প্রাণের সূচনার জন্য দরকারি উপাদান বেনু গ্রহাণুতে ছিল, গবেষণায় নতুন তথ্য

বেন্নু গ্রহাণু থেকে আনা পাথর ও ধুলা রাখা একটি কনটেইনারের ওপর থেকে তোলা দৃশ্য। পাশে সেন্টিমিটারে চিহ্নিত স্কেল দেখা যাচ্ছে।ছবি: নাসা/এরিকা ব্লুমেনফেল্ড ও জোসেফ অ্যাবারসোল্ড

দুই বছর আগে বেনু গ্রহাণু থেকে ১২১ গ্রাম মাটি আর পাথর নিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান ওসাইরিস-রেক্স। তখন থেকেই বিজ্ঞানীরা যেন এক গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছেন। এই সামান্য ধুলোবালির মধ্যে তাঁরা প্রাণ তৈরির প্রায় সব উপাদানই খুঁজে পেয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিল ডিএনএ তৈরির নিউক্লিওটাইড, ফসফেট এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড। তবে কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছিল না চিনি! না, চায়ের কাপে মেশানোর চিনি নয়, এটা হলো প্রাণের গঠনের জন্য অপরিহার্য শর্করা। অবশেষে বিজ্ঞানীরা বেনুর নমুনায় সেই চিনি খুঁজে পেয়েছেন। আর তার সঙ্গে বোনাস হিসেবে মিলেছে এক অদ্ভুত জিনিস। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন স্পেস গাম।

আরও পড়ুন

জাপানের তোহোকু ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ইয়োশিহিরো ফুরুকাওয়ার নেতৃত্বে একদল গবেষক বেনুর নমুনায় রাইবোজ এবং গ্লুকোজের সন্ধান পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এই আবিষ্কার এত গুরুত্বপূর্ণ? আমাদের শরীরের ব্লু-প্রিন্ট হলো ডিএনএ এবং আরএনএ। এত দিন বেনুতে ডিএনএ ও আরএনএ তৈরির বেস বা ক্ষারগুলো পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আরএনএ তৈরির কাঠামো দাঁড় করাতে দরকার হয় রাইবোজ সুগার বা শর্করা। বেনুতে এই রাইবোজ খুঁজে পাওয়ার মানে হলো সেখানে আরএনএ তৈরির সব কটি উপাদানই উপস্থিত আছে!

মজার ব্যাপার হলো, বেনুতে কিন্তু ডিএনএর জন্য দরকারি ডিঅক্সি-রাইবোজ শর্করা পাওয়া যায়নি। এতে বিজ্ঞানীরা আরও নিশ্চিত হচ্ছেন যে পৃথিবীতে হয়তো প্রাণের শুরুটা হয়েছিল আরএনএ দিয়েই। বিজ্ঞানীরা একে বলেন আরএনএ ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিস। অর্থাৎ, ডিএনএ আসার অনেক আগেই আরএনএ রাজত্ব করেছে।

আরও পড়ুন

চিনির পাশাপাশি নাসা এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা একধরনের পলিমারের খোঁজ পেয়েছেন, যা দেখতে অনেকটা চুইংগামের মতো। এটি মূলত অ্যামোনিয়াম কার্বামেট নামে একটি যৌগ থেকে তৈরি। ধারণা করা হচ্ছে, কোটি কোটি বছর আগে এটি নরম এবং নমনীয় ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে গেছে।

নাসার জ্যেষ্ঠ গবেষক স্কট স্যান্ডফোর্ডের মতে, এই অদ্ভুত আঠালো বস্তুটি আমাদের সৌরজগতের একদম শুরুর দিকের ইতিহাসের সাক্ষী। এটি নাইট্রোজেন, কার্বন এবং অক্সিজেনে ভরপুর।

বেনু গ্রহাণুটির গড় ব্যাস ৪৯০-৫০০ মিটার। কিন্তু শুরুতে গ্রহাণুটি এত ছোট ছিল না। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি অনেক বড় কোনো গ্রহ ভেঙে যাওয়া টুকরো। সেই আদিম গ্রহে সম্ভবত প্রচুর পানি এবং তাপ ছিল, যা প্রাণের উপাদান তৈরির জন্য আদর্শ পরিবেশ। জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা-২ যে রায়ুগু গ্রহাণুর নমুনা এনেছিল, সেটির সঙ্গে বেনুর অদ্ভুত মিল পাওয়া গেছে। বেনু যেন সাড়ে চার শ কোটি বছরের পুরোনো এক ফ্রিজার। এর ভেতরে সৌরজগতের জন্মলগ্নের সব গোপন রহস্য অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে!

লেখক: ফ্রন্টেন্ড ডেভলপার, সফটভেঞ্চ

সূত্র: নেচার জিওসায়েন্সনেচার অ্যাস্ট্রনমি জার্নাল এবং আইএফএল সায়েন্স