মহাকাশ
কীভাবে এল আন্তর্জাতিক আলোক দিবস
আজ বিশ্ব আলোক দিবস। বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ১৬ মে এ দিবস পালিত হয়। ২০১৮ সাল থেকে পালিত হচ্ছে এই দিবস। কীভাবে এল দিবসটি?
বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ করেই জন্ম নেয় মহৎ উদ্ভাবন। মাইম্যানের লেজার রশ্মি আবিষ্কার এর অন্যতম বড় প্রমাণ। ১৯৬০ সালের ১৬ মে মার্কিন প্রকৌশলী ও পদার্থবিজ্ঞানী থিওডর হ্যারল্ড মাইম্যান প্রথম সফলভাবে লেজার রশ্মি তৈরি করেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করেছিলেন রুবি ক্রিস্টা। তৎকালীন প্রচলিত ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল তা। সে সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, রুবি ক্রিস্টাল দিয়ে লেজার তৈরি অসম্ভব। ফলে মাইম্যান যখন তাঁর লেজার আবিষ্কারের যুগান্তকারী গবেষণাপত্রটি ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স জার্নালে প্রকাশের জন্য জমা দিলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তা উপেক্ষিত হলো। তাছাড়া লেজারের পূর্বসূরী মেসার (মাইক্রোওয়েভ-ভিত্তিক) নিয়ে ইতোমধ্যেই অনেক লেখা জার্নালটিতে জমা হয়েছিল। সম্পাদক স্যামুয়েল এ. গাউডস্মিট এ বিষয়ে আর কোনো লেখা প্রকাশ করতে চাননি। ওই জার্নাল থেকে মাইম্যান উপেক্ষিত হন ১৯৬০ সালের জুন মাস। এরপর একই বছর ৬ আগস্ট ‘স্টিমুলেটেড অপটিক্যাল রেডিয়েশন ইন রুবি’ শিরোনামে মাইম্যানের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় নেচার জার্নালে। এই প্রকাশনার সঙ্গে সঙ্গেই বিজ্ঞানীমহলে তা আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষত উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা।
সন্দেহ নেই, লেজার রশ্মির আবিষ্কার আলোকপ্রযুক্তিতে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিল্প, সামরিক প্রযুক্তি থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় লেজারের অবদান আজ অপরিসীম। লেজারের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরতে ১৬ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক আলোক দিবস। ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব লাইট উদ্যাপনের সাফল্যের পর ঘানা, মেক্সিকো ও রাশিয়ার প্রস্তাবে ২০১৭ সালে এই দিবসটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। তবে প্রথম এই দিবস পালিত হয় ২০১৮ সালে। এ বছর আন্তর্জাতিক আলোক দিবসের প্রতিপাদ্য—‘আলো, উদ্ভাবন, সমাজ’।
আন্তর্জাতিক আলোক দিবসের উদ্দেশ্য
লাইট ডে ডট অর্গানাইজেশন ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক আলোক দিবস উদ্যাপনের সাতটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো এখানে বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১. আলো এবং আলোক প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে এবং বৈশ্বিক সমাজের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে আলোর ভূমিকা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
২. তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষত উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা।
৩. শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে আলোর নিবিড় সম্পর্ককে তুলে ধরা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আলোক প্রযুক্তির ভূমিকা শক্তিশালী করা।
বিশেষ করে রাতের আকাশের অন্ধকার সংরক্ষণের জন্য আলোর দূষণ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, আলোর অপচয় রোধ করে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা
৪. বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং গবেষণা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে আলোক প্রযুক্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।
৫. আলোক প্রযুক্তির মৌলিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল পেশাকে উৎসাহিত করা।
৬. উন্নয়নশীল বিশ্বে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আলো ও জ্বালানি অবকাঠামোর সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং টেকসই উন্নয়নে আলোক প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা।
৭. আলোর অপচয় রোধে শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি পরিকল্পনা এবং দক্ষ আলোক নকশা তথা পরিকল্পিত ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে আলো ব্যবহারের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। বিশেষ করে রাতের আকাশের অন্ধকার সংরক্ষণের জন্য আলোর দূষণ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, আলোর অপচয় রোধ করে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, যাতে রাতের আকাশের স্বাভাবিক অন্ধকার অক্ষুণ্ণ থাকে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।