মঙ্গলে অভিযান

২৮ এপ্রিল প্রয়াত হলেন অ্যাপোলো-১১ মিশনের অন্যতম নভোচারী মাইকেল কলিন্স। ১৯৭৪ সালে নিজের জীবন ও চাঁদে অভিযান নিয়ে লিখেছিলেন ক্যারিয়িং দ্য ফায়ার নামে একটা বই। ২০১৯ সালে চাঁদে অভিযানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বইটিন নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এই সংস্করণের ভূমিকায় নিজের জীবন, মহাকাশ অভিযান নিয়ে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ যেমন করেছেন, তেমনি প্রচ্ছন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে চাঁদের অত কাছে গিয়েও চাঁদকে ছুঁতে না পারার গোপন দুঃখও। সেই ভূমিকাটি রূপান্তর করে প্রকাশ করা হলো বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য।

স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে মাইকেল কলিন্স
সংগৃহীত

আরেকটি দশক পার হলে আমি হয়তো আরও দশ বছর বুড়ো হয়ে যাব। তবে বিষয়টাকে ঠিক ওইভাবে দেখতে চাই না। অবশ্য কিছু খারাপ ঘটনা ঘটেছে। জন ইয়ং ও নীল আর্মস্ট্রংদের মতো পুরোনো বন্ধুরা আর এ জগতে নেই। আমার স্ত্রী প্যাট্রিসিয়া মেরি ফিনেগান কলিন্স মারা যাওয়ার পর আমার জীবনও বদলে গেছে। সাতান্নটি বছর আমরা একসঙ্গে সংসার করেছি। প্রতিদিন খুব করে তার কথা মনে পড়ে। আমার অসাধারণ ও যোগ্য মেয়ে কেট ও অ্যান সে শূন্যতা পূরণে সাহায্য করছে। ফ্লোরিডার এভারগ্লেডসের কাছেই আমি এখনো বসবাস করি আর মাছ ধরি। ‘আশি বছরের বুড়ো’ কথাটা আমি ঘৃণা করে এসেছি। তবে ২০২০ সালে নব্বই বছরে পা দেব ভেবে আমার খারাপ লাগছে না।

মহাশূন্যে উড্ডয়নের ক্ষেত্রে তেমন বড় কিছু ঘটতে দেখছি না। শাটল যুগ পার হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তেমন বড় কোনো খবর তৈরি করতে পারেনি। নভোচারী স্কট কেলি প্রায় এক বছরে স্টেশনে কাটিয়েছেন আর তাঁর যমজ ভাই ভূনিয়ন্ত্রণকক্ষে ছিলেন—এই যা একটা খবর। তবে বাতাসে নতুন আশার রেণু উড়তে ঘটতে দেখা যাচ্ছে। ভালো ভালো পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। পরিকল্পনার মূলে রয়েছে চাঁদে একটি ঘাঁটি নির্মাণ। আর এটি হবে মঙ্গলে নামার পূর্বপ্রস্তুতি। আমার মিশন টু মার্স বইসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় যেমন বলেছি, চাঁদ নয়, বরং এই গ্রহটিই ছিল সব সময় আমার প্রিয় গন্তব্য। আগে আমি মজা করে বলতাম, আমি তো ভুল জায়গায় উড়ে গিয়েছিলাম। আর নাসার নাম পাল্টে করা উচিত নামা। মানে ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড মার্স (স্পেসের বদলে) অ্যাডমিনিস্ট্রেশন!

ছবি আঁকছেণ কলিন্স
সংগৃহীত

কিন্তু নামটা নাসাই। মহাকাশ উড্ডয়নের জগতে ভার্নার ভন ব্রাউনের পর এই প্রথম দুটো নাম খুব পরিচিতি পেল: ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোস। দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা সরকারের চেয়েও দ্রুত ও স্বল্পতর খরচে কাজ করতে পারছেন। ফলে যে প্রজন্ম অ্যাপোলোর কথা জানত না, তারাও মহাকাশ অভিযানের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। মাস্ক একজন বিলিয়নিয়ার। আর বেজোস হলেন বিশ্বের সেরা ধনী মানুষ। নবায়নযোগ্য রকেটের ক্ষেত্রে মাস্কের বিশেষ অবদান আছে। তবে তাঁর মূল লক্ষ্য চাঁদে বসতি স্থাপন। মনুষ্যবিহীন যান ব্লু ড্রাগনের সাহায্যে ২০২০ সালের মধ্যেই তিনি কাজ শুরু করতে ইচ্ছুক। পরবর্তী অভিযানেই ১০০ জন মানুষ রাখার ইচ্ছা তাঁর। (মঙ্গল নিয়ে আমার বইতে আমি ভেবেছিলাম, ৬ জন রাখা বেশি বাস্তবসম্মত হবে) তা, যতজনই নেওয়া হোক, অভিযান ভালো পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে জেনে ভালো লাগছে। করদাতাদের অর্থ থেকে নাসার বার্ষিক প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াও ব্যক্তিগত অর্থ এখানে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। নাসা বলছে, ২০৩০-এর দশকের মধ্যে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর ভালো সম্ভাবনা আছে।

কিন্তু এতটা সময় কেন? চাঁদের পরেই মঙ্গলই সেরা যৌক্তিক গন্তব্য হলেও যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ জটিল। প্রায় সব দিক থেকেই এটি পৃথিবী থেকে আলাদা। তবু মঙ্গলই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো যমজ গ্রহ। অন্তত কাছাকাছি অবস্থানের মধ্যে। তবে এ ক্ষেত্রে ‘কাছে’ কথাটি আপেক্ষিক। পৃথিবীর মতোই মঙ্গল সূর্যের চারদিকে বিশাল এক পথ ঘুরে আসে। আমাদের উপবৃত্তীয় কক্ষপথের কারণে আমরা একে অপরের ৩.৫ কোটি মাইল কাছে যেমন আসি, তেমনি আবার ২২ কোটি মাইল পর্যন্ত দূরেও চলে যাই। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশে ছুটে যাওয়া রকেট বিভিন্ন পথে যেতে পারে। তবে জ্বালানির দিক থেকে ভাবলে সবচেয়ে স্বল্প খরচের পথের নাম হোমান স্থানান্তর। এ পথে একবার যেতে সময় লাগবে ছয় থেকে নয় মাস। তবে আমাদের কক্ষপথের অবস্থানের কারণে হোমান পথে মঙ্গলে পৌঁছা যাত্রী অনুকূল পথে ফিরতি যাত্রা করতে অপেক্ষা করতে হবে অন্তত এক বছর। ফলে পূর্ণ ভ্রমণে সময় লাগবে দুই বছরের বেশি। অ্যাপোলোর আট দিনের তুলনায় সময়টা অনেক বেশি দীর্ঘ। এতে আরও অনেকগুলো নতুন সমস্যাও তৈরি হয়। অভিযানের সময়কাল দীর্ঘ হলে ছোট সমস্যাও বড় হয়ে উঠতে পারে। প্রথমেই একজন নভোচারীর মাথায় যা আসবে তা হলো, ‘কোনো কিছু গড়বড় হয়ে গেলে কী হবে?’ বিষয়টা আসলেই প্রতিকূল। আপনি হয়তো নিরাপদ পৃথিবী থেকে এক বছরের দূরত্বে আছেন। ফলে আপনার শরীর ও যন্ত্রপাতিকে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।

কার রাজপথে আর্মস্ট্রং (বামে) ও অলড্রিনের (ডানে) সঙ্গে মাইকেল কলিন্স (মাঝখানে)
সংগৃহীত

পরিবেশের কথা বললে সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ সমস্যা হলো সূর্য ও দূর মহাকাশ থেকে আসা বিকিরণ। মহাবিশ্বের দূরবর্তী প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে উচ্চগতির কণা। হিরোশিমার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষেরা ভালো করেই জানেন বিকিরণের কারণে শরীরের কী পরিমাণ মারাত্মক ক্ষতি হয়। নভোচারীরা বর্ম দিয়ে এটি থেকে রক্ষা পেলেও মহাকাশযান যদি নিজস্ব মহাকর্ষ তৈরি করতে না পারে, তবে আবার মানিয়ে নিতে হবে ওজনহীনতার সঙ্গেও। যান যদি আবর্তন করে, তবে মহাকর্ষ হবে পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম। হূিপণ্ডের রক্তসংবহনে সমস্যা হতে পারে। কমে যাওয়া মহাকর্ষ চোখে চাপ বাড়াতে পারে। এর কারণে নষ্ট হতে পারে দৃষ্টিশক্তি। তবে মঙ্গলে নেমে পড়লে মহাকর্ষ বেড়ে হবে পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ। এবার যাত্রীরা একটু স্বস্তিবোধ করবেন (হয়তো খুশিতে লাফালাফিও করবেন)। কিন্তু তাঁদের জন্য লাগবে যথেষ্ট অক্সিজেন। বাঁচতে হবে বিকিরণ থেকেও। বায়ুমণ্ডল এত পাতলা যে তা কোনো কাজে আসবে না। তা ছাড়া এটি আবার বিষাক্তও। সব মিলিয়ে বলা যায়, মঙ্গলে নামার তুলনায় অ্যাপোলো ছিল পুতুল খেলা।

আগে যেমন বললাম, মঙ্গলে সরাসরিই যাওয়া যায়। তবে আবার জ্বালানি ও পানির জন্য চাঁদ হয়েও যাওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাঁদ হয়ে যাওয়ার পক্ষে। নাসাকেও এভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে আমি সব সময় সরাসরি যাওয়ার পক্ষে। আমার যুক্তিতে কারিগরি দিকের চেয়ে রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দিক বেশি শক্তিশালী। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির কল্যাণে অ্যাপোলো খুব সহজে বাস্তবায়ন হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এই দশক পার হওয়ার আগেই চাঁদে একজন মানুষ অবতরণ করানো ও নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার অর্জন বগলদাবা করতে এই জাতিকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত।’

‘কী’ ও ‘কখন’ ঠিক হলো। নাসাকে বলা হলো ‘কীভাবে’ অংশটা নিয়ে কাজ করতে। আমাদের সামনে নির্দেশ ছিল স্পষ্ট। সেটা বাস্তবায়নে তারা খুবই সহায়ক ছিল। এটাকে কি মঙ্গলে যাওয়ার জন্য চাঁদে যাত্রাবিরতি বলা যায়? আমার আশঙ্কা হচ্ছে, এসব জটিলতার কারণে বাধা ও বিলম্বই শুধু বাড়বে। বেড়ে যাবে খরচ। সময়সূচিটা হয়ে যাবে এমন: হ্যাঁ, আমরা তো মঙ্গলেই যাচ্ছি, তবে আগে আমাদের চাঁদের ব্যাপারটা ঠিক করতে হবে। কাজটি না হলো সরাসরি, না হলো সরল। মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক সময় দীর্ঘ যাত্রা একেবারে করে ফেললেই খরচ হয় কম। তবে নীল আর্মস্ট্রং মনে করতেন, প্রথমে আমাদের জ্ঞানের শূন্যতা পূরণ করা উচিত। চাঁদের একটি ঘাঁটি সে শূন্যতা পূরণে সহায়ক হতে পারে। নীল আমার চেয়ে ভালো প্রকৌশলী ছিলেন। আমি স্বীকার করছিই, ও হয়তো এ ক্ষেত্রে ঠিকই বলেছিল।

সম্ভবত আমি চাঁদকে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছি বলে আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে আমার মতে জায়গাটা স্বস্তিদায়ক নয়। চাঁদের আঁকাবাঁকা রেখাগুলো এখনো আমার সামান্যই মনে আছে। তবে যানের কালো মখমলের আসনে নিশ্চল বসে আমার জানালার ঠিক পাশের ছোট ছোট বিন্দুগুলো দেখার কথা সহজেই মনে পড়ে। সেই দৃশ্য আজও ফিরে ফিরে আসে আমার চোখে। পৃথিবী। ছোট্ট কিন্তু উজ্জ্বল। নীল আকাশ আর জলরাশি। সাদা মেঘ আর একচিলতে বাদামি ভূমি। চাইলে বুড়ো আঙুল দিয়েই আমি স্মৃতিটা সরিয়ে ফেলতে পারি। তবে আবার ফিরে আসতে এটুকুও সময় নেয় না সেটি। দুই লাখ মাইল দূরের সে দৃশ্য। দেখতে শান্ত ও নীরব। যদিও বাস্তবে এ দুটোর কোনোটিই সেটি নয়। আমাকে এক শব্দে পৃথিবীর পরিচয় দিতে বললে আমি বলব ভঙ্গুর। আরেকটা শব্দ বলতে হলে বলব জনমানবহীন। কারণ, আমি আসলে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তবে তাতে কিছু আসে যায় না। একটি উপস্থিতি আমি ঠিকই অনুভব করেছিলাম। পিঁপড়ার মতো ছোট ছোট প্রাণী হেঁটে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর বুকে। আমি প্রশ্ন না করে পারলাম না, ‘কেন এরা এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে? এদের সংখ্যা কত? কোথায় যাচ্ছে এরা? তারা ঠিকঠাক আছে তো?’

ঢাকায় কলিন্সদের শোভাযাত্র
সংগৃহীত

ফেরার পথে হাতে খুব বেশি কাজ ছিল না। পুরো দৃশ্যজুড়েই ছিল পৃথিবী। ফলে কল্পনার পাখা মেলে ধরলাম। বৈমানিক হওয়ার সুবাদে আমি পাখির ভক্ত। হ্যাঁ, রাজহাঁসের দেখা পেলাম। ওদিকে গাছের সারির পাশে আছে নেকড়ের দল। ডলফিনেরা লাফাচ্ছে। সংখ্যায় ওরা প্রচুর। ইঁদুরও দৌড়াচ্ছে এদিক-সেদিক। গর্তে প্রবেশ করে পালাচ্ছে। তবে কোনো মানুষের চেহারা দেখা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে না কোনো কথাও। কারণ সম্ভবত আমার কানে তাদের প্রচুর কথা শোনা যাচ্ছে। এগুলো মিশন কন্ট্রোলের কণ্ঠ। তারা নীরব হলে আবার শোনা যাচ্ছে সহকর্মী নীল ও বাজের কথা। না, এটাই আমার দেখা সবচেয়ে উত্তাল জিনিস। হয়তো এসব প্রাণীকে একত্র করা যাবে। আর তাদের মুখপাত্র গেইয়া হয়তো আমার সঙ্গে কথা বলবে। আমি বলব, ‘কেমন চলছে? কী হচ্ছে?’ কিন্তু গেইয়া নিরুত্তর। আমিই তার হয়ে উত্তর দেব তাহলে।

গেইয়ার অনেক বয়স হয়েছে। রেনে দুবস (১৯০১-৮২ খ্রি.) এই ধারণার নাম দিয়েছেন ‘পৃথিবীর ধর্মতত্ত্ব।’ লোরেন এইজলি (১৯০৭-৭৭ খ্রি.) লিখেছেন এক অজড় পৃথিবীর কথা, যে নিজেকে মেরামত করতে পারে। তবে গেইয়া নামটি বাছাই করেছেন জীববিদ জেমস লাভলক। এটি দ্বারা তিনি পৃথিবীর সব প্রাণীর সমষ্টি বোঝাতে চেয়েছেন। আমার মনে হয় তিনি ই. কোলাই (E. coli) ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে হাতি এবং মানুষ পর্যন্ত সবকিছু বোঝাতে চেয়েছেন। বাস্তবে হয়তো গেইয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমি ঠিকই কথা বলি তাঁর সঙ্গে।

আমরা চন্দ্রযানের অভিযাত্রীরা ৩০০ কোটি মর্ত্যবাসীর দিকে ফিরে তাকাই। প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে সংখ্যাটা এখন প্রায় ৮০০ কোটি, যা ক্রমে বাড়ছেই। পূর্বাভাস বলছে, এ বছরের মাঝামাঝিতে সেটা দাঁড়াবে এক হাজার কোটি বা তারও বেশি। এই বৃদ্ধি নিয়ে অনেকে চিন্তিত। তবে আমার মতে খুব বেশি মানুষ এটা নিয়ে ভাবছে না। ভাবার মতো আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে তাদের কাছে। বইটির ২০০৯ সংস্করণের ভূমিকার শেষের দিকে আমি পরিস্থিতিটা সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, ‘বৃদ্ধির বদলে উন্নতি সাধনের জন্য আমাদের নতুন একটি অর্থনৈতিক নমুনা প্রয়োজন।’ এই কথার ওপর বিশ্বাস এখন আমার আরও বেড়েছে। আমার বিশ্বাস, গেইয়া ব্যথায় চিত্কার করছে। আমাদের সম্পদের বেড়ে যাওয়া চাপটি এখন কমছে। তবে তাতেও ক্ষতি একটি হচ্ছেই। বায়ুমণ্ডলে বেড়েছে কার্বন ডাই-অক্সাউড। তাপমাত্রা বেড়েছে। সমুদ্রের স্তর উঁচু হয়েছে। সমুদ্রের ক্ষতিকর প্রভাব বেড়ে গেছে। এর উষ্ণতা ও অম্লত্ব বেড়েছে। বনজঙ্গলের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড দরকার তা ঠিক আছে, কিন্তু আমার প্রিয় ফ্লোরিডা কিজ-এর চারপাশের আমার প্রিয় জলরাশির প্রবাল মারা যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। সাদা হয়ে তারা মারা যাচ্ছে ওপরের কারণগুলোর প্রভাবে। একই প্রভাব পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ওপরও।

প্রতিদিনই প্রাণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার জন্য গেইয়া আমাকে একা ফেলে যায়। একা থাকার অর্থ হলো নিত্যদিনের সব ঝামেলা, বাজার করা, রান্নাবান্না ইত্যাদি। আছে আরেকটি জিনিসও। একসময় নভোচারী হওয়ার বিশেষ জিনিসটি। যদিও সেটা অনেক আগের কথা, যার স্থায়িত্বও ছিল মাত্র ছয় বছর। কিন্তু তাতে শুভাকাঙ্ক্ষীরা এতটুকু দমেন না। জিজ্ঞেস করেন, ‘ওপরে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা ঠিক কেমন ছিল?’ খোদা, এমন জটিল বিষয়টা কীভাবে সংক্ষেপে বলি? প্রশ্নকর্তার বয়সটাও আবার মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত আমি বলে দিই, ‘দারুণ’। ইদানীং অবশ্য বলি, ‘অসাধারণ’।

মা-বাবারা মাঝেমধ্যেই তাঁদের সন্তানদের জন্য নির্দেশনা চান। অথবা বাচ্চারা নিজেরাই জিজ্ঞেস করে, ‘নভোচারী হতে হলে কী করব?’ সময় আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে। ফলে এর ভালো উত্তর বলতে আমাকে আগের চেয়ে বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমি মহাকাশ অভিযানে উত্সাহী হই বাক রজার্সের কারণে। সে সময় অন্য কোনো নভোচারীই ছিল না। ছিল না নাসাও। এমন অদ্ভুত পরিবেশে চাকরি পেতে কোন কোন দক্ষতা দরকার? অনেক ‘বিশেষজ্ঞই’ উল্টাপাল্টা কিছু বুদ্ধি দিয়েছিলেন। কিছু ডুবুরি গভীরতার স্বাদ পেয়ে গিয়েছিলেন। পৃষ্ঠে ফিরে আসতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েছিলেন। স্কুবা ডাইভিংয়ের কোনো প্রবীণ ডুবুরিকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই তিনি পৃথিবীতে ফিরতে রাজি কিনা। পৃথিবীর ওপরের দিকে তো বায়ু পাতলা। সে কথা একজন পাহাড় আরোহণকারীকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। ষাঁড়ের খেলা কত ভয়ংকর! কিন্তু একজন খেলোয়াড়কে বলে দেখুন! আমার ব্যাপারটাও তাই।

প্রায় এ সময়ে চাকরির একটি পদের চিঠি দেখছিলেন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার। তিনি চিঠির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হলেন। প্রার্থীদের বাছাই করতে হবে স্বীকৃত কোনো পরীক্ষামূলক পাইলট স্কুল থেকে পাস করা অল্পসংখ্যক ছাত্রদের থেকে। এতে নিশ্চয়ই বাছাই কমিটির কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সর্বশেষ বাছাইয়ে আঠারো হাজারের বেশি প্রার্থী থেকে বারোজন নতুন লোক নেওয়া হয়। আমাদের দেশের প্রথম নভোচারী দলকে বলা হয় মার্কারি সেভেন। আমার ধারণা, তাদের প্রায় ১০০-এর মতো যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। ১৯৬৩ সালে আমরা ১৪ জন নির্বাচিত হই। তখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক বৈমানিক নেওয়ার নিয়মটা ছিল।

তাহলে নির্বাচিত হওয়ার কৌশলটা কী? বাচ্চাদের হয়তো বলতে চাই, ‘দেখো, হাজার হাজার মেধার সঙ্গে তোমাকে লড়তে হবে। অন্য কোনো পেশা খোঁজো।’ তবে আমি তা বলি না। ভেতরে ভেতরে আমি বলতে চাই, ‘ফোন থেকে আলাদা হও। মুভি ও টিভি থেকে দূরে থাকো। পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ও বই পড়ো।’ আমি নিজেই তাই করি। তবে আমি আমার বক্র চিন্তা তরুণদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার দোষে অভিযুক্ত হতে চাই না।

