ব্লু ঘোস্ট লুনার ল্যান্ডারের তোলা প্রথম ছবি প্রকাশ করল নাসা এবং স্পেসএক্স। পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করার সময় ল্যান্ডারটি এই ছবি তোলে।
গত ৩১ জানুয়ারি পৃথিবীর বেশ কিছু ছবি তোলে ল্যান্ডারটি। তবে সেখান থেকে মাত্র দুটি ছবি সাধারণ মানুষের জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই মিশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইলন মাস্কের স্পেসএক্স।
ল্যান্ডারটির গন্তব্য চাঁদ। তবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার আগে ২৫ দিন ব্যয় করছে পৃথিবীর কক্ষপথে। মূলত প্রয়োজনীয় গতিবেগ অর্জন করতেই এই সময় নিচ্ছে ঘোস্ট রাইডার ইন দ্য স্কাই নামে নভোযানটি। শিগগিরিই পৃথিবীর চারপাশে ২৫ দিন প্রায় পূর্ণ করতে যাচ্ছে এই নভোযান। এরপরই ব্লু ঘোস্ট পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
এর আগে, ১৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এই নভোযান। এই মিশনে নাসার নেতৃত্বাধীন ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক নতুন প্রযুক্তি চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তবে এই মিশনে রয়েছে দুটি ল্যান্ডার। মূল ল্যান্ডার হিসেবে রয়েছে ব্লু ঘোস্ট লুনার ল্যান্ডার, সঙ্গে বাড়তি পেলোড হিসেবে আরও রয়েছে জাপানের আইস্পেস নির্মিত রেজিলিয়েন্স লুনার ল্যান্ডার। এই ল্যান্ডারেই ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও কিছু পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি রয়েছে।
এর একটা হলো লুনার এনভায়রনমেন্ট হেলিওস্ফেরিক এক্স-রে ইমেজার বা লেক্সি। এটি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করবে। এই পর্যবেক্ষণের সাহায্যে চৌম্বকমণ্ডলে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াগুলো পৃথিবীতে বসে দেখতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। প্লাম-সারফেস স্টাডিজ (ক্যাল্পস) নামে দুটি স্টেরিও ক্যামেরা রয়েছে এই মিশনে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের দৃশ্য দেখা যাবে এই ক্যামেরার সাহায্যে। ব্লু ঘোস্টের ইঞ্জিন তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা দেখার জন্যই এই ব্যবস্থা।
ইলেকট্রোডাইনামিক ডাস্ট শিল্ড চাঁদের ধূলিকণার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবে। চেষ্টা করবে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিকিরণ পরিমাপের। এমনকি চাঁদের অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা নিয়েও গবেষণা করবে। স্পেসএক্সের পাশাপাশি এসব যন্ত্রপাতি তৈরিতে ভূমিকা রেখে এ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে আমাজনখ্যাত জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং সাউথ-ওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
যাহোক, পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে এটি চাঁদের কক্ষপথেও ১৬ দিন কাটাবে। তারপর সয়ংক্রিভাবে চাঁদে নামার প্রস্তুতি নেবে। এই ফ্লাইবাইয়ের মাধ্যমে চাঁদ ও পৃথিবীর মহাকর্ষ কাজে লাগিয়ে কম জ্বালানি খরচ করেই প্রয়োজনীয় বেগ অর্জন করবে ল্যান্ডারটি। এর লক্ষ্য চাঁদের ‘মেরে ক্রিসিয়াম’ ক্রেটার বা খাদ। এই প্রাচীন গর্তটি গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্টি হয়েছিল। এটি প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত।