ইউরি গ্যাগারিন যেভাবে প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশে গেলেন

১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন রুশ নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন। ভস্টক-১ নভোযানে চড়ে ১০৮ মিনিটে তিনি পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘুরে আসেন। আবার যুক্তরাষ্ট্র প্রথম স্পেস শাটল উড্ডয়ন করে এই দিনে, ১৯৮১ সালে। আজকের এই দিনেই শুরু হয়েছিল গ্যালেলিও গ্যালিলির বিচার কাজ। আজ মহাকাশ যাত্রার দিবসে সেসব কাহিনি আরেকবার জানুন।

ইউরি গ্যাগারিন ভস্টক-১ নভোযানে চড়ে মহাকাশে যানছবি: মেট্রো ডটকো

১৯৬০-এর দশকের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ১২ এপ্রিল। ১৯৬১ সালের এই দিনে প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন। ভস্টক-১ নভোযানে চড়ে তিনি পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘুরে আসেন। এতে সময় লাগে মোট ১০৮  মিনিট, অর্থাৎ ১ ঘন্টা ৪৮ মিনিট। কিন্তু কীভাবে গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশে গেলেন? এই দিনে বিজ্ঞানের জগতে আর কি বড় ঘটনা ঘটেছিল?

তখন গ্যাগারিনের বয়স মাত্র ২৭ বছর। যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলছে শীতল যুদ্ধ। কোন দেশ আগে মহাকাশে মানুষ পাঠাতে পারে—সেই স্নায়ুযুদ্ধে বাজিমাত করে সোভিয়েতরা। আর তা ঘটে গ্যাগারিনের হাত ধরে। তাঁর ভস্টক-১ নভোযান ছিল সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। মানে নিজ থেকে কিছু করার ছিল না। অবশ্য গ্যাগারিনের হাতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল, কিন্তু তাও শুধু জরুরি অবস্থার জন্য। যাত্রা শুরুর সময় গ্যাগারিন চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘পোয়েখালি’! এই শব্দের মানে ‘চলো যাই’! এই কথাটি পরে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে যায়।

ভস্টক-১ প্রায় ৩২৭ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে সফলভাবে ফিরে আসে। গ্যাগারিনের নিরাপদে ফিরে আসা শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য নয়, পুরো মানবজাতির জন্য ছিল এক অসামান্য অর্জন।

প্রথম স্পেস শাটলের উড্ডয়ন

১২ এপ্রিল আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮১ সালের এই দিনে নাসা উৎক্ষেপণ করে ইতিহাসের প্রথম মহাকাশযান কলম্বিয়া। এই নভোযান বারবার ব্যবহারযোগ্য ছিল। সে যাত্রাতেই মানুষ নিয়ে মহাকাশে উড়েছিল কলম্বিয়া।

সে যাত্রায় কলম্বিয়ায় চালক হিসেবে ছিলেন অ্যাপোলো মিশনের অভিজ্ঞ নভোচারী জন ইয়াং এবং এক নতুন নভোচারী রবার্ট ক্রিপেন। তাঁরা মোট ৫৪ ঘন্টা মহাকাশে ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিলেন ৩৬ বার। এরপর ১৪ এপ্রিল তাঁরা নিরাপদে ফিরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ডস এয়ার ফোর্স বেসে।

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সাতজন নভোচারী
ছবি: নাসা

এই অভিযানে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছিল। রকেটের বাইরের দিকে বিশাল জ্বালানি ট্যাংক ও দুটি শক্তিশালী সলিড রকেট বুস্টার ছিল। এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেও অভিযানের সফলতা প্রমাণ করে দেয়, ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণার জন্য এটি একটি কার্যকর পথ।

পরে নাসার স্পেস শাটল প্রোগ্রামের মাধ্যমে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো, মহাকাশে গবেষণা করা, এমনকি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরির কাজও করেছিল নাসা। 

তবে এই কলম্বিয়াই ২০০৩ সালে ২৮তম মিশনে এক মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হয়। সে বছর ১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীতে ফেরার সময় কলম্বিয়া ভেঙে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সাতজন নভোচারী।

শিল্পির কল্পনায় গ্যালেলিওর বিচার
ছবি: উইকিপিডিয়া

গ্যালেলিওর বিচার ও অন্যান্য

আজকের এই দিনে যেমন গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশে গিয়েছিলেন বা যুক্তরাষ্ট্র প্রথম স্পেস শাটল মিশন চালু হয়েছিল, তেমনি ১৬৩৩ সালের এই দিনেই গ্যালেলিও গ্যালিলির বিচার শুরু হয়েছিল। তিনি সে যুগে প্রচলিত পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বের বদলে সৌরকেন্দ্রিক বিশ্ব মতবাদ প্রচার করেছিলেন। বলেছিলেন, সূর্য নয়, পৃথিবীই ঘুরছে সূর্যের চারপাশে। কিন্তু গ্যালিলিওর এই কথা তৎকালীন চার্চের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাঁর বিচার করা হয়। বিচারের সময় গ্যালিলিওকে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। সাময়িকভাবে চার্চের কথা মেনে নিলেও তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে গেছেন। ৭৯ বছর বয়সে ১৬৪২ সালে তিনি মারা যান।

সূত্র: ফার্স্টপোস্ট ডটকম ও উইকিপিডিয়া