য ভরবিশিষ্ট একটি গোলাকার অঞ্চল, যার বিস্তৃতি চাকতির তুলনায় অনেক বেশি, ১০ গুণের বেশি। সেখানে কিছু পরিমাণ গ্যাস রয়েছে, যার চিহ্ন পাওয়া গেছে কিছু সাম্প্রতিক গবেষণায়।
মহাবিশ্বে এ ধরনের চক্রাকার গ্যালাক্সি আরও অনেক রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি এ রকমের। তবে অন্য ধরনের গ্যালাক্সিও আছে। চাকতিবিহীন প্রায় গোলাকার গ্যালাক্সিও দেখা যায়। এগুলোতে লাল (অর্থাৎ বুড়োটে) নক্ষত্রের প্রাধান্য। অন্যদিকে চাকতিওয়ালা গ্যালাক্সিগুলোর রং প্রধানত নীল। এগুলোতেই নতুন নক্ষত্রের জন্ম হতে দেখা যায়। তুলনায় গোলাকার গ্যালাক্সিগুলো বলা যায় বার্ধক্যে ধুঁকছে।
প্রশ্ন হলো, এই দুই ধরনের গ্যালাক্সি কেন ও কীভাবে তৈরি হলো? সব গ্যালাক্সি একধরনের নয় কেন? গ্যালাক্সি জন্ম থেকে একভাবেই থাকে, নাকি এদের রূপান্তর হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীদের এই মুহূর্তে যা ধারণা সেটা হলো, গ্যালাক্সিগুলো পরিবর্তনশীল। কারণ, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও অন্যান্য দুরবিনে পাওয়া তথ্য বলে দিচ্ছে, মহাবিশ্বের অতীতে চাকতিবিহীন ও চাকতিওয়ালা গ্যালাক্সির অনুপাত অন্য রকম ছিল। বর্তমান মহাবিশ্বে চাকতিওয়ালা গ্যালাক্সি, অর্থাৎ আমাদের মতো গ্যালাক্সির সংখ্যা তুলনায় কম। কিন্তু আমরা যদি এক হাজার কোটি বছর পিছিয়ে যাই তাহলে দেখব, সংখ্যার অনুপাত উল্টে গেছে। তখন ছিল আমাদের মতো নীল রঙের চাকতিওয়ালা গ্যালাক্সির দাপট।
কোনো এক কারণে মহাবিশ্বে নক্ষত্রের জন্মের উৎসাহ কমে গেছে গত হাজার কোটি বছরে। কেন সেটা হয়েছে, তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। একটা কারণ হতে পারে, দুটি চাকতিওয়ালা গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ হলে চাকতি ধ্বংস হয়ে যায়। তখন সেই জায়গায় দুইয়ে মিলে একটি গোলাকার গ্যালাক্সি তৈরি করতে পারে। প্রসঙ্গত, আমাদের গ্যালাক্সি ছায়াপথ ও অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি পরস্পরের দিকে ধেয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতে এদের মধ্যে সংঘর্ষ হবে। এ ধরনের ঘটনার জন্য চাকতিওয়ালা গ্যালাক্সিগুলো ধীরে ধীরে লোপ পেয়েছে হয়তো।
তবে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। সেগুলো নতুন গবেষণায় খতিয়ে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। এই দুরবিনের সাহায্যে যখন অতীতের গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র জন্ম নেওয়ার অঞ্চলগুলোকে বিশদভাবে দেখা হবে, তখন ধরা পড়তে পারে সেখানে কিসের বাধা। নক্ষত্রের জন্ম নেওয়ার জন্য চাই খুব ঠান্ডা গ্যাস। তা–ও প্রচুর পরিমাণে। এই কাঁচামালের অভাব দেখা দিয়েছে কি মহাবিশ্বের আধুনিক যুগে, যার জন্য নক্ষত্রের জন্মে ভাটা পড়েছে? নাকি ভারী নক্ষত্রের বিস্ফোরণে গ্যাস ছিটকে পড়ার জন্য নক্ষত্রের জন্মে বাধা পড়েছে?
জেমস ওয়েব দুরবিনের আসল কেরামতি ধরা পড়বে আরও আগেকার মহাবিশ্বের অবস্থা সম্বন্ধে জানার গবেষণায়। বিশেষ করে যখন মহাবিশ্বের বয়স ছিল ৫০ কোটি বছর বা তারও কম। জেমস ওয়েব দুরবিনে তোলা একটি ছবি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাতে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরের আগেকার গ্যালাক্সির রূপ ধরা পড়েছে। এটা একটা অনুমান ছিল। এখনো পুরোপুরি বিশ্লেষণ হয়নি ছবিটির। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের বয়স ৫০ কোটি বছর পার হওয়ার আগেই প্রথম প্রজন্মের গ্যালাক্সির জন্ম হয়েছিল। এটি একটি তাত্ত্বিক ধারণা। হিসাব করে পাওয়া গেছে এই খবর। তবে শুধু তাত্ত্বিক বললে ভুল বলা হয়। হাবল নভোদুরবিনেই এর আভাস পাওয়া গিয়েছিল।
একটি বিশেষ গ্যালাক্সির উদাহরণ দেওয়া যাক। হাবল নভোদুরবিনে তোলা ছবিতে ২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা এর একটি আবছা আদল দেখতে পেয়েছিলেন। তার বর্ণালি পরীক্ষা করে জানা গেছে, এই গ্যালাক্সি থেকে যখন আলো বেরিয়েছিল (এবং যা এখন এসে আমাদের দুরবিনে পৌঁছেছে), তখন মহাবিশ্বের বয়স ছিল মাত্র ৪২ কোটি বছর। আপাতত এর নাম দেওয়া হয়েছে GN-z11 (উইকিপিডিয়ায় এই জ্যোতিষ্কের বিশদ বিবরণ পাওয়া যাবে)। আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যালাক্সির মধ্যে এটিই প্রাচীনতম। মাত্র একটি নমুনাই পাওয়া গেছে সেই সময়কার গ্যালাক্সির। আর তা–ও আবছা দেখাচ্ছে হাবলের যন্ত্রে। জেমস ওয়েব দুরবিনে এ রকম আরও অনেক গ্যালাক্সির ছবি ধরা পড়বে আরও পরিষ্কারভাবে।
গ্যালাক্সিটি অদ্ভুত বললেও কম বলা হয়। এর অন্তর্বর্তী নক্ষত্রের আলো পরীক্ষা করে জানা গেছে, তাদের বয়স প্রায় ৪ কোটি বছর। ৪২ থেকে ৪ বিয়োগ দিলে পাই ৩৮; অর্থাৎ মহাবিশ্বের জন্মের ৩৮ কোটি বছরের মধ্যেই গ্যালাক্সিটির জন্ম হয়েছিল। আরও জানা গেছে, এর মধ্যেই তড়িঘড়ি করে প্রায় ১০০ কোটি নক্ষত্র জড়ো করে ফেলেছিল সেটি! এবং সেই মুহূর্তে তার মধ্যে নক্ষত্র সৃষ্টির হার আমাদের ছায়াপথের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ছিল। সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো, গ্যালাক্সিটির মধ্যে ধুলাবালুর চিহ্নমাত্র নেই। অথচ নক্ষত্রের জন্মের সঙ্গে ধুলার সম্পর্ক খুব গভীর। নক্ষত্র জন্ম নিলে তার চারদিকে ধূলিকণা তৈরি হবেই। সেগুলো কোথায় গেল?
এসব প্রশ্ন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আশার আলো জাগিয়েছে জেমস ওয়েব দুরবিনের প্রথম ছবিগুলো। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে নতুন দুরবিনের যন্ত্রপাতি প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে। সুতরাং মহাবিশ্বের সেই ভোরবেলায়, যখন প্রথম প্রজন্মের গ্যালাক্সির আলো ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে, তখনকার অবস্থা আরও বিশদভাবে জানা যাবে এবার। হাবলে তোলা GN-z11 গ্যালাক্সির আবছা ছবির জায়গায় পাওয়া যাবে স্পষ্ট ছবি। পাওয়া যাবে তার মতো আরও অনেক গ্যালাক্সির খবর। তখনো কি চাকতি ছিল গ্যালাক্সিগুলোর? নাকি এই চাকতির ব্যাপারটা গ্যালাক্সির বিবর্তনের ইতিহাসে অর্বাচীন? তা–ই যদি হয়, সেটা মহাবিশ্বের ইতিহাসে কোন যুগে হয়েছিল এবং কীভাবে? এই খবরগুলো পেলে গ্যালাক্সির বিবর্তনের ধারণায় অনেক ফাঁকফোকর বোজানো যাবে।
গ্যালাক্সির বিবর্তনে আরেকটি বড় প্রশ্ন জাগে কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে। গত কয়েক দশকের গবেষণায় এক মজাদার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বর। গ্যালাক্সিজুড়ে এমনিতেই অল্প ভরের বেশ কিছু কৃষ্ণগহ্বর থাকে। তবে এখানে বলা হচ্ছে, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বসে থাকা রাক্ষসটির কথা। সবচেয়ে চমকে দেওয়ার মতো খবর হলো, এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর এবং পুরো গ্যালাক্সির ভরের মধ্যে একটা বিশেষ অনুপাত রয়েছে। ছোট গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বরের ভর তুলনায় কম। যত বড় গ্যালাক্সি, তার অন্দরমহলে বসে থাকা রাক্ষসটির ভরও তত বেশি।
এই নিয়ম নিশ্চয়ই কাকতালীয় নয়! প্রশ্ন হলো, এর কারণটি কী? বিজ্ঞানীদের মতে, এর সঙ্গে গ্যালাক্সির বিবর্তনের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। তাঁদের মতে, গ্যালাক্সির আয়তন ধীরে ধীরে বড় হয়। কখনো অন্য গ্যালাক্সির সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুবাদে কখনো বাইরের পদার্থ টেনে এনে বড় হয় গ্যালাক্সি। তখন তার কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরও তাল মিলিয়ে বড় হতে থাকে। ঠিক কীভাবে এটা হয়, সেটা এখনো পুরোপুরি জানা নেই। তবে এ নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। জেমস ওয়েব দুরবিনের বদৌলতে মহাবিশ্বের অতীতের খবর এই ধারণার ওপর আলোকপাত করবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। অতীতের গ্যালাক্সির মধ্যেও কি এই অনুপাত বজায় ছিল? নাকি সেটাও ধীরে ধীরে বদলেছে?
গ্যালাক্সির বিবর্তন নিয়ে এ রকম অনেক প্রশ্ন ঘুরছে বিজ্ঞানীদের মাথায়। যেহেতু এসব প্রশ্নের সমাধান করতে গেলে সুদূর অতীতের গ্যালাক্সির চেহারা এবং বিশদ বিবরণ জানা আবশ্যক, তাই জেমস ওয়েব দুরবিন ব্যবহার করার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা। আগামী ২০ বছর এই দুরবিন কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাধারণত হিসাবটা কম করেই বলা হয়, যাতে পরে নিরাশ না হতে হয়। হয়তো এর বেশি সময় ধরেই কর্মক্ষম থাকবে যন্ত্রপাতিগুলো। কে ভেবেছিল, হাবল নভোদুরবিন প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করে যাবে? তার অর্থ হলো, আগামী তিন-চার দশক জ্যোতির্বিজ্ঞানে একের পর এক চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পাওয়া যাবে। খুলে যাবে মহাবিশ্বের নতুন একেকটি জানালা।
লেখক: গবেষক, রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বেঙ্গালুরু, ভারত