মঙ্গলে তৈরি হলো অক্সিজেন

এবার মঙ্গলের বুকে প্রথমবার অক্সিজেন তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা।

মঙ্গলের বুকে একের পর এক মাইলফলক অর্জন করছে পারসিভারেন্স। তৈরি হচ্ছে ইতিহাস। গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলে অক্সিজেন উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে নাসা। ফলে পৃথিবীর বাইরে প্রথম কোন গ্রহে অক্সিজেন উৎপাদনের ইতিহাস গড়ল মানুষ।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে পারসিভারেন্স। বিজ্ঞানীরা পারসিভারেন্সের সাথে মক্সি (দ্য মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্ট) নামে একটি যন্ত্র পাঠান মঙ্গলে। পারসিভারেন্সের সামনের দিকে ডান পাশে ১৭.১ কিলোগ্রাম ভরের এই যন্ত্রটি লাগানো ছিল। উদ্দেশ্য মঙ্গলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে অক্সিজেন উৎপাদন করা। সেই সম্ভাবনা এবার বাস্তবে পরিণত হল।

মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে শতকরা ৯৬ ভাগ কার্বন-ডাই-অক্সাইড। অক্সিজেন তৈরি করতে এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডে একটি কার্বন ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। মক্সি (MOXIE) সেই CO2 থেকে অক্সিজেন রেখে বাকি কার্বন মনোক্সাইড মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়।

এভাবে যন্ত্রটি গত ২০ এপ্রিল প্রথমবার ৫ গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করেছে। এই পরিমাণ অক্সিজেন দিয়ে একজন নভোচারী মঙ্গলের বুকে প্রায় ১০ মিনিট শ্বাস নিতে পারবেন। তবে মক্সি কিন্তু এই হারে অক্সিজেন উৎপাদন করবে না। এটা ছিল প্রথম ধাপ। নাসার গবেষকেরা জানান, মক্সিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে ঘণ্টায় ১০ গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করা সম্ভব হবে।

প্রশ্ন হল, মঙ্গলের বুকে অক্সিজেন উৎপাদন করা গুরুত্বপূর্ণ কেন? এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, মানুষ ভবিষ্যতে মঙ্গলে পৌঁছুলে এই অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারবে। তখন পৃথিবী থেকে অতিরিক্তি অক্সিজেন টেনে নিয়ে যাওয়ার দরকার হবে না।

দ্বিতীয়ত, রকেটের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা যাবে এই অক্সিজেন। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে যে প্রযুক্তি আছে, সেগুলো ব্যবহার করে শুধু মঙ্গলে পৌঁছুনো যাবে। সেখান থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা যাবে না। সুতারাং, ভবিষ্যতে এই অক্সিজেন জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে পৃথিবীতে ফিরে আসা সম্ভব হবে।

তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে মঙ্গল থেকে জ্বালানী নিয়ে আরও দূরের কোনো গ্রহে যাওয়াও সম্ভব হবে। এসব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, মঙ্গলে অক্সিজেন উৎপাদন নতুন একটি মাইলফলক।

এবার দেখা যাক, মঙ্গলে অক্সিজেন উৎপাদন না হলে কী সমস্যা হত। এই ব্যাপারে নাসার জেট প্রোপালেশনের বিজ্ঞানী মাইকেল হেক্ট কিছুটা ধারণা দিয়েছেন। একটি রকেটের জ্বালানীর জন্য রকেটের ওজনের চেয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকতে হয়। সেই হিসাবে ভবিষ্যতে যদি চারজন নভোচারী মঙ্গলে যেতে চায়, তাহলে তাঁদের মোট ১৫ হাজার পাউন্ড (৭ মেট্রিক টন) জ্বালানী এবং ৫৫ হাজার পাউন্ড (২৫ মেট্রিক টন) অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও মঙ্গলে থাকাকালেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে।

সেক্ষেত্রে চারজন নভোচারী এক বছরের জন্য মঙ্গলে অবস্থান করলে তাঁদের এক মেট্রিক টন অক্সিজেন দরকার হবে। তাছাড়া পৃথিবী থেকে ২৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন নিয়ে মঙ্গলে যাওয়াটাও বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল। সুতারং মক্সিকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করে এক মেট্রিক টন বা তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব হলে ওই পরিমাণ অক্সিজেন পৃথিবী থেকে আর টেনে নিতে হবে না। এতে মঙ্গলে যাওয়ার খরচও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

মঙ্গলের পৃষ্ঠে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন উৎপাদন করতে প্রায় ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (প্রায় ১৪৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ মক্সি যন্ত্রটির এই পরিমাণ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। এই যন্ত্রে থ্রিডি প্রিন্টেট নিকেলের সংকর ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে উচ্চ তাপমাত্রায় মক্সির কোন সমস্যা হয় না। যন্ত্রটি ডিজাইন করা হয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষণাগারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

সূত্র: নাসা