অপসুর শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

অপসুরের ইংরেজি Aphelion। সূর্যের চারপাশে কক্ষপথ গ্রহগুলোর গতি বোঝাতে শব্দটি সতেরো শতকে প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জার্মান জ্যোতির্বিদ, গণিতবিদ জোহানেস কেপলার। সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে কোনো গ্রহের সবচেয়ে দূরের অবস্থানকে বলা হয় এপহিলিয়ন বা অপসুর। গ্রিক শব্দ apo এবং helios যোগ করে aphelion শব্দটির উদ্ভব। এখানে apo অর্থ দূরে, আর helios হলো গ্রিকদের সূর্যদেবতা। বলে রাখা ভালো, হিলিয়াম শব্দটিরও উৎপত্তি হয়েছে এই হেলিয়স শব্দ থেকে। কারণ, সূর্যেই প্রথম হিলিয়াম গ্যাসের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছিল। aphelion শব্দটির বাংলা করা হয়েছে অপসুর। অপ অর্থ দূর এবং সুর বা সূর অর্থ দেবতা ও সূর্য। কাজেই অপসুরের আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় সূর্য থেকে দূরে, যা ইংরেজি aphelion শব্দের যথার্থ অর্থ। পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব সাধারণত ৪ জুলাই সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যখানের দূরত্ব থাকে ১৫ কোটি ২০ লাখ কিলোমিটার (১৫২ মিলিয়ন কিমি বা প্রায় ৯৫ মিলিয়ন মাইল)।

কেপলারের পথ অনুসরণ করে অন্য শব্দের আগে apo এবং peri উপসর্গ যোগ করে নতুন আরও কিছু শব্দ তৈরি করা হয়েছে। যেমন নাসার অ্যাপোলো কার্যক্রম চলার সময় চাঁদের চারপাশের কক্ষপথে ঘোরার জন্য দুটি শব্দ ব্যবহার করা। সেগুলো হলো পেরিসিনথিয়ন (pericynthion) এবং অ্যাপোসিনথিয়ন (apocynthion)। এখানে গ্রিক শব্দ সিনথিয়া (Cynthia) অর্থ চাঁদ। আবার পদার্থবিদ এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখক জিওফ্রে এ ল্যান্ডিস ১৯৯৮ সালে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন পেরিমেলাসমা ও অ্যাপোমেলাসমা। এরপর অবশ্য ২০০২ সালে কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল পেরিনিগ্রিকন এবং অ্যাপোনিগ্রিকন। এ ছাড়া কোনো গ্যালাক্সির দূরের বিন্দু বোঝাতে ব্যবহার করা হয় অ্যাপোগ্যালাকটিকন। একইভাবে নক্ষত্রের দূরের বিন্দু অ্যাপোসট্রোন, বুধের জন্য অ্যাপোহারমিয়ন, শুক্রের জন্য অ্যাপোসিনথেরিয়ন, পৃথিবীর জন্য অ্যাপোজি, মঙ্গলের জন্য অ্যাপোএরিয়ন, বৃহস্পতির জন্য অ্যাপোজিনি বা অ্যাপোজোভ, শনির জন্য অ্যাপোক্রোন বা অ্যাপাস্যার্টানিয়াম, ইউরেনাসের জন্য অ্যাপোইউরেনিয়ন, নেপচুনের জন্য অ্যাপোসেইডিয়ন এবং প্লুটোর দূরের বিন্দুর জন্য অ্যাপোহ্যাডিয়ন।