বোর-আইনস্টাইন বিতর্ক

একটা সময় কেমব্রিজ ছিল বিজ্ঞানের তীর্থভূমি। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের। কিন্তু গত শতাব্দীর বিশের দশকে কোপেনহেগেন হয়ে উঠেছিল কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের নিউক্লিয়াস। লন্ডন, মিউনিখ, গটিংগেন, প্যারিস ছেড়ে কোপেনহেগেন কেন?

কারণ, কণা কোয়ান্টামের গুরু নীলস বোর তখন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ঝাঁকে ঝাঁকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ শিক্ষার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, নীলস বোরের কাছ থেকে পাঠ নিতে। সেই শিক্ষার্থীদের তালিকায় ছিলেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গও।

হাইজেনবার্গ তখন নীলস বোরের বাড়িতেই থাকেন, ছাদের ওপরে চিলেকোঠার পাশে এক ঘরে। হাইজেনবার্গ সদ্যই তখন ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা প্রকাশ করেছেন। তার ফলেই বেরিয়ে আসছে কোয়ান্টাম কণিকাদের, বিশেষ করে ইলেকট্রনের অদ্ভুত সব চরিত্র। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার হাতে পড়ে ইলেকট্রনের মতো খুদে কণাদের চরিত্র-ধর্ম যে অদ্ভুত হয়ে উঠছে, তার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাইজেনবার্গ গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন, ভাবেন, অঙ্ক কষেন। নীলস বোর মাঝে মাঝে মাঝরাতে হানা দেন হাইজেনবার্গের ঘরে। গল্প করেন গভীর রাত পর্যন্ত। খোশগল্প নয়, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার চরিত্র বিশ্লেষণের গল্প। অদ্ভুত সব ব্যাপারস্যাপার বিজ্ঞানে আবির্ভূত হচ্ছে। সে সবের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু হাইজেনবার্গ নয়, মাঝে মাঝে ম্যাক্স বর্ন আসেন, পাওলি আসেন, দ্য ব্রগলি আসেন। বোরের সঙ্গে আলোচনা করেন, নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তগুলোর একটা হিল্লে হওয়া দরকার।

এর কিছুদিনের মধ্যে অনিশ্চয়তার নীতিও প্রকাশ করে ফেলেছেন হাইজেনবার্গ। কোয়ান্টামের জগত্টা তখন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল। বিশেষ করে অনিশ্চয়তার উত্স কোথায়, ইলেকট্রনের ধর্মে না পরীক্ষাধীন যন্ত্রে?

আলবার্ট আইনস্টাইন ও নীলস বোর

আসলে দুই দিকেই অনিশ্চয়তা আছে। সে বিষয়টা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য ১৯২৬ সালে বোর সম্পূরক নীতির জন্ম দিলেন। আসলে বোর সম্পূরক নীতি প্রবর্তন করে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতিরই পূর্ণতা দিলেন। তিনি বললেন, ইলেকট্রনের একই মুহূর্তের অবস্থান ও ভরবেগ মাপা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব একই যন্ত্র দিয়ে দুটোকে মাপা। বোরের কথার অর্থ হলো, যে যন্ত্র দিয়ে আপনি অবস্থান মাপতে পারবেন, সেই একই যন্ত্র দিয়ে ইলেকট্রনের ভরবেগ পরিমাপ করতে পারবেন না। ভরবেগ মাপার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা যন্ত্রের দরকার হবে। ভরবেগ মাপার যন্ত্রটি হবে অত্যন্ত হালকা। এই যন্ত্রের সাহায্যে ভরবেগের ত্রুটি আপনি সর্বনিম্ন মানে নিয়ে আসতে পারবেন। আবার অবস্থান নির্ণয়ের যন্ত্রটি হবে খুবই ভারী। সেটা ভরবেগের ত্রুটি অসীমে নিয়ে যাবে, কিন্তু অবস্থানের ত্রুটি সর্বনিম্ন মানে নামিয়ে আনবে।

সম্পূরক নীতি আর অনিশ্চয়তা মিলিয়ে বোর আর হাইজেনবার্গ একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন ১৯২৬ সালের শেষ দিকে। অবশ্য তত দিনে শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ ফাংশনও প্রকাশ হয়ে গেছে। তাই সব মিলিয়ে কোয়ান্টাম কণাদের চরিত্রের একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন বোর-হাইজেনবার্গ। সেটাই কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা নামে অমর হয়ে গেছে। কী বলেছিলেন দুই বিজ্ঞানী কোপেনহেগেন ব্যাখ্যায়?

পরমাণুতে ইলেকট্রন কোথায় থাকে? এটা বড় প্রশ্ন। এ প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এ কথাই বলা হয়েছিল কোপেনগেহেন ব্যাখ্যায়। বলা হয়েছিল, যতক্ষণ ইলেকট্রনের অবস্থান মাপা না হচ্ছে, ততক্ষণ এর নির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নেই। তরঙ্গ ফাংশনের যেসব জায়গায় এর থাকার সম্ভাবনা আছে, তার প্রতিটি বিন্দুতেই ইলেকট্রন থাকবে। কিন্তু আমরা যখন কোনো বিন্দুতে ইলেকট্রনকে দেখতে চাইব, তখনই সে জায়গায় তাকে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সেই বিন্দুতে তরঙ্গ ফাংশন ভেঙে পড়বে বা কলাপ্স করবে। আর সেই বিন্দুতে কণা হিসেবে আমরা দেখতে পাব ইলেকট্রনকে।

সম্পূরক নীতি, অনিশ্চয়তা তত্ত্ব, দ্য ব্রগলির দ্বৈত তত্ত্ব আর শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ ফাংশন মিলিয়ে কোয়ান্টাম কণাদের যত অদ্ভুত বিষয় আছে, সেগুলোর বর্ণনা আর ব্যাখ্যাই হলো কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা।

এই ব্যাখ্যাগুলো কোনো জার্নালে প্রকাশ করা হয়নি। ১৯২৭ সালে যে সলভে সম্মেলন বসে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে, সেখানে তুলে ধরা হয় এই ব্যাখ্যাগুলো। এসব শুনে খেপে উঠেছিলেন আইনস্টাইন।

১৯২৭ সাল থেকেই আইনস্টাইন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিরোধিতা শুরু করেন। বিশেষ করে অনিশ্চয়তা নীতি নিয়ে তাঁর প্রবল আপত্তি ছিল। তখনকার তরুণ, প্রবীণ প্রায় সব বিজ্ঞানীই কোয়ান্টামের প্রেমে মজেছেন, মেনে নিয়েছেন অনিশ্চয়তা তত্ত্ব। শুধু আইনস্টাইন বিষয়টা মানতে পারছেন না। অবশ্য একজনকে সঙ্গে পেয়েছিলেন। আরউইন শ্রোডিঙ্গার। অথচ এখন দেখছেন, শ্রোডিঙ্গার আর হাইজেনবার্গের তত্ত্ব মিলেমিশে অনিশ্চয়তা তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এর শুরুটা মোটেও সুখকর ছিল না। শ্রোডিঙ্গার-আইনস্টাইন, কেউই হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা মানতে পারেননি। অন্যদিকে হাইজেনবার্গও মানতে পারেননি শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ বলবিদ্যা। বিরোধ তুঙ্গে উঠল একসময়। আইনস্টাইনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, ইলেকট্রন এক কক্ষপথ থেকে আরেক কক্ষপথে লাফ দেয় কীভাবে? সে কথা তিনি ম্যাক্স বর্নের কাছে জানতে চাইলেন। বর্ন যে জবাব দিয়েছিলেন, তাতে আইনস্টাইনের মনে হয়েছিল, এই জবাব সত্যি হলে তাঁর ব্যাখ্যা করা ফটো তড়িৎক্রিয়াও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়। ফোটনের আঘাতে কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রন নাকি নিজেই ঠিক করবে, সে কোন দিকে যাবে! আইনস্টাইনের কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হলো। বললেন, বিজ্ঞান এতটাই অনিশ্চিত হবে আগে জানলে বিজ্ঞানী হতাম না, হতাম সরাইখানার বেয়ারা নয়তো ফুটপাতের মুচি।

এরপর শুরু হলো চ্যালেঞ্জ, পাল্টা চ্যালেঞ্জ। তৈরি হলো একটা যুদ্ধক্ষেত্র। ১৯২৭ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে বিজ্ঞানীদের সম্মেলন। সলভে সম্মেলন। সেই সম্মেলনে মুখোমুখি হলো দুই দল।

সেখানেই আইনস্টাইনের যুক্তি খণ্ডণ করলেন বোর, তাঁর সম্পূরক নীতি ব্যাখ্যা করলেন। আইনস্টাইন তাঁর বিপরীতে কোনো যুক্তি দিতে পারলেন না। হার হলো তাঁদের। তবু আইনস্টাইন মানতে পারেননি অনিশ্চয়তা তত্ত্ব।

বোর কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা দিলেন। শ্রোডিঙ্গার সেটা মেনে নিলেন। অন্য যেসব বিজ্ঞানীর অনিশ্চয়তা তত্ত্ব নিয়ে সন্দেহ ছিল, তাঁরাও মেনে নিয়েছিলেন কোপেনেহেগেন ব্যাখ্যা। মানতে পারেননি কেবল আইনস্টাইন। সেটা আমৃত্যু। বোরের ব্যাখ্যা অসার প্রমাণের জন্য তিনি নানা রকম চেষ্টা-চরিত্র করেন। আসলে আইনস্টাইন সুনির্দিষ্ট তত্ত্বে বিশ্বাসী। পদার্থবিজ্ঞানে অনিশ্চয়তা তত্ত্বের মতো পরাবাস্তব একটা বিষয় এসে পড়বে, এটাই মানতে পারছিলেন না। বোর তাঁকে বোঝাতে পারছিলেন না, সাধারণ চিরায়ত জগতের সঙ্গে কোয়ান্টাম জগতের ফারাক যোজন যোজন। বাস্তব জগতে যেটা অসম্ভব মনে হয়, কোয়ান্টাম জগতে সেটাই সম্ভব।

১৯৩৫ সাল। আইনস্টাইন অনিশ্চয়তা তত্ত্বের ওপর আরেকবার আঘাত হানতে চাইলেন। প্রমাণ করতে চাইলেন, বোর ভুল। এ জন্য তিনি সামনে টেনে আনলেন আপেক্ষিকতা থেকে বেরিয়ে আসা তাঁর চিরায়ত সেই স্বীকার্য—কোনো বস্তুর বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হতে পারে না।

আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা প্রকাশের আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মহাকর্ষ বল দূরক্রিয়া। অর্থাৎ মহাকর্ষ বলের খবর পৌঁছাতে সময় লাগে না। ধরা যাক, কোনোভাবে সূর্য ধ্বংস হয়ে গেল। তার প্রভাব পৃথিবীর ওপরে পড়বে। সূর্য না থাকলে পৃথিবীও আর নিজের কক্ষপথে ঘুরতে পারবে না। সরলরৈখিক গতিতে ছিটকে যাবে অসীম মহাশূন্যের দিকে। কিন্তু পৃথিবী কতক্ষণে বুঝবে সূর্য ধ্বংস হয়ে গেছে? কখনই-বা সে বন্ধ করে দেবে কক্ষপথে ঘোরা?

নিউটনের সূত্র বলে, মহাকর্ষ বলের প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে, দুটি বস্তু যত দূরেই থাক। তাই সূর্য ধ্বংস হয়ে গেলে পৃথিবী সঙ্গে সঙ্গেই সে খবর পেয়ে যাবে। নিজের কক্ষপথে ঘোরা বাদ দিয়ে ধেয়ে যাবে অসীম মহাশূন্যের দিকে। কিন্তু আইনস্টাইন বললেন, সেটা সম্ভব নয়।

বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব গড়েই উঠেছিল ওই স্বীকার্যের ওপর ভিত্তি করে—মহাবিশ্বের কোনো কিছুর বেগ আলোর চেয়ে বেশি হতে পারে না। তাই আলোর বেগের চেয়ে বেশি গতিতে কোনো তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব নয়। সুতরাং মহাকর্ষ বলকেও সেটা মানতে হবে। মহাকর্ষীয় প্রভাব কখনোই আলোর বেগের চেয়ে বেশি বেগে যেতে পারে না। আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে দেখালেন সেটাই। এটা করতে গিয়েই বেরিয়ে এল মহাকর্ষ তরঙ্গ নামে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক তরঙ্গ। মহাকর্ষ বলের সংবাদ বয়ে নিয়ে যায় এই তরঙ্গ, আলোর বেগের সমান গতিতে।

আইনস্টাইন দেখলেন, অনিশ্চয়তা তত্ত্বে এসে ধাক্কা খায় তাঁর এই তত্ত্ব। কোয়ান্টাম কণাগুলো নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে মুহূর্তের মধ্যেই। ব্যাপারটা ভাবায় আইনস্টাইনকে।

১৯৩৫ সাল নাগাদ কোয়ান্টাম মেকানিকস দাঁড়িয়ে যায় শক্ত ভিতের ওপর। ঠিক সে সময় আঘাত হানলেন আইনস্টাইন। এ জন্য তিনি বোরিস পোডলস্কি আর নাথান রোজেনকে সঙ্গে নিয়ে ইপিআর (EPR, আইনস্টাইন, পেডোলস্কি আর রোজেনের নামের আদ্যক্ষর সাজিয়ে এই নাম) নামে একটা বিভ্রমের (Paradox) জন্ম দিলেন। সে ধাঁধা থেকেই জন্ম হলো কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট (Entangelment) নামের এক নতুন তত্ত্বের।

রোজেন আর পোডলস্কিকে নিয়ে ফিজিক্যাল রিভিউতে লিখলেন চার পৃষ্ঠার একটা প্রবন্ধ। তাতে একটা থট এক্সপেরিমেন্ট বা মানস পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করালেন পাঠককে। ধরা যাক, দুটো ইলেকট্রন ছুটছে পরস্পরের দিকে। দুটোর গতি আর ভরবেগ সমান। তারপর একসময় তাদের সংঘর্ষ হবে। পরস্পরকে তারা দেবে জোর ধাক্কা। তারপর দুটো ইলেকট্রন সমান গতিতে পরস্পর থেকে ছুটতে থাকবে বিপরীত দিকে। ধরা যাক, এভাবে ইলেকট্রন দুটি পরস্পর থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে চলে গেল। একজন বৈজ্ঞানিক একটা ইলেকট্রন পরীক্ষা করলেন। নির্ণয় করলেন তার ভরবেগ আর গতিশক্তি।

সেই মুহূর্তে অন্য ইলেকট্রনের ভাগ্যে কী ঘটছে? যখন বিজ্ঞানী ইলেকট্রনের গতিশক্তি বা অবস্থান বের করছেন, সেই মুহূর্তে তিনি অন্য ইলেকট্রনের গতিশক্তিও বের করে ফেলতে পারবেন। কারণ দুটোরই ভর, গতি সমান। তাই একটা দেখেই আরেকটার অবস্থান, ভরবেগ বের করে ফেলা যায়।

অথচ সেই ইলেকট্রনটা তার থেকে এক কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ সময় ব্যয় না করে এক কিলোমিটার দূরের আরেকটা ইলেকট্রনের ধর্ম বের করে ফেলা যাচ্ছে।

ধরা যাক, এভাবে ইলেকট্রন দুটি চলতে চলতে বহুদূরের পথ পাড়ি দিল। দটির মধ্যবর্তী দূরত্ব এখন ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। একটার অবস্থান পৃথিবীতে হলে আরেকটা চলে গেছে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে। আমরা পৃথিবীর ইলেকট্রনের ভরবেগ আর গতিশক্তি ও অন্যান্য ধর্ম পরীক্ষা করে বলে দিতে পারি, অ্যান্ড্রোমিডাতে চলে যাওয়া সেই ইলেকট্রনের এই মুহূর্তের ধর্মও। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আসলে আইনস্টাইন কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। এখানেই আইনস্টাইনের প্রশ্ন। তাহলে কি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার এই আইনে আলোর গতির চেয়েও বেশি গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব। কিছুতেই এটা হতে পারে না। এটাই তুলে ধরেছিলেন তিন বিজ্ঞানী। বলেছিলেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব তাহলে কি ভেঙে ফেলতে চায় বিশেষ আপেক্ষিকতার সেই বিখ্যাত নীতি। আলোর চেয়ে বেশি গতি চলতে পারে না কোনো বস্তু, এমন কী তথ্যও?

আইনস্টানের সুরে সুর মিলিয়েছিলেন শ্রোডিঙ্গারও। শুনিয়েছিলেন তার কাল্পনিক বিড়ালের গল্প, আইনস্টাইনের পক্ষ নিয়ে।

সলভে সম্মেলনে বোর আর তার অনুসারীররা কোপেনহেগেন ব্যাখ্য দিয়ে বলেছিলেন, আসলেই কোয়ান্টাম কণিকারা তথ্য পাচার করতে পারে আলোর চেয়েও বেশি গতিতে। তা যতই অদ্ভুত শোনাক। অতি সম্প্রতি চিনের বিজ্ঞানীরা সত্যি সত্যিই কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট ঘটিয়ে আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে তথ্য পাচার করতে সক্ষম হয়েছেন।

যতই অদ্ভুত শোনাক, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনিশ্চয়তায় ভরা ব্যাপারগুলো পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে বার বার।

সূত্র : দ্য কোয়ান্টাম স্টোরি, জিম ব্যাগট