বিপদজনক স্পেস জাংক

প্রায় অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মহাকাশে বিভিন্ন মহাকাশযান ও উপগ্রহ পাঠাচ্ছে মানুষ। এসব উপগ্রহ চিরকাল কর্মক্ষম থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ ফুরিয়ে গেলে এদেরকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার উপায় নেই। ধাতব আবর্জনা হিসেবে ঘুরতে থাকে কক্ষপথে। এসব আবর্জনাকে বলা হয় স্পেস জাংক। একটা সময় গতি হারিয়ে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের এসব স্পেস জাংক ঢুকে পড়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। সর্বশেষ পর্যায়ে ভূ-পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে।

স্পেস জাংকের কারণে প্রাণহানীর কথা এখনও শোনা যায়নি। তবে, বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক বছরে। প্রতিনিয়ত মহাকাশে নতুন নতুন কৃত্রিম উপগ্রহ এবং রকেট পাঠাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। সবকিছু মিলিয়ে স্পেস জাংক জনজীবনের জন্য বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছর জুলাই-এ নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী আগামী দশ বছরের মহাকাশ জাংকের কারণে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তা হিসেব করে দেখিয়েছেন।

পৃথিবীর চারপাশে স্পেস জাংকের নমুনা

মহাকাশে পাঠানো রকেট ধ্বংসাবষের ফিরতি গতিপথ, উপগ্রহের কক্ষপথের গাণিতিক হিসেব, এদের নীচে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং সেইসঙ্গে বিগত ৩০ বছরের উপগ্রহের মাধ্যমে সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকদলটি। ভূ-পৃষ্ঠের কোথায় স্পেস জাংকগুলো পড়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা দেন তাঁরা। তাঁদের মতে, আগামী দশকে উত্তরের গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে স্পেস জাংক পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

নির্দিষ্ট করে বললে বাংলাদেশের ঢাকা, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা কিংবা নাইজেরিয়ার লাগোসের অক্ষাংশে স্পেস জাংক পড়ার সম্ভাবনা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, চীনের বেইজিং বা রাশিয়ার মস্কোর তুলনায় প্রায় তিনগুণ। জনবহুল এলাকায় স্পেস জাংক পড়ার কারণে হতাহতের ঘটনা প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে বলে দেখানো হয়েছে গবেষণাপত্রে।

স্পেস জাংকের ঝুঁকির এই বিষয়গুলো একেবারে নতুন ব্যাপার নয়।  অনেক দেশ বা সংস্থাই বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি  চার-বাহুর রোবটের সাহায্য স্পেস জাংক নিরাপদে অপসারণের কথা ভাবছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই রোবটটি মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে তাঁরা।

২০১০ সালে জাতিসংঘের আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্স দপ্তর থেকে স্পেস জাংকের ঝুঁকি কমানোর জন্য বেশ কিছু নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছিল। এগুলো যেহেতু আন্তর্জাতিক আইন নয়, তাই মানার বাধ্যবাধকতা নেই। নির্দেশিকাটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

পাঁচ বছরের মধ্যে মহাকাশে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ৭০ বছর পূর্ণ হবে। সেই অনুষ্ঠানটি সার্থক হবে যদি স্পেস জাংক থেকে মানুষের জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মহাকাশ গবেষণায় মানবজাতি যেমন উপকৃত হয়েছে, তেমনিভাবে আবারও পুরো পৃথিবী উপকৃত হবে এ থেকে। এমনটাই মনে করেন গবেষকদলটি।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট