ফটোফিচার
মহাকাশ থেকে মিল্কিওয়ে দেখতে কেমন
মহাকাশপ্রেমীদের কাছে রাতের আকাশ অসম্ভব সুন্দর। কিন্তু রাতের আকাশের যেসব ছবি আমরা দেখি, তার পেছনে ফটোগ্রাফারদের অনেক কারিকুরি থাকে। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিকল্পনা এবং সৃজনশীলতাই ছবিটি করে তোলে জীবন্ত।
ভ্রমণ ফটোগ্রাফি সাইট ‘ক্যাপচার দ্য অ্যাটলাস মিল্কিওয়ে ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার ২০২৫’-এর ছবি প্রকাশ করেছে। এ বছর ১৬টি দেশের প্রায় ৬ হাজার আলোকচিত্রী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। এই প্রথমবার মহাকাশ থেকে তোলা আমাদের মিল্কিওয়ের একটি ছবি প্রতিযোগিতায় বিশেষ স্থান পেয়েছে। এ প্রতিযোগিতার অষ্টম সংস্করণে বিশ্বজুড়ে ফটোগ্রাফারদের তোলা মিল্কিওয়ের অসাধারণ কিছু ছবি বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১. মহাকাশ থেকে মিল্কিওয়ে
মহাকাশচারী ডন পেটিট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও আমাদের গ্রহের এই অসাধারণ ছবিটি তুলেছেন। পৃথিবীর একপাশ তখন রাতের অন্ধকারে ডুবে আছে, অন্য পাশ আলোকিত। দূরে দেখা যাচ্ছে আলোর রেখা। আর পৃথিবীর নানা শহরের রাতের আলো দেখে মনে হচ্ছে, মিল্কিওয়ের ছবি প্রতিফলিত করছে।
২. চন্দ্রগ্রহণ ও মিল্কিওয়ে
গত ১৪ মার্চ দেখা গিয়েছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এটা দেখা যায়। চিলির এনএসএফ সেরো টোলোলো ইন্টার-আমেরিকান অবজারভেটরি থেকে বিশেষ সেই মুহূর্তের ছবি তুলছিলেন ফটোগ্রাফার পিটার হোরালেক। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় তাঁর ক্যামেরায় ধরা পরে মিল্কিওয়ের এই ছবিটি। সেখানে চন্দ্রগ্রহণের কারণে লাল বর্ণ ধারণ করেছে দূর দিগন্ত।
৩. মিল্কিওয়ের সঙ্গে উল্কাবৃষ্টি
প্রতি বছর জুলাই-আগস্টে সাধারণত পারসাইড উল্কাবৃষ্টির দেখা যায়। পারসাইড উল্কা প্রতি ঘণ্টায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৫ কিলোমিটার গতিতে মহাকাশে ছুটে চলে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর এর গতি কমে হয় সেকেন্ডে প্রায় ৫৯ কিলোমিটার। এই গতিতে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে আগুন জ্বলে ওঠে। ফলে আকাশে উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখা পায়। ঠিক সেই মুহূর্তের ছবি তুলেছেন মাইক আব্রামিয়ান। ছবিতে পাথরের ওপর বসে এই দুর্দান্ত উল্কাবৃষ্টির সঙ্গে মিল্কিওয়ের সৌন্দর্য দেখছেন মাইকের বন্ধু আর্ন।
৪. গাছের পাতার ফাঁকে মিল্কিওয়ে
ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার বেঞ্জামিন বারাকাত। গত চার বছর আরব সাগরের সুকাত্রা দ্বীপে কাজ করছেন তিনি। সেখানে দেখা পান বিশাল কিছু গাছের। তিনি এগুলো নাম দেন বোতল গাছ। কেননা গাছগুলো দেখতে বোতলের মতো। এক রাতে বোতল গাছের সঙ্গে তিনি দেখা পান মিল্কিওয়ের। সেটাই ক্যামেরাবন্দী করেন তিনি।
৫. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
একদিকে শুরু হয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে মিল্কিওয়ের অপরূপ দৃশ্য। অগ্নুৎপাতের বিষাক্ত ধোয়া ও মিল্কিওয়ে একই আকার ধারণ করেছে। তবে এর মধ্যবর্তী দূরত্ব কয়েক আলোকবর্ষ। গুয়েতেমালার আকাতেনাঙ্গো আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় ছবিটি তুলেছেন সার্জিও মন্টুফার।
৬. লুপিন ফুলের সাগর
লুপিন ফুলের দেখা পাওয়া যায় নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণের দ্বীপে। ফুলটি ফুটলে পুরো দ্বীপটি বেগুনি রঙে ছেয়ে যায়। ম্যাক্স ইনউড ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন সেই মুহূর্ত। তবে সেই সৌন্দর্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে তারা ভরা আকাশ। সঙ্গে দেখা যাচ্ছে নিউজিল্যান্ডের লেক টেকাপো ও দূরের পাহাড়।
৭. ধু-ধু প্রান্তরে মিল্কিওয়ে
আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় স্থানগুলো ঘুরে দেখছিলেন আলোকচিত্রী আলেজান্দ্রা হাইস। তখন তিনি প্রায় ১৭ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত স্যালিনাস গ্র্যান্ডেসের সল্ট ফ্ল্যাটে ঘুরতে যান। সেই গভীর রাতের ধু ধু প্রান্তের নির্জনতার সঙ্গী হয়েছে মিল্কিওয়ে। এমন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী না করে কি পারা যায়!