চাঁদের মাটির গভীরে

স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। সোভিয়েত রাশিয়ার নাগরিক ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীর চারপাশ থেকে ঘুরে এসেছেন। তার কিছুদিন পর মহাকাশ থেকে ঘুরে এসেছেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। রাশিয়া শুধু মানুষ পাঠিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। কুকুরও পাঠিয়েছে!

মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি ঘোষণা দিয়েছিলেন, আমেরিকা শুধু পৃথিবীর চারপাশে মানুষ পাঠিয়েই থেমে যাবে না। তারা চাঁদেও মানুষ পাঠাবে। সেই ঘোষণা সত্য হয়েছে। নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন চাঁদ থেকে ঘুরে এসেছেন। ২১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের এই পরিভ্রমণ শেষে ফেরার সময় চাঁদ থেকে নিয়ে এসেছেন ২২ কেজি পাথর আর ধুলাবালু। যদিও ধুলাবালু বলা হচ্ছে, কিন্তু এগুলো আসলে পৃথিবীর বালুর মতো নয়। বিভিন্ন উদ্ভিদের পাতা ও অন্যান্য অংশ মাটির সঙ্গে পচে-গলে মিশে গেলে হিউমাস তৈরি হয়। পৃথিবীর বালুতে হিউমাস আর পানি থাকে, ফলে নতুন উদ্ভিদ জন্মাতে পারে। চাঁদের বালুতে সেসবের ছিটেফোঁটাও নেই। আছেটা কী? কথা আসলে সেটা নিয়েই।

২৫ জুলাই লুনার রিসিভিং ল্যাবরেটরিতে (LRL) এসব বালু-পাথর এসে পৌঁছায়। নাসা আগে থেকেই সে জন্য কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ১৪০ জন গবেষককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারা। তাঁদের কাজ হলো চাঁদের এই নমুনার রাসায়নিক এবং আইসোটোপিক বিন্যাস, এর ভৌতদশা, এর মধ্যকার খনিজ পদার্থ এবং পাথরের বিভিন্ন বিন্যাস ও উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখা। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন জন এ উড, যিনি চাঁদ নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি চিরদিনের জন্য পাল্টে দিয়েছিলেন। উডকে ১০ গ্রামের মতো নমুনা দেওয়া হয়। খালি চোখে এই সামান্য পরিমাণ নমুনার রং বা ধরন আহামরি কিছু নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের কি আর খালি চোখের ওপর নির্ভর করলে চলে?

উড তখন স্মিথসোনিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরিতে (SAO) কাজ করেন। গবেষণা শুরু করতে গিয়ে তিনি টের পেলেন আরও লোক লাগবে। পেট্রোলজি বা পাথরবিদ্যায় সদ্য পিএইচডি করা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন ডিকি এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেন পাওয়েলকে দলে নিলেন তিনি। সেই সঙ্গে সাওয়ের এক সহকর্মী আর্সেলা মারভিনকে একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানালেন। মারভিন আবার খনিজ পদার্থ এবং এক্স–রে ডিফ্র্যাকশন বিশেষজ্ঞ। ইলেকট্রন প্রোব মাইক্রো-অ্যানালাইজার চালানো এবং দেখাশোনার জন্য নেওয়া হলো জ্যানিস বাওয়ার নামের ওয়েন্টওর্থ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এক শিক্ষার্থীকে। ভ্যাকুয়াম বা বায়ুশূন্য স্থানে প্রচণ্ড গতির ইলেকট্রন রশ্মি দিয়ে নমুনাকে আঘাত করলে সেটা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় ইলেকট্রন প্রোব মাইক্রো-অ্যানালাইজার এক্স–রে করে নেয়, যেটা পরে বিশ্লেষণ করে নমুনার রাসায়নিক উপাদান এবং বিন্যাস বের করা যায়। এই পাঁচজন মিলে তৈরি হলো সাও লুনার স্যাম্পল টিম। শুরু হলো গবেষণা।

সবার আগে নমুনাগুলোকে বাইনোকুলার মাইক্রোস্কোপের নিচে রাখা হলো। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, নমুনার পুরোটাই হবে বিচূর্ণ খনিজের গুঁড়া। অবাক বিস্ময়ে তাঁরা আবিষ্কার করলেন, তাঁদের ধারণা ভুল। নমুনার মধ্যে প্রচুর ক্ষুদ্রাকৃতির পাথর আছে, যাদের মধ্যকার খনিজ যেমন ভিন্ন, তেমনি এদের গঠন-বিন্যাসও আলাদা। এক চামচ চন্দ্র-নমুনায় শত শত রকমের রাসায়নিক পদার্থ ঘুমিয়ে আছে! ১৯৬৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁদের নমুনাগুলো দেওয়া হয়েছিল। পরের বছরের ৫ জানুয়ারির মধ্যে ফলাফল রিপোর্ট করতে হবে। হাতে সময় ১১০ দিনের কম। বিজ্ঞানীরা হামলে পড়লেন। এ রকম সুযোগ জীবনে বারবার আসবে না।

নমুনা বিশ্লেষণ করার জন্য তাদের ঠিকভাবে বিন্যস্ত করতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন নমুনাকে আলাদা করে রাখতে হয়। ক্রমিক নম্বর দিয়ে, ছবি তুলে রিপোর্ট ফাইল তৈরি করতে হয়। কারণ, একই নমুনা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে। একটার সঙ্গে আরেকটা মিলে গেলে চলবে না। উড ও তাঁর দল সেভাবেই কাজে নামল। দেখা গেল, তাদের হাতে ১ হাজার ৬৭৬টি ভিন্ন ধরনের নমুনা আছে।

বিশ্লেষণ শেষে সব তথ্য এক জায়গায় জড়ো করার পর দেখা গেল, অর্ধেকের মতো নমুনাই আসলে সয়েল ব্রেকিয়া। ইতালিয়ান ‘ব্রেকিয়া’ কথাটার অর্থ চূর্ণ। আসলে কোনো সংঘর্ষের ফলে বা প্রচণ্ড চাপে ধুলাবালু যখন জমে পাথরে পরিণত হয়, তাকে ব্রেকিয়া বলে।

উডের দলের নিয়ে আসা নমুনা

বাকি ৫০ শতাংশের ৪০ শতাংশই হলো লাভা উদ্‌গিরণের ফলে তৈরি ক্রিস্টালাইন ইগনিয়াস পাথর। বিজ্ঞানীরা আগেই ধারণা করেছিলেন, ‘লুনার মারিয়া’য় লাভার আস্তরণ থাকবে। এখানে লুনার কথাটার মানে যে চাঁদ, সেটা সবারই জানার কথা। আর মারিয়া বা মেয়ার শব্দের অর্থ সাগর।

আসলে চাঁদের কিছু অঞ্চল সাদাটে। এদের বলে হাইল্যান্ডস বা উঁচু ভূমি। এই অঞ্চলগুলোর নাম টের‍্যা। আর কিছুটা কালচে দেখতে অঞ্চলগুলো তুলনামূলক নিচু ধরনের। এদের বলে মারিয়া বা মেয়ার। এসব অঞ্চলে মূলত লোহা, ব্যাসল্ট ও বিভিন্ন ধাতব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে এরা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কম প্রতিফলন করে। নভোচারীরা প্রথমে কালচে এই অঞ্চলগুলোকে দেখে সাগর ভেবেছিলেন। পরে তাঁদের ভুল ভেঙেছে, কিন্তু সেই নাম রয়ে গেছে। যা–ই হোক, এই ক্রিস্টালাইন পাথরগুলোতে অনেক ধরনের খনিজের বিন্যাস পাওয়া গেছে। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। চাঁদের অনেকটা গভীর থেকে পৃষ্ঠতলে উঠে আসতে আসতে নানা ধরনের পদার্থ একে অন্যের সঙ্গে মিশে গেছে। পৃষ্ঠতলের ওপরে এসে পড়ার পরও তাপমাত্রা কমে শীতল হতে অনেক সময় লেগেছে। এ সময় এসব খনিজ লাভার সঙ্গে ধুলাবালু মিশেছে এবং একসময় এভাবেই জমে গেছে নমুনাগুলো। এসব নমুনায় ব্যাসল্ট নামের একধরনের পাথরের পরিমাণ বেশি পাওয়া গেলেও নানা রকম বিন্যাসে বিন্যস্ত অন্য বিভিন্ন ধরনের পদার্থও পাওয়া গেছে।

নমুনার বাকি ৫ শতাংশ হলো কাচ। সংঘর্ষের প্রবল শক্তি পাথর বা বালুকে গলিয়ে ফেলে। তারপর প্রায় বায়ুশূন্য স্থানে জিনিসগুলো বেশ দ্রুত ঠান্ডা হয়ে তৈরি করেছে কাচ। নমুনায় কাচের পরিমাণ দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে গেলেন কিন্তু তাঁদের জন্য আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল।

অ্যানোর্থোসাইট

নমুনায় খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে একধরনের সাদা রঙের পাথর পাওয়া গেল। জিনিসটার নাম অ্যানোর্থোসাইট। একসময় গলিত অবস্থায় থাকলেও পরে জমে পাথর হয়ে গেছে। এর পরিমাণ হবে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এর মধ্যে অন্য কিছু রাসায়নিক থাকলেও মূলত অ্যানোর্থাইট (CaAl2Si2O8) থাকে। পৃথিবীতে এর পরিমাণ খুবই অল্প। দুর্লভ এই খনিজের একটা বড় অংশ নিউইয়র্কের অ্যাডিরন্ড্যাক পর্বতের গহিনে রয়ে গেছে। কথা হলো, ক্যালসিয়াম আর অ্যালুমিনিয়ামসমৃদ্ধ এই খনিজ চাঁদের বুকে কেমন করে এল?

