সৌরকলঙ্ক কালো কেন?

পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য যে তাপ ও আলোর প্রয়োজন তার প্রায় পুরোটাই তৈরি হয় সূর্যের বুকে। কোটি কোটি বছর ধরে মূলত হাইেড্রাজেন পরমাণুর নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হচ্ছে সেখানে। সেই শক্তির একটা অংশ আমরা পাচ্ছি আলো হিসেবে। তারপরও সূর্যের গোটা শরীর সমান উজ্জ্বল নয়। মাঝে মাঝে কিছু কালো দাগ বা বিন্দু দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন সানস্পট বা সৌরকলঙ্ক। কিন্তু কেন এই সৌরকলঙ্ক তৈরি হয়? কালোই বা হয় কেন এগুলো?

আলোক দূরবিনের দিয়ে সূর্যের বাইরের গভীরতম যে স্তরটা দেখা যায়, তাকে বলা হয় ফটোস্ফিয়ার। একদম বাইরের স্তরটি হচ্ছে করোনা। সৌরকলঙ্ক ফটোস্ফিয়ার স্তরের একটা ঘটনা।

সৌরকলঙ্ক দেখতে কালো হয় কেন, এই প্রশ্নের উত্তর সহজ। সূর্যের ফটোস্ফিয়ারের সাধারণ তাপমাত্রা প্রায় ৩৭ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭৭ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানকার কিছু কিছু জায়গার তাপমাত্রা এর থেকে অনেক কম। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে সেই জায়গাটা কালো দেখায়। অর্থাৎ, সৌরকলঙ্ক কালো হওয়ার কারণ কম তাপমাত্রা।

যখন কোনো পরমাণু উত্তপ্ত হয়, তখন এর ইলেকট্রন শক্তি শোষণ করে উচ্চস্তরে পৌঁছায়। অতিরিক্ত এই শক্তি ফোটন বা আলো হিসেবে বিকিরণ করে ইলেকট্রন আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। তাপমাত্রা যত বেশি হয়, পদার্থ থেকে নির্গত আলোর তীব্রতাও তত বেশি হয়। তাপমাত্রা কমে গেলে ঘটে উল্টো ঘটনা। তীব্রতা কমে যাওয়ার কারণে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল দেখায়।

এবার আসে আরেক প্রশ্ন। কেন ফটোস্ফিয়ারের কোনো অংশের তাপমাত্রা কমে যায়? এই ব্যাপারটা বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি এখনো। তবে, তারা দেখেছেন সূর্যের যেসব এলাকায় চৌম্বকক্ষেত্রের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে, সেসব এলাকাতে তৈরি হয় সৌরকলঙ্ক।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তীব্র চৌম্বকক্ষেত্রগুলো তার চারপাশের ফটোস্ফিয়ারে তাপ নিঃসরণে বাধা দেয়। ফলে বাকি ফটোস্ফিয়ারের তাপমাত্রায় তুলনায় কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস কম হয় এসব এলাকার তাপমাত্রা। এ কারণে এখানকার উজ্জ্বলতা প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে যায়। পুরো ফটোস্ফিয়ারের তীব্র উজ্জ্বলতার প্রভাবে এই জায়গাগুলো কালো দেখায়।

আসলে সৌরকলঙ্ক পুরোপুরি কালো নয়। যদি কোনভাবে একটি সৌরকলঙ্ক সূর্য থেকে আলাদা করে রাতের আকাশে রাখা যেত, তাহলে সেটা ভরা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল দেখতাম আমরা।

সৌরকলঙ্ক কিন্তু স্থায়ী কোনো ঘটনা নয়। চৌম্বকক্ষেত্রের তীব্রতা পরিবর্তনের সাথে সাথে সৌরকলঙ্কও হারিয়ে যায় আবার অন্য জায়গায় তৈরি হয়। পরিবর্তন হয় এর আকার। সৌরকলঙ্কের আকার মোটামুটি ১০০ থেকে ১০ হাজার মাইলের মধ্যে থাকে। তবে, গড়-পড়তা একেকটি সৌরকলঙ্কের আকার প্রায় পৃথিবীর সমান।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, নাসা