কৃষ্ণগহ্বরের কাছে ধীরে চলে সময়

আলবার্ট আইনস্টাইন বিখ্যাত তাঁর আপেক্ষিকতার জন্য। এই তত্ত্বের আবার দুটি শাখা, বিশেষ আপেক্ষিকতা ও সাধারণ আপেক্ষিকতা। সাধারণ আপেক্ষিকতা ব্যাখ্যা করে মহাবিশ্বের জ্যামিতি আর মহাকর্ষ তত্ত্বকে। এই তত্ত্ব বলে, স্থান ও কাল হলো একটি চারমাত্রিক চাদরের মতো। ভারী বস্তু সেই চাদরকে বাঁকিয়ে দেয়। এ কারণেই তৈরি হয় মহাকর্ষ।

কৃষ্ণগহ্বর অতি ভারী একটা বস্তু। তাই এরা স্থান-কালের ওই চাদরকে খুব বেশি বাঁকিয়ে দিতে পারে। এই তথ্যের আলোকে সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে একটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারি, কোনো একটি বিন্দু সরলরেখায় গেলে বেশি দূরত্ব পাড়ি দেবে, নাকি বক্ররেখায় গেলে বেশি দূরত্ব পার হবে? উত্তর সোজা, সরলরেখায় দূরত্ব কম এবং বক্ররেখায় তা বেশি। ১ নম্বর ছবির দিকে তাকালেই পরিষ্কার হবে বিষয়টা।

আমরা জানি, আলোর গতি সব সময় সমান। তাই যদি দূরত্ব বাড়ে, আলোর সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে বেশি সময় লাগে। কিন্তু আমাদের এই ত্রিমাত্রিক স্থান-কালের চাদরে দূরত্বটা অনুভব করি না। ছবি ১ অনুযায়ী দূরত্ব ২.৫ আলোকবর্ষ হলেও আমরা দেখব দূরত্ব ২ আলোকবর্ষ! এটাও দেখব যে আলোর ২ আলোকবর্ষ অতিক্রম করতে ২ বছরের জায়গায় ২.৫ বছর লাগছে! তার মানে বিশেষ আপেক্ষিকতার নিয়ম কি ভেঙে পড়ছে এখানে!

আসল ব্যাপারটা কিন্তু অন্য রকম। কৃষ্ণগহ্বরের কাছে সময়ের গতি কমে যায়। ধরে নিলাম, B নামের গ্রহটি হলো আমাদের প্রসঙ্গ কাঠামো এবং A থেকে আলো আমাদের দিকে আসছে। ধরে নিলাম, আলো A থেকে আমাদের দিকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে এসে পৌঁছায়। তাই আমাদের এখানে আলো আসতে ২ বছর লাগে। কিন্তু এই কৃষ্ণগহ্বর থেকে অনেক দূরের কোনো গ্রহে যদি এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে আলো আসতে কম সময় লাগত। তখন জানুয়ারির বদলে সেই গ্রহে হতো জুন মাস। বিশেষ আপেক্ষিকতার নিয়মকে, তার মানে কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি থাকা গ্রহগুলোতে সময়ের গতি কমে যায়। তাই বেঁচে যায় বিশেষ আপেক্ষিকতা।

লেখক: শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, চট্টগ্রাম আইডিয়াল হাইস্কুল

সূত্র: দ্য আল্টিমেট ফেট অব ইউনিভার্স—জামাল নজরুল ইসলাম ও ব্রিলিয়্যান্ট ডট অর্গ