জুস যাচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহে

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ইসার পরিচালিত এই অভিযানটির নাম দেওয়া হয়েছে জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার মিশন বা সংক্ষেপে জুস (JUICE)।

অবশেষে বৃহস্পতির পানে ছুটল ইউরোপিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসার নভোযান জুস। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গায়ানার কুরু শহরে অবস্থিত ইউরোপের স্পেসপোর্ট থেকে আরিয়ান ৫ রকেটটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। এই রকেটে করেই মহাকাশে পৌঁছে গেছে ‘জুস’ নভোযান। নিজেদের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের সময়টি সরাসরি সম্প্রচার করেছে ইসা।

বৃহস্পতিগ্রহ এবং এর তিনটি বড় উপগ্রহের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে মহাকাশ অভিযান যাচ্ছে ‘জুস’ নভোযান। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ইসার পরিচালিত এই অভিযানটির নাম দেওয়া হয়েছে জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার মিশন বা সংক্ষেপে জুস (JUICE)।

গতকাল বৃহস্পতিবার নভোযানটি উৎক্ষেপণের কথা ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ তারিখ একদিন পিছিয়ে দেয় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ইসা। শুক্রবার উৎক্ষেপণের প্রায় ২৮ মিনিট পর আরিয়ান ৫ রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয় নভোযানটি। আগামী ১৭ দিনের মাঝে নভোযানটি তার সৌর অ্যারে (সৌরশক্তি যে যন্ত্র দিয়ে সংগ্রহ করা হয়), অ্যান্টেনা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ প্রসারিত করবে। পরের তিনমাস এসব যন্ত্রাংশ মূল অভিযানের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে।

জুস নভোযান

বৃহস্পতিগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছাতে মহাকাশযানটি সময় লাগবে ৮ বছর। দীর্ঘ এই যাত্রায় মহাকাশযানটি পৃথিবী, চাঁদ, শুক্রের মাঝে দিয়ে উড়ে যাবার সময় বেশকিছু স্লিংশট ব্যবহার করবে। মহাকাশে কোনো বস্তুর মহাকর্ষ ব্যবহার করে মহাকাশযানের গতি বাড়িয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে স্লিংশট বলা হয়।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০৩১ সালের জুলাই নাগাদ মহাকাশযানটি পৌঁছে যাবে তার লক্ষ্যে। বৃহস্পতিতে পৌঁছানোর পর প্রথম সাড়ে তিন বছর গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করবে জুস নভোযান। একই সঙ্গে এই তিনটি বড় উপগ্রহ গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো এবং ইউরোপাকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে। অভিযানের শেষের দিকে মহাকাশযানটি শুধু গ্যানিমেডকে প্রদক্ষিণ করবে। ফলে সৌরজগতের বাইরের দিকের কোনো গ্রহের উপগ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরা প্রথম কোনো মহাকাশযান হবে এটা।

গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো এবং ইউরোপা আগাগোড়া বরফে আচ্ছাদিত। বরফের আস্তরণের নিচে তরল পানির মহাসমুদ্র আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সরে জমিনে সেই পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা যাবে জুস মিশনের মাধ্যমে।

এছাড়াও বৃহস্পতিকে জানতে ‘ইউরোপা ক্লিপার মিশন’ নিয়ে কাজ করছে নাসা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে এই অভিযানটি পরিচালিত হবে। ২০৩০ সালের এপ্রিল নাগাদ পৌঁছে যাবে বৃহস্পতিতে। এ দুটি মিশনের মাধ্যমে বৃহস্পতি ও এর উপগ্রহ সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য জানতে পারবো আমরা। উন্মোচিত হবে বৃহস্পতিকে ঘিরে থাকা নানা রহস্য। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সিএনএন, ইসা