বেশির ভাগ বাচ্চার সঙ্গে কথা বলতে আনন্দ পাই আমি। বিশেষ করে যখন মাথার ওপর পাখার তীব্র শব্দ থাকে না। তবে হেলিকপ্টার বাগড়া দিলে, আমাকে ছবিতে স্বাক্ষর করতে ও ‘হ্যারি, উঁচু লক্ষ্য স্থির করো,’ বলতে বললে আমি বিরক্ত হই। আমি তো হ্যারিকে চিনিই না। হয়তো ওকে মাঝামাঝি কিছুতে লক্ষ্য স্থির করা উচিত। যা-ই হোক, আমি শুধুই যা করি, তা হলো বিড়বিড় করে কঠোর পরিশ্রম করা নিয়ে কিছু সাদামাটা কথা বলে দিই। আর লিখে দিই, ‘শুভকামনা’। তবে আমি মাঝেমধ্যেই প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারকে তাঁর প্রাপ্য ধন্যবাদ দিই। আমি কি আঠারো হাজারের একজন হতে পারতাম? একদম না।

কিন্তু কী করে তা জানি? আমার যোগ্যতাগুলো স্পষ্ট করে লেখা ছিল। এর কিছু খুব ভালো। তবে সব মিলিয়ে খুব ভালো নয়। চাকরির কারণে বাবা বারবার স্থান পরিবর্তন করার সুবাদে আমার প্রথম আট গ্রেড পড়তে ছয়টি স্কুলে যেতে হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই একই বিষয় দুবার আমার সামনে আসত। কোনো বিষয় আবার একেবারেই বাদ পড়ত (মানে সংগীত)। তবে এতে আমার কিছু আসে-যায়নি। এখন একে আমার কাছে একটি দুর্লভ দারুণ সুযোগ মনে হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন শ্রেণি, এলাকা ও সংস্কৃতির বহু বন্ধু তৈরি হয়েছিল আমার। বৈচিত্র্য পেয়েছিলাম। এটাই তো এখনকার কলেজগুলোর ভাবনা জুড়ে আছে। হাইস্কুলে পা ফেলার আগেই এটা আমি প্রচুর পরিমাণে পেয়েছি।

আবারও ভাগ্য আমায় সহায়তা করেছে। যে বয়সে বন্ধুত্ব গাঢ় হয় ও প্রতিযোগিতার চাপ বাড়ে, সে বয়সে আমি হাইস্কুল পার করেছি একটি দারুণ, হয়তোবা অসাধারণ প্রেপ স্কুলে। এটি হলো ওয়াশিংটন, ডিসির সেন্ট অ্যালবানস। ক্লাসগুলো ছিল ছোট ছোট। আমার মোটা মাথায় অভিজ্ঞ, যত্নশীল ও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ শিক্ষকেরা ইংরেজি, ল্যাটিন, বিজ্ঞান ও গণিতের জ্ঞান ঢুকিয়ে দিতে নিয়োজিত ছিলেন। অলস হিসেবে আমি বিশেষ খ্যাতি কুড়িয়েছিলাম। আর আজ আমি সাহিত্য খুঁজে বেড়াই। আর বলি অমনোযোগের ব্যাধি আছে আমার। আমার পরিষ্কার মনে আছে। ক্লাসের দরজা খুলত। এরপর শিক্ষকের কথা বলা শুরু। জানালা দিয়ে সূর্যের আলোর প্রবেশ। ধীরে ধীরে আমার দেহখানা ওপরে উঠতে শুরু করে ও বের হয়ে পড়ে। কাছের একটি গাছে থিতু হয়। নিচের দৃশ্য থেকে স্বস্তি পেয়ে হাঁপ ছাড়ে আর ভাবে আটকে পড়া বেচারাদের কথা।

অজুহাতগুলো দেখে কিছু মনে করবেন না। আমি সাধারণ একজন ছাত্র ছিলাম। পড়াশোনার চেয়ে যার খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ বেশি কাজ করত। কুস্তি খেলা দলের নেতা ছিলাম আমি। তবে তাতেও আমি বেশি যোগ্য ছিলাম না। কারণ, আমি আবার গোপনে ধূমপান করতাম। কেমন গাধা দেখুন! তারপর গেলাম ওয়েস্ট পয়েন্টে। সেরা তিনের মধ্যে থেকে পাস করলাম। তবে আমার পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। ওয়েস্ট পয়েন্টে আমার স্বদেশি নভোচারী বোরম্যান, অলড্রিন ও স্কট আমার চেয়ে অনেক ভালো নম্বর তুলেছিল। আমি আবারও অজুহাত দিচ্ছি। তবে সরল ভাষায় বললে আসলে পড়াশোনায় আমার আগ্রহ ছিলই না। বিজ্ঞানের মধ্যে তাপগতিবিদ্যা ছিল সবচেয়ে প্রিয়। যদিও বুঝতাম সামান্যই। এনট্রপি ও এনথালপি খুব দারুণ লাগত। কলার মধ্যে ভালো লাগত চীনের ইতিহাস। বেপরোয়া, বিচিত্র, বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমী রাজাদের ওয়াশিংটন ও জেফারসনদের চেয়ে আকর্ষণীয় লাগত। ওয়াশিংটনদের মনে হতো অবনত ও প্রচলিত ধারার মানুষ। ওয়েস্ট পয়েন্টে আমাদের বলা হতো, ‘যখন এগিয়ে চলা কঠিন হয়ে যায়, তখন কঠিনেরাই এগিয়ে যায়।’ আমার এগিয়ে চলা কঠিন হয়ে গেলে লিটারেরি গিল্ড-এ যোগ দিলাম। তাদের মাসিক বই কিনতাম। সাধারণত সেটা হতো কোনো উপন্যাস। বন্ধুরা ব্যাবকলনের সমীকরণ নিয়ে ঘাম ঝরাত। আর ভাবত আমি একটা পাগল। তবে এটা ছিল আমার বিদ্রোহের খুব ছোট নমুনা। ওয়েস্ট পয়েন্টের পরে গেলাম এয়ার ফোর্স ফ্লায়িং স্কুলে। এখানে শিক্ষকেরা তুলনায় বিশ্বাসী ছিলেন, যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ছোট অংশ। উড্ডয়ন ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভুল করলেই মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হবে। ভাগ্য ভালো যে টি-৬ প্রপেলারের বৃদ্ধ প্রশিক্ষক আমাকে পছন্দ করেছিলেন। আমিও উড়তে ভালোবাসতাম। ফলে সবকিছু অনুকূল হয়ে গেল। জেট ও যন্ত্র উড্ডয়ন ছিল আরও জটিল।

এরপর গেলাম এফ-৮৬ স্যাবরিজেটে, যার অবস্থান একদম শীর্ষে ও ৭২তম ফাইটার স্কোয়াড্রনে। এটাই আমার ক্যালিফোর্নিয়া ও ফ্রান্সের চার বছরের বাড়ি। এখানেই প্রথম কোনো বাস্তব বিপদের মুখোমুখি হলাম। আমাকে আমার জ্বলন্ত এফ-৮৬ থেকে বের হতে হয়েছিল। ইতিবাচক দিকের মধ্যে ছিল আকাশ থেকে বোমা নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় দুটি পুরস্কারের একটি পাওয়া। এখানে আমাকে ইউরোপে নিযুক্ত সেরা আমেরিকান বৈমানিক যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছিল।

এরপরের ঘটনা খারাপ দিকে মোড় নিল। রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তার স্কুলে বোকার মতো কিছুদিন কাটানো। তারপর এল সুদিন। এডওয়ার্ডস বিমান ঘাঁটির পরীক্ষামূলক বিমান স্কুল। পরে সেখানেই করলাম পোস্টগ্র্যাজুয়েশন কোর্স। আমাকে পরীক্ষামূলক বৈমানিক ঘোষণা করা হলো। আমার প্রিয় কাজটাই দেওয়া হলো আমাকে। এডওয়ার্ড টেস্ট অপারেশনের উড্ডয়ন শাখায়। দক্ষ প্রশিক্ষকদের একটি অভিজাত দলে যোগ দিলাম। এখান থেকেই তৈরি হন মার্কারি নভোচারী ডিক স্লেইটন। পরে ইনিই নাসায় আমার বস হন। আমার মতে, প্রাথমিক সাতজনের মধ্যে ইনিই ছিলেন সেরা। আমি ভালো সঙ্গ পাচ্ছিলাম। ছিলাম জিম ম্যাকডিভিট (জেমিনি-৪, অ্যাপোলো-৯) ও জো এংগেলদের (এক্স-১৫, শাটল) সঙ্গে। আমার উঠে আসা এভাবেই। বর্তমানে নাসায় যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের যোগ্যতা এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি। অতএব, জেনারেল আইজেনহাওয়ারকে ধন্যবাদ।

নতুন নভোচারী বাছাই ও তাঁদের মঙ্গলে পাঠানোর কাজটা অনেক সময়সাপেক্ষ। তবে এই পদক্ষেপ দিয়েই যাত্রার শুরু। একজন নভোচারীর ক্যারিয়ার বিশ বছর লম্বা হতে পারে। ফলে বারোজনের নতুন দল প্রথম যাত্রায় যেতে পারার সম্ভাবনা খুবই সামান্য। নতুন লোক থেকে অভিযাত্রী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এমনও হতে পারে আমার সঙ্গে সাক্ষাত্ ঘটা কিছু এমআইটির শিক্ষার্থী এ সুযোগ পেয়ে যাবে। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি আমার সবচেয়ে প্রিয়। এর কারণ হয়তো সেখানে আমার আসা-যাওয়া। ১৯৬০-এর দশকে অ্যাপোলোর নির্দেশনা পদ্ধতির অভ্যন্তরীণ রহস্য বুঝতে সেখানে যেতাম আমি। তারাই সেটি তৈরি করেছিল। এই অদ্ভুত বৃদ্ধ লোকটাকে তারা আজও লেকচার দিতে ডাকে। অনেকটা হেঁড়ে গলায় গান গাওয়া লোককে বড় মঞ্চে গান গাইতে ডেকে নেওয়ার মতো।

ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাদের কিছুটা হতাশ করে দিই। সাধারণত শুরু করি কারিগরি বিষয়ের বর্তমানে প্রচলিত ভাবনা দিয়ে। STEM-এ মনোযোগ দাও। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত। এতে তারা জানবে ও বিশ্বাস করতে পারবে। আমি বলি, না। STEM দিয়ে হয়তো শুরু হতে পারে। তবে এটা কোনোমতেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা নয়। বহু অদক্ষ প্রকৌশলীর সঙ্গে কাজ করার কারণেই হয়তো আমি এটা বলি। আমি STEM-কে STEEM বানাতে চাই। নতুন করে যোগ করতে চাই ইংরেজি। বাজ অলড্রিনসহ অন্যরা কলা যোগ করার পক্ষে। তার মানে STEAM। তবে আমি তাতি রাজি নই। আমি একজন জলরং চিত্রকর। কিন্তু সেটা ছোট বিষয়। আমি কোনো খারাপ ছবি আঁকলে সেটা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যর্থতা। কিন্তু কেউ যদি জনসমক্ষে ইংরেজিতে তালগোল পাকান, সেটা একেবারেই আলাদা ব্যাপার। একজন প্রকৌশলীকে হরহামেশা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে কথা বলতে হয়। সেটা হোক মৌখিক বা লিখিত। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কঠিন পরিভাষার ভিড়ে মূল কথাটা আর পরিষ্কারভাবে বলা হয় না।

তবে ইংরেজি পড়াটা বিরক্তিকর হতে পারে। কবিতা কাজে লাগিয়ে আমি সে সমস্যা দূর করার চেষ্টা করি। নিয়মের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ো না। দেখো, অন্যরা কীভাবে আমাদের সুন্দর ভাষাটিকে ব্যবহার করেছে। ভালো কবিতা বিরক্তিকর হয় না। সেরা কবিতাগুলো তো মনে রাখার মতো। আমি সাধারণত জন মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট থেকে উচ্চ স্বরে মুখস্থই আবৃত্তি করতে শুরু করি। ছাত্ররা হয়তো ভাবে, ‘এই লোকটাকে ঢুকতে দিয়েছে কে?’ তবে তারা খুব সদয়। আমাকে ডাকেন আবারও। এ জন্য উঁচু মেধা ও পরিশ্রমী তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পেরে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি।

পরবর্তী রকেট যাত্রার জন্য প্রস্তুত হতে যেমন উত্তেজনা কাজ করে, সাবেক নভোচারী হয়ে থাকতে তেমন উত্তেজনা নেই। তবে আমার নাসা-পরবর্তী বছরগুলো সুখের। অবসরের বিশের বেশি বছর আনন্দ ও প্রাপ্তিময়। আমার পরিবারের সবার ভালোভাবে বেড়ে ওঠায় সবচেয়ে বেশি স্বস্তি। তবে এর বাইরেও আছে মাছ ধরা, পড়া, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, আঁকাআঁকি এবং শরীরচর্চা, শরীরচর্চা, শরীরচর্চা। আমি ধনী মানুষ নই। তবে সবকিছুকে আয়েশি বা এমনকি বলা যায় বিলাসী পরিবেশে উপভোগ করার মতো প্রচুর উপকরণ আমার আছে...ভাগ্যবান, ভাগ্যবান, ভাগ্যবান।

সূত্র: ক্যারিয়িং দ্য ফায়ার, মাইকেল কলিন্স, চন্দ্রজয়ের ৫০ বছর উপলক্ষে নতুন সংস্করণ, এফএসজি, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ২০২০ আবুল বাসারের সম্পাদনায় প্রথমা থেকে প্রকাশিত চন্দ্রজয়ের ৫০ বছর বইয়ে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল