চন্দ্রযান ৩ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করল ভারত

সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) নভোযানটি উৎক্ষেপণ করেছবি: ইসরোর টুইটার থেকে নেওয়া

চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ১৪ জুলাই শুক্রবার বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে ভারতের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। নভোযানটি উৎক্ষেপণে ব্যবহার করা হয়েছে এলএমভি-৩ রকেট। 

উড্ডয়নের ১৬ মিনিট পর চন্দ্রযান-৩ পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএমভি-৩ রকেট থেকে আলাদা হয়ে যায়। এরপর ঘুরতে শুরু করেছে পৃথিবীর চারপাশে। জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরো। এর মাশুলও গুণতে হবে তাদের। ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছিল মাত্র ৩ দিনে। সেখানে ২০২৩ সালে এসে ভারত চাঁদে ল্যাণ্ডার পাঠাতে সময় নিচ্ছে প্রায় ৪০ দিন। এ সময় ক্ষেপণের পেছনে কারণও আছে। মূল কারণ নভোযানের ভরের তারতম্য। অ্যাপোলো ১১ নভোযানের ভরের তুলনায় চন্দ্রযানের ভর অনেক কম। ফলে চন্দ্রযান-৩ এ জ্বালানীও আছে কম। সে কারণে ইসরো পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ ব্যবহার করে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করাতে চাইছে নভোযানকে। এ পদ্ধতিতে রকেটটি সরাসরি চাঁদের দিকে না গিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে চাঁদের দিকে। এ কারণেই সময় বেশি লাগবে। 

চন্দ্রযান-৩ এ থাকছে একটি ল্যান্ডার ও একটি রোভার। ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ এবং রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রতিষ্ঠাতা বিক্রম সারাভাইয়ের নামে ল্যান্ডারটির নাম রাখা হয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছানোর কথা। ঠিকভাবে ল্যান্ডারটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে পারলে রোভারটি চাঁদের মাটিতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবে এটি।

সফলভাবে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে ভারত।
ফাইল ছবি: রয়টার্স
চন্দ্রযান-৩-এর একটি অংশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: ইসরোর টুইট থেকে

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে ল্যান্ডার এবং রোভারটি। এর আগে, ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির সন্ধান পেয়েছিল ইসরো। তাই এবারেও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাচ্ছে ভারত। 

রোভার প্রজ্ঞানের আছে পাঁচটি যন্ত্র। এই যন্ত্রগুলোর মূল লক্ষ্য চাঁদের প্রকৃতি নির্ণয়, চাঁদের বায়ুমণ্ডল বোঝা এবং চন্দ্রপৃষ্ঠের নিচে কি আছে তা খুঁজে দেখা।  

এর আগে, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ করেছিল ইসরো। তবে সফটওয়্যারজনিত সমস্যার কারণে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগ মূহূর্তে বিধ্বস্ত হয় নভোযানটি। এর চার বছর পর আবার চাঁদে উদ্দেশ্যে ছুটেছে চন্দ্রযান-৩। 

নভোযানটি ঠিকভাবে চাঁদে অবতরণ করতে পারলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে সফলভাবে নভোযান নামানোর গৌরব অর্জন করবে ভারত। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন চাঁদে নিজেদের নভোযান পাঠিয়েছিল।  

লেখক: সম্পাদনা দলের সদস্য, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পেস ডট কম ও ইসরো