জেমস ওয়েবের ছবিতে গ্যালাক্সির বিবর্তন

সম্প্রতি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা বেশকিছু ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। গভীর মহাকাশের এই ছবিগুলো বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। মহাকাশের এতো বিস্তারিত ও স্বচ্ছ ছবি এর আগে কখনো তোলা সম্ভব হয়নি। এই ছবিগুলোর একটি হচ্ছে গ্যালাক্সি গ্রুপ স্টিফেন কুইন্টেটের। গ্যালাক্সিগুলোর মধ্য মিথস্ক্রিয়া, ব্ল্যাকহোলের বেড়ে ওঠা, নক্ষত্র জন্ম এসবের বিশদ চিত্র ফুটে উঠেছে ছবিটিতে।

স্টিফেন কুইন্টেট গ্রুপটিতে সবমিলিয়ে পাঁচটি গ্যালাক্সি রয়েছে। এখন পর্যন্ত জেমস ওয়েবের তোলা সবচেয়ে বড় ছবি এটি। ১৫ হাজার কোটিরও বেশি পিক্সেলের এই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে ১০০০ আলাদা আলাদা চিত্রের সমন্বয়ে। চাঁদের ক্ষেত্রফলের পাঁচ ভাগের একভাগ ছবিটির ক্ষেত্রফল।

স্টিফেন কুইন্টেটের এই গ্যালাক্সিগুলো হিকসন কম্প্যাক্ট গ্রুপ ৯২ বা HCG 92 নামেও পরিচিত। নামে কুইন্টেট বা পাঁচ বস্তুর সমষ্টি হলেও এখানে আসলে চারটি গ্যালাক্সি সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে। পঞ্চম অর্থাৎ সবচেয়ে বামের ছবিটি এনজিসি ৭৩২০ নামে পরিচিত। পৃথিবী থেকে এনজিসি ৭৩২০ এর দূরত্ব মাত্র ৪ কোটি আলোকবর্ষ। বাকি চারটি গ্যালাক্সির নাম যথাক্রমে এনজিসি ৭৩১৭, এনজিসি ৭৩১৮এ, এনজিসি ৭৩১৮বি এবং এনজিসি ৭৩১৯ নামে পরিচিত। এগুলো প্রায় ২৯ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ ধরনের কাছাকাছি গ্যালাক্সিগুলো নিয়ে গবেষণা করা কিছুটা সহজ। এই গবেষণাগুলো দূরবর্তী মহাকাশের বস্তুগুলো ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

একাধিক গ্যালাক্সির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং একত্রীকরণ জ্যোর্তিবিজ্ঞানীদের গ্যালাক্সির বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। কাছের মহাকাশে এমন দৃশ্য দেখার সুযোগ কম। বিজ্ঞানীদের কাছে স্টিফেন কুইন্টেট তাই চমৎকার এক মহাজাগতিক গবেষণার বস্তু।

প্রাথমিক মহাবিশ্বে এরকম গ্যালাক্টিক গ্রুপ আরও অনেক থাকতে পারে বলে মনে করেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে যদি গ্যালাক্সিগুলোর অতি উত্তপ্ত উপাদান কোয়াসারে পরিণত হয়ে অতিভরের ব্ল্যাকহোলগুলিকে জ্বালানী দিতে পারে। ছবিতে একদম ওপরে থাকা গ্যালাক্সি এনজিসি ৭৩১৯-তে এখনো একটি সক্রিয় গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস আছে। যা সূর্যের ২.৪ কোটিগুণ বেশি ভরের একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল। এটি প্রায় ৪ হাজার কোটি সূর্যের সমতুল্য আলোকশক্তি নির্গত করে।

নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফ (এনআইআরএসপেক) এবং মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্ট (এমআইআরআই) ব্যবহার করে গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াসটি পর্যবেক্ষণ করছে জেমস ওয়েব। এই যন্ত্রগুলো মূলত ক্যামেরা এবং স্পেকট্রোগ্রাফ বা বর্ণালীবিক্ষণ যন্ত্রের সংমিশ্রণ। এগুলোর সাহায্যে গ্যালাকটিক কোরের বর্ণালী বৈশিষ্ট নিয়ে বিপুল তথ্যে ও ছবিটি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।

এটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলগুলোর কেমন হারে চারপাশের বস্তু গ্রাস করে এবং বৃদ্ধি পায় তা বুঝতে সাহায্য করবে বিজ্ঞানীদের। এছাড়া নক্ষত্র কীভাবে গঠিত হয়, সে বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা দেয় এই ছবিটি।

১৮৭৭ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড স্টেফান পেগাসাস নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এই গ্যালাক্সি গ্রুপটি আবিষ্কার করেন।

লেখক : শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।

সূত্র : নাসা