বেণু গ্রহাণু কি ধ্বংসের প্রতীক

বেণু গ্রহাণুছবি: নাসা

ব্যতিক্রমী গ্রহাণু বেণু। কার্বনের তৈরি। ভেসে বেড়াচ্ছে মহাকাশে। ১৯৯৯ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম এর সন্ধান পান। ‘বেণু’ নাম দেওয়া হয়েছে প্রাচীন মিসরীয় এক পাখির নামে। গ্রহাণুটি দেখতে কুচকুচে কালো। এর ওপর আলো ফেললে মাত্র ৪ শতাংশ প্রতিফলিত হয়। সম্ভাব্য বিপজ্জনক মহাজাগতিক বস্তু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে একে।

মহাকাশে বিভিন্ন আকৃতির গ্রহাণু রয়েছে। ছোট পাথর থেকে শুরু করে বড় বামন গ্রহ পর্যন্ত। এসব গ্রহাণু মাঝেমধ্যে উড়ে যায় পৃথিবীর পাশ দিয়ে। বেণু গ্রহাণুরও কি সেই সম্ভাবনা আছে?

২২ শতকের শেষ দিকে বেণু গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত  হানতে পারে। এটা একটা আশংকা। তবে শুধু আশংকাই। ১ হাজার ৭৫০ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনা আছে পৃথিবীকে আঘাত করার। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুর হাত থেকে বাঁচার পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছেন। কোনো গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকলে নভোযান পাঠিয়ে গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়া যাবে। ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাকশন টেস্ট বা ডার্ট নামে এই পদ্ধতির সফল পরীক্ষাও হয়ে গেছে ২০২২ সালে।

আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এক ভয়ংকর গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল। তখন অবশ্য মানুষ ছিল না। পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত ডাইনোসরেরা।

মহাকাশে এরকম গ্রহাণু আরও অনেক থাকলেও এই গ্রহাণু বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করেছে। কেন? কারণ, এতে অনেক দামি মৌল রয়েছে। গ্রহাণুটিকে নিরাপদে পৃথিবীতে নিয়ে আসতে পারলে অনেক মৌলের অভাব কমবে। ইতিমধ্যে এই গ্রহাণু থেকে নমুণা সংগ্রহ করেছে নাসার ওসাইরিস-রেক্স নভোযান। সাত বছরের অভিযানের পর বেণু গ্রহাণু থেকে ২৫০ গ্রাম পাথর ও ধূলোবালু নিয়ে ফিরেছে নভোযানটি। সেই নমুনায় পাওয়া গেছে পানি ও কার্বন। এই নমুনা আরও বিশ্লেষণ করলে হয়তো বোঝা যাবে পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, কোত্থেকে এল পানি। হয়তো জানা যাবে আরও অনেক কিছু। সব মিলে গ্রহাণুটি দারুণ সম্ভাবনাময়।

বেণু গ্রহাণুর নমুনা
ছবি: নাসা

তবে পৃথিবীতে সত্যি কোনো গ্রহাণু আছড়ে পরলে হতে পারে মহাবিপদ। আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এক ভয়ংকর গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল। তখন অবশ্য মানুষ ছিল না। পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াত ডাইনোসরেরা। তখন প্রায় ১০ থেকে ২৫ কিলোমিটার ব্যাসের বিশাল এক গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে, ধ্বংস করে দেয় ওসব প্রাণীদের ঝাড়েবংশে। ডাইনোসরের সঙ্গে আরও অনেক প্রাণী সে বিপর্যয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

তবে বেণুর শেষ পর্যন্ত এরকম ধ্বংসের প্রতীক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেন, সে কথা তো আগেই বলেছি।

লেখক: বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞান লেখক

সূত্র: উইকিপিডিয়া