এই প্রশ্নের উত্তর বোঝার জন্য একেবারে শুরু থেকে শুরু করতে হবে। প্রথম প্রশ্ন হলো, নভোচারীরা এগুলো কীভাবে পেলেন? এর উত্তরটা অবশ্য খুব কঠিন নয়। অ্যাপোলোর ‘ইগল’ ল্যান্ডার চাঁদের ট্র্যাংকুইলিটি বেসে নেমেছিল। এটি ট্র্যাংকুইলিট্যাটিস মেয়ারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটি অঞ্চল। আগেই বলেছি, মেয়ার বা মারিয়া—মানে সাগর বলে মনে হওয়া এই অঞ্চলগুলোতে ধাতব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি। এ জন্য এদের কিছুটা কালচে দেখায়। ট্র্যাংকুইলিটি বেসের জন্যও একই কথা খাটে। এর ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে শুরু হয়েছে চাঁদের সাদাটে হাইল্যান্ডস অঞ্চল বা টের‍্যা। যেহেতু অ্যানোর্থোসাইট দেখতেও সাদাটে, ধারণা করা যায়, এগুলো টের‍্যা অঞ্চল থেকেই এসেছে। হয়তো কোনো সংঘর্ষের ফলে কিছুটা অ্যানোর্থোসাইট ছিটকে এসে পড়েছে ট্র্যাংকুইলিটি বেসে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, এই অ্যানোর্থোসাইট কি টের‍্যা অঞ্চলের কেবল কিছু অংশে রয়েছে, নাকি পুরোটাজুড়েই ছড়িয়ে আছে? চন্দ্রপৃষ্ঠের ৮০ শতাংশই এই টের‍্যা পাথরে তৈরি। যদি পুরোটাজুড়েই অ্যানোর্থোসাইট ছড়িয়ে থাকে, তার মানে চাঁদের গঠনের পেছনে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই প্রশ্নের জবাব পেতে বিজ্ঞানীরা কিছুকাল আগে চাঁদে পরিচালিত একটি রোবটিক মিশনের দারস্থ হলেন। সার্ভেয়ার-৭ নামের এই মিশনে আলফা-স্ক্যাটারিং সারফেস অ্যানালাইজার নামের একটি যন্ত্র ছিল। ট্র্যাংকুইলিটি বেস থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরের টাইকো অঞ্চলের রাসায়নিক উপাদানের বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করেছিল যন্ত্রটি। দেখা গেল, যন্ত্রটি পূর্ণাঙ্গ কোনো বিশ্লেষণ চালায়নি। তবে এর সংগৃহীত তথ্য থেকে ভালো রকম অ্যানোর্থোসাইটের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। সহজ কথায় ব্যাপারটা এমন: যেসব অঞ্চলে বিশাল কিছু আছড়ে পড়ার ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠের ওপরের অংশটুকু ভেঙেচুরে নিচের ব্যাসল্টিক লাভা বেরিয়ে পড়েছে, সেসব অঞ্চল ছাড়া চাঁদের বাকি সবটুকু জায়গায় অ্যানোর্থোসাইটের আস্তরণ রয়ে গেছে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই আস্তরণ কতটা পুরু? আইসোট্যাসি নীতি ব্যবহার করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়।

সহজ ভাষায় জিনিসটা হলো, হালকা যেকোনো কিছু ওপরে ভেসে থাকবে এবং তুলনামূলক ভারী জিনিস থাকবে নিচে। পৃথিবীতে যে বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড়-পর্বত গড়ে ওঠে, সেটাও এভাবেই হয়। নিচের দিকের পাথরগুলো ভারী এবং ওপরের দিকেরগুলো হালকা ধরনের হয়। কোনোভাবে ওপরের পাথর ভারী হয়ে গেলে হয় সেটা ভেঙে পড়বে, আর না হয় এমনভাবে কিছুটা সরে যাবে, যেন নিচের দিকের হালকা পাথর ওপরে উঠে আসতে পারে। হালকা পাথরের ওপর যেন কোনোভাবেই ভারী পাথর না থাকে, এটাই আসল কথা। চাঁদের মোট ঘনত্ব হলো ৩.৩ g/cm3। আর ওপরের এই ক্রাস্ট বা হালকা অঞ্চলটুকুর ঘনত্ব ২.৯ g/cm3। হিসাব কষে বিজ্ঞানীরা বুঝলেন, এটা কেবল তখনই সম্ভব, যদি অ্যানোর্থোসাইটের আস্তরণের পুরুত্ব ২৫ কিলোমিটারের মতো হয়!

এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা উঠল। এত বিপুল পরিমাণ অ্যানোর্থোসাইট কোত্থেকে এসেছে? নিশ্চয়ই অনেকটা বিগলিত ম্যাগমা, মানে পৃষ্ঠতলের নিচের বা অনেকটা গভীরের কোনো উত্তপ্ত তরল জমে তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে ক্রিস্টালাইজেশনের যে হিসাব বিজ্ঞানীরা পাচ্ছেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, চাঁদের একদম কেন্দ্রের দিকে আছে অলিভাইন। তার ওপরে আছে সামান্য কিছু পাইরোক্সিন। তার ওপরের একটা বিশাল অংশজুড়ে আছে ক্যালসিক ফেল্ডস্পার বা অ্যানোর্থাইট। এর কিছুটা ওপরে আছে সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম। বিগলিত দশা থেকে জমাট বাঁধার সময় অ্যানোর্থাইট যেহেতু হালকা, এরা চলে এসেছে ওপরে। আর অলিভাইন ভরের কারণে নিচের দিকে পড়ে গেছে। এভাবেই চাঁদের ওপরের অংশে তৈরি হয়েছে অ্যানোর্থোসাইটের আস্তরণ।

৫ জানুয়ারি অন্যান্য দল যখন নিজেদের গবেষণার কথা জানাল, তারাও অ্যানোর্থোসাইট পেয়েছে বলে জানা গেল। কিন্তু এর আদৌ কোনো গুরুত্ব আছে বলে তাদের কাছে মনে হয়নি। সে জন্য তারা এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। উড নিজেদের রিপোর্টে এটির ওপরেই জোর দিলেন। কারণ, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেয়—চাঁদের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?

চাঁদ কি আগে শীতল ছিল নাকি উত্তপ্ত ছিল? এর উত্তর আগে জানা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হতো পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে চাঁদ। তার মানে এটি শীতল ছিল। হ্যারল্ড উর‍্যে নামের এক বিখ্যাত নোবেলজয়ী এই মতামত দিয়েছিলেন। কিন্তু বিগলিত ধাতু জমে গিয়ে অ্যানোর্থোসাইটের যে আস্তরণ তৈরি করেছে, সেটি বলে, চাঁদ একসময় প্রচণ্ড উত্তপ্ত ছিল। না হয় এত বিপুল পরিমাণ ধাতু কোনোভাবেই গলে যেত না। এ কথা শুনে সেদিন উপস্থিত সব বিজ্ঞানী নড়েচড়ে বসেছিলেন।

তারপর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, এটাই সত্যি। উৎপত্তির সময় চাঁদ প্রচণ্ড উত্তপ্ত ছিল। এর পেছনের কারণটাও জানা গেল কয়েক বছরের মধ্যে। মঙ্গলের আকৃতির কোনো গ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে চাঁদ। এর ফলে প্রচণ্ড তাপ তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে তৈরি হবে গলিত ম্যাগমা। এ থেকে কীভাবে আর সবকিছু তৈরি হলো, সেটা তো আগেই বলেছি।

বেশির ভাগ সময় মানুষের চন্দ্র বিজয় নিয়ে কথা উঠলে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পালাবদল এবং নতুনের জয়গানের কথা উঠে আসে। কিন্তু আমরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ভুলে যাই। অ্যাপোলো-১১–এর মিশন থেকে আমরা জেনেছি চাঁদের উৎপত্তির পেছনের গল্প। সেই সঙ্গে অন্যান্য গ্রহের চাঁদগুলোর উৎপত্তি কিছুটা ভিন্নভাবে হলেও মূলত এরকমই কিছু সংঘর্ষের ফলেই যে এদের জন্ম হয়েছে, সে ব্যাপারে একটা সাধারণ ধারণাও পেয়েছি। বুঝেছি, এদের গঠন বা রাসায়নিক অবস্থা কেমন হতে পারে। সৌরজগতের ব্যাপারে আমাদের এর আগের ধারণার দারুণ উন্নতি হয়েছে এর ফলে।

চাঁদে অভিযানের এই গুরুত্ব আজকের জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সূত্র: স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ ম্যাগাজিন, উইকিপিডিয়া

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার জুলাই ২০২৯ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়