২০২৪ সালে প্রতি ৩৬ ঘণ্টায় পৃথিবী থেকে একটি করে রকেট যাত্রা করেছে মহাকাশের উদ্দেশে। পৃথিবীজুড়ে ২৫৯টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এ বছর। এর মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণের রেকর্ড ভাঙল মানবজাতি।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে অবস্থিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্পেস ফাউন্ডেশন প্রকাশিত দ্য স্পেস রিপোর্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মহাকাশযাত্রার পরিমাণ এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইউরোপে রকেট উৎক্ষেপণের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির নতুন উৎক্ষেপণকেন্দ্রগুলো প্রথমবারের মতো মহাকাশে রকেট পাঠানোর অপেক্ষায় আছে।
২০২৪ সালে এককভাবে সবচেয়ে বেশি রকেট মহাশূন্যে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স। মোট ১৩২টি ফ্যালকন ৯ রকেট মহাশূন্যের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছে গত বছর।
স্পেস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী হিদার প্রিঙ্গল বলেন, ‘মহাকাশ-অর্থনীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আমাদের উৎক্ষেপণের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।’
২০২৪ সালে এককভাবে সবচেয়ে বেশি রকেট মহাশূন্যে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স। মোট ১৩২টি ফ্যালকন ৯ রকেট মহাশূন্যের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছে গত বছর। এর মধ্যে প্রায় ৯০টি রকেট স্টারলিংক নেটওয়ার্কের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বহন করে নিয়ে গেছে মহাশূন্যে। ফলে পৃথিবীজুড়ে ইন্টারনেট যোগাযোগে নতুন যুগের শুরু হয়েছে। বলা প্রয়োজন, স্টারলিংক হচ্ছে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সেবাদানের একটি প্রকল্প। বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক স্টারলিংকের সেবা গ্রহণ করছেন। চলতি বছর স্টারলিংকের আয় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা।
এসবের পাশাপাশি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান রকেট উৎক্ষেপণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে স্পেসএক্স। সামরিক মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য গত বছর বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই দুটি প্রতিষ্ঠান। সব মিলে আগের বছরের তুলনায় এবার ৮৬% বৃদ্ধি পেয়েছে রকেট উৎক্ষেপণ।
যুক্তরাষ্ট্রের পরেই মহাকাশ জয়ের পথে এগিয়ে আছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় অর্ধেক রকেট পাঠিয়েছে দেশটি। পিছিয়ে নেই রাশিয়াও। পৃথিবীর কক্ষপথে তাদের স্যাটেলাইটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে মাত্র ২১টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছিল দেশটি, সেখানে ২০২৪ সালে পাঠিয়েছে ৯৮টি।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালে মহাকাশ কার্যক্রম আরও বাড়বে। স্পেসএক্স তো আছেই, ওদিকে আরেক ধনকুবের জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের রকেট নিউ গ্লেন যুক্ত হয়েছে গত বছর। একে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯-এর সফল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিউ গ্লেন রকেটটি ভবিষ্যতে অ্যামাজনের কুইপার প্রকল্পে কাজ করবে। এ প্রকল্প স্টারলিংকের মতোই তারহীন ইন্টারনেট সেবা দেবে পৃথিবীতে।
বাণিজ্যিক রকেট যাত্রাকে সহজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত স্পেকট্রাম বরাদ্দ করেছে।
এ ছাড়া রকেট ল্যাবের নিউট্রন রকেট, সিয়েরা স্পেসের ড্রিম চেসার মহাকাশযান এবং ইউরোপের জেফার, আরএফএ ওয়ান, প্রাইম ও স্কাইলার্ক এলের মতো প্রতিষ্ঠান রকেট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই অস্ট্রেলিয়ার নিজস্ব রকেট এরিস উৎক্ষেপিত হবে।
বাণিজ্যিক রকেট যাত্রাকে সহজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত স্পেকট্রাম বরাদ্দ করেছে। পাশাপাশি দ্রুততর করেছে রকেট উৎক্ষেপণের অনুমোদন প্রক্রিয়া। ফলে রকেট পাঠানোর জন্য মহাকাশ সংস্থাগুলোকে বারবার অস্থায়ী অনুমতি নিতে হবে না।
স্পেস ফাউন্ডেশনের দ্য স্পেস রিপোর্ট বলছে, ছোট রকেটগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ স্বাধীন উৎক্ষেপণ সক্ষমতা গড়ে তুলতে চাইছে। ২০২৫ সাল হবে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও ব্যস্ত একটি মহাকাশ-বছর।