চাঁদে প্রথম নারী পাঠাবে নাসা

চাঁদের মাটিতে এই প্রথমবারের মতো একজন নারী নভোচারী পাঠাবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদে পা রাখবেন কোনো নারী নভোচারী।

১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন ভস্টক ১ মিশনে প্রথম মহাকাশে পাড়ি দেন। এ বছর এপ্রিলে মানুষের মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার ৬০তম বছর পূর্ণ হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে মানুষ পাঠানোর এক দশকের মধ্যেই নাসা চাঁদে প্রথম মানুষ পাঠায়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত নাসার অ্যাপোলো মিশনে মোট ১২ নভোচারী চাঁদের মাটিতে পা রাখেন। তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা জিনিস মিল আছে। সবাই পুরুষ এবং শ্বেতাঙ্গ। কিন্তু শুধু পুরুষই কেন?

নাসার শুরুর দিকের খুব কঠোর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নভোচারীদের নির্বাচন করত। বেশিরভাগ নভোচারীই ৩০-এর দশকের পাইলট ছিলেন। তখন একটা বিষয় প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল, নভোচারী হতে হলে পাইলট হওয়ার পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। কারণ অ্যাপোলো সময় মিশনগুলো ছিল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। তাই সবচেয়ে অভিজ্ঞ নভোচারীদের চাঁদের মিশনের পাঠানো হতো। সেই এরকম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো নারী মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় ছিল না। তাই ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ৬বার মানুষ চাঁদে পাড়ি দিলেও কোনো নারী নভোচারী চাঁদে যেতে পারেননি।

প্রথম নারী নভোচারী নাসায় যোগ দেন ১৯৭৮ সালে। এখন পর্যন্ত নাসার মোট ৭৫ জন নারী নভোচারী মহাকাশে গেছেন। এবার প্রথম কোনো নারী চাঁদে পা রাখবেন। তবে প্রথম নারী হিসাবে কে প্রথম চাঁদে পা রাখবেন সেটা এখনো ঘোষণা করেনি নাসা। সম্ভবত, নাসার হয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছেন এমন কোনো নারী নভোচারী প্রথম চাঁদে পা রাখবেন।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে আর্টেমিস মিশনের জন্য নভোচারীদের দল ঘোষণা করেছিল নাসা। সেই দলে ছিলেন ৯ জন নারী নভোচারী। তাঁরা হলেন, কাইল ব্যারন, ক্রিস্টিনা কোচ, নিকোল মান, অ্যানি ম্যাকক্লেইন, জেসিকা মেয়ার, জেসমিন মোঘবেলি, কেট রুবিনস, জেসিকা ওয়াটকিনস ও স্টেফানি উইলসন। এদের থেকেই হয়ত একজন প্রথম চাঁদে ভ্রমণ করবেন। আর্টেমিস মিশনের ৯ জন নারী সদস্যের সঙ্গে ৯ জন পুরুষ সদস্যের নামও ঘোষণা করেছে নাসা। চলতি বছর আগস্ট মাসে নাসার মুখ্য নভোচারী রিড ওয়াজম্যান ঘোষণা করেন, ‘আর্টেমিস মিশনের জন্য নাসার যোগ্য নভোচারীদের নাম পরবর্তী তারিখে ঘোষণা করা হবে।’

কিন্তু কেন চাঁদে নারী নভোচারী পাঠাতে চায় নাসা? শুধু প্রচার ও ইতিহাস সৃষ্টির জন্য?

এ ব্যাপারে নাসার অবসরপ্রাপ্ত জৈব রসায়নবিদ ও নভোচারী পেগি হুইটসন বলেন, আর্টেমিস মিশনে নারী চাঁদে পাঠানোর ব্যাপারটা মোটেও বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। কারণ যিনি চাঁদে পা রাখবেন তিনি এই কাজের জন্য অবশ্যই যোগ্য। চাঁদে নারী পাঠানোর মাধ্যমে নাসা চেষ্টা করছে অন্যান্য দেশকে আবার চাঁদের প্রতি উৎসাহিত করতে। কারণ মঙ্গল গ্রহে যাওয়া বা আরও দূরে ভ্রমণ করার জন্য চাঁদে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বিকাশ করা দরকার। চাঁদ হতে পারে একটি উপযুক্ত স্টেশন।

এর আগে ২০১৯ সালে দুজন নারী নভোচারী ক্রিস্টিনা কোচ ও জেসিকা মেয়ার প্রথম মহাকাশে হাটার রেকর্ড করেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের একটি নির্দিষ্ট ব্যাটারিকে আপগ্রেড করতে গিয়েছিলেন এই দুই নভোচারী। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এ খবরটাই অধিকাংশ পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল। কারণ এর আগে কখনো শুধু দুজন নারী মহাকাশে কোনো মিশন পরিচালনা করেননি। কিন্তু স্রেফ ইতিহাস তৈরি করার জন্য নয়, জেসিকা মেয়ার ও ক্রিস্টিনা কোচ এই কাজের জন্য উপযুক্তই ছিলেন বলেই তাঁদের মহাকাশে পাঠিয়েছিল নাসা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে কোন যোগ্য নারী চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখবেন। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। সময় বলে দেবে কে হবেন চাঁদে পা রাখা প্রথম নারী।

সূত্র: নাসা ও স্পেস ডট কম

